তথ্য ফাঁসের অভিযোগ মিস্ত্রির বিরুদ্ধে

টাটা-মিস্ত্রি সংঘাতের আবহেই বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসল টাটা সন্স ও টাটা কলসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর পরিচালন পর্ষদ, যেগুলিতে গরহাজির ছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি ও মুম্বই শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

টাটা-মিস্ত্রি সংঘাতের আবহেই বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসল টাটা সন্স ও টাটা কলসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর পরিচালন পর্ষদ, যেগুলিতে গরহাজির ছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি। তবে মিস্ত্রিকে ডিরেক্টর হিসেবে পর্ষদ থেকে সরাতে টিসিএস শেয়ারহোল্ডারদের বিশেষ সাধারণ সভা বা ইজিএম ডাকা হয়েছে আগামী ১৩ ডিসেম্বর। পাশাপাশি, এই বোর্ডরুম যুদ্ধে নতুন মাত্রা জুড়েছেন টাটা গোষ্ঠীর জনসংযোগ সংস্থা রিডিফিউশন ওয়াই অ্যান্ড আর-এর কর্ণধার অরুণ নন্দ।

Advertisement

সাইরাস মিস্ত্রির বিরুদ্ধে এ দিন নিজের সুবিধার জন্য বেছে বেছে রিডিফিউশন সম্পর্কে কিছু তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ এনেছেন নন্দ। ওই সব অভিযোগ জানিয়ে মিস্ত্রিকে খোলা চিঠি দিয়েছেন তিনি, যা বেশ কিছু সংবাদপত্রে এ দিন প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞাপন হিসেবে। সরাসরি মিস্ত্রিকে দোষারোপ করে নন্দ প্রশ্ন তুলেছেন, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁর সংস্থাকে টাটাদের জনসংযোগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেননি মিস্ত্রি। আর, সে ক্ষেত্রে এখন অপ্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য ফাঁস করে রিডিফিউশনের ভাবমূর্তিকে নন্দ কিছুতেই নষ্ট করতে দেবেন না।

প্রসঙ্গত, মিস্ত্রি চার বছর চেয়ারম্যান থাকার সময়ে বিপুল অপচয় করেছেন বলে টাটারা যে-অভিযোগ এনেছেন, তা কাটাতে গিয়েই টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে ফিরে আসা রতন টাটাকে কটাক্ষ করেছেন মিস্ত্রি। সেই সূত্র ধরেই উঠে এসেছে রিডিফিউশনের নাম। মিস্ত্রির অভিযোগ, এত দিন চেয়ারম্যান এমেরিটাস হিসেবে রতন টাটার অফিসের বিপুল খরচের বহরের পুরোটাই ছিল টাটা সন্সের ঘাড়ে। তার মধ্যে একটি বড় অংশ খরচ করা হয়েছে জনসংযোগ সংস্থা রিডিফিউশনের জন্য। কর্পোরেট লবিস্ট নীরা রাডিয়া টু-জি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার জেরে তাঁর সংস্থা বৈষ্ণবী কমিউনিকেশন্স-এর জায়গায় টাটা গোষ্ঠীর জনসংযোগের দায়িত্বে অরুণ নন্দের রিডিফিউশন এডেলম্যান-কে নিয়ে আসা হয় ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে। সে জন্য প্রচুর খরচ করেছেন রতন টাটা, অভিযোগ মিস্ত্রির। মিস্ত্রির বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘নন্দকে জনসংযোগে সহায়তার জন্য আনতে বছরে ৬০ কোটি টাকা খরচের পথে হাঁটেন রতন টাটা। আগের সংস্থার জন্য খরচের বহর ছিল ৪০ কোটি টাকা।’’ এই সব খরচের দায়ই তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পরে ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল মিস্ত্রির।

Advertisement

এ দিনের চিঠিতে নন্দের পাল্টা দাবি, তিন বছর বাদেই রিডিফিউশনকে ছেঁটে ফেলার সুযোগ ছিল টাটা সন্সের তদানীন্তন চেয়ারম্যান হিসেবে মিস্ত্রির সামনে। উল্টে মিস্ত্রিই সংস্থাকে বহাল রাখেন। এবং চলতি বছরে চুক্তি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংস্থার কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে দেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে মিস্ত্রির প্রতি তাঁর আর্জি, ‘‘সংবাদমাধ্যম ও জনসাধারণের সামনে নিজের পক্ষে ঘুঁটি সাজাতে আমাদের সংস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, এমন তথ্য প্রকাশ করবেন না।’’

এ দিকে, মিস্ত্রি বিদায়ের পরে এই প্রথম বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিল টাটা সন্স এবং টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর পরিচালন পর্ষদ। পর্ষদের সদস্য হিসেবে মিস্ত্রি বৈঠকে হাজির থাকবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কোনও বৈঠকেই যাননি।

বম্বে হাউসে টাটা সন্সের বৈঠক সেরে বেরোনোর সময়ে অন্যতম ডিরেক্টর বিজয় সিংহ বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি ও আগামী ছ’মাসের পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে এই বৈঠক ছিল ‘রুটিন মাফিক’। মিস্ত্রিকে সরাতে তারা এখনই ইজিএম ডাকছে না বলেও জানিয়েছে।

তবে টিসিএস ১৩ ডিসেম্বর ইজিএম ডেকেছে বলে স্টক এক্সচেঞ্চকে দাখিল করা বিবৃতিতে জানিয়েছে। মিস্ত্রি টিসিএসের বৈঠকে না-গেলেও হাজির ছিলেন সংস্থার নতুন চেয়ারম্যান ইশাত হুসেন। তিনিই ইজিএম ডাকার সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে গত ২৪ অক্টোবর সরে যেতে বাধ্য হলেও মিস্ত্রি এখনও টাটা মোটরস, টাটা পাওয়ার, টাটা স্টিল, ইন্ডিয়ান হোটেলস, টাটা কেমিক্যালসের মতো সংস্থার চেয়ারম্যান রয়েছেন। আসলে পর্ষদেই তিনি রয়েছেন ডিরেক্টর হিসেবে। যে-কারণে সংস্থাগুলিকে শেয়ারহোল্ডারদের ইজিএম ডাকতে বলেছে টাটা সন্স। কারণ, শেয়ারহোল্ডারদের সায় ছাড়া তাঁকে সরানো সম্ভব নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন