মিস্ত্রিকে সমর্থনের প্রশ্ন এড়াল টাটা মোটরস

সাইরাস মিস্ত্রির পাশে দাঁড়ানো নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করলেন না টাটা মোটরসের স্বাধীন ডিরেক্টররা। সোমবারই ছিল সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। সেখানেই দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বৈঠক শেষে তাঁরা সমর্থন করেছেন ‘সংস্থা কর্তৃপক্ষের’ সব সিদ্ধান্তকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

সাইরাস মিস্ত্রির পাশে দাঁড়ানো নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করলেন না টাটা মোটরসের স্বাধীন ডিরেক্টররা।

Advertisement

সোমবারই ছিল সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। সেখানেই দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বৈঠক শেষে তাঁরা সমর্থন করেছেন ‘সংস্থা কর্তৃপক্ষের’ সব সিদ্ধান্তকে। সংস্থার কাজকর্ম, পরিচালনার কৌশল ও ব্যবসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে সমর্থনে কোনও দ্বিমত নেই বলেই দাবি করেছেন স্বাধীন ডিরেক্টররা। তবে এত দিন টাটা মোটরস যেহেতু পরিচালিত হয়েছে সাইরাস মিস্ত্রিরই নেতৃত্বে, তাই বিশেষজ্ঞদের ইঙ্গিত, তারা কার্যত মিস্ত্রির পাশেই রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরতে বাধ্য হলেও একাধিক শাখা সংস্থায় এখনও চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রয়েছেন মিস্ত্রি, যার মধ্যে রয়েছে টাটা মোটরস, টাটা কেমিক্যাল্‌স, ইন্ডিয়ান হোটেলস। এই সমস্ত সংস্থায় নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে এককাট্টা মিস্ত্রিও। এই টানাপড়েনের মধ্যেই ইন্ডিয়ান হোটেলস ও টাটা কেমিক্যালসের স্বাধীন ডিরেক্টরদের সমর্থন পেয়েছেন মিস্ত্রি। তবে সোমবার টাটা মোটরস পর্ষদের বিবৃতিতে মিস্ত্রির প্রতি সমর্থনের প্রশ্নে সরাসরি মন্তব্য করা হয়নি।

Advertisement

রবিবারই টাটাদের বিরুদ্ধে ফের বিবৃতি দিয়ে তোপ দাগেন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়া সাইরাস মিস্ত্রি। তার জবাবে মিস্ত্রিতে গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার মাথা থেকে সরাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে তারা তৈরি বলে জানিয়ে দেয় টাটা সন্সও। টাটা বনাম মিস্ত্রির এই বাগ্‌যুদ্ধের আবহেই সোমবার আর্থিক ফলাফল ঘোষণা করতে ও সংস্থা পরিচালনার রাশ নিয়ে মতামত জানাতে বৈঠকে বসেছিল টাটা মোটরস পরিচালন পর্ষদ। সোমবার বাদানুবাদও শুরু হয়ে যায় টাটা মোটরসের ছ’জন স্বাধীন ডিরেক্টরের কারও কারও মধ্যে। স্বাধীন ডিরেক্টরদের মধ্যে একজনই মিস্ত্রির সমর্থনে প্রস্তাব দাখিল করেন। কিন্তু বৈঠক শেষে জারি হওয়া বিবৃতিতে সমর্থন জানানো হয়েছে ‘সংস্থা কর্তৃপক্ষকে’।

সেখানেই স্বাধীন ডিরেক্টরদের তরফে জানানো হয়েছে: ‘‘সংস্থার কাজকর্ম, পরিচালনার কৌশল ও ব্যবসা সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত পর্ষদ সর্বসম্মত ভাবেই নিয়েছে। সার্বিক ভাবে পর্ষদের পথনির্দেশ মেনেই পরিচালিত হবে টাটা মোটরস। আর, এ ক্ষেত্রে টাটা মোটরস ও তার বিভিন্ন শাখা সংস্থার কর্তৃপক্ষের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন স্বাধীন ডিরেক্টররা।

টাটা মোটরস পরিচালন পর্ষদে রয়েছেন মোট ১১ জন সদস্য। স্বাধীন ডিরেক্টররা হলেন ওয়াদিয়া গোষ্ঠীর প্রধান নুসলি ওয়াদিয়া, সিএসআইআরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল রঘুনাথ এস মাশেলকর, ডিসিবি ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নাসির মুঞ্জি, আইশার গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ ভার্গব, প্রাক্তন আমলা বীণেশ কে জয়রথ ও কোটাক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও ফাল্গুনী নায়ার।

ইতিমধ্যেই ইন্ডিয়ান হোটেলস এবং টাটা কেমিক্যালসের স্বাধীন ডিরেক্টররা পাশে দাঁড়িয়েছেন সাইরাস মিস্ত্রির। টাটা কেমিক্যালস ও ইন্ডিয়ান হোটেলসের স্বাধীন ডিরেক্টরদের মধ্যেও রয়েছেন নুসলি ওয়াদিয়া। এর পরেই ওয়াদিয়া এবং মিস্ত্রিকে বিভিন্ন সংস্থার পরিচালন পর্ষদ থেকে সরাতে টাটা মোটরস ও তার শাখা জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভারকে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকতে বলেছে টাটা সন্স। উল্লেখ্য, টাটা মোটরসে টাটা সন্সের ২৬.৫১ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে।

এ দিন বৈঠকে গৃহীত আর্থিক ফলাফল অনুসারে গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে সামগ্রিক ভাবে টাটা মোটরসের মুনাফা হয়েছে ৮৪৮ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে তাদের ক্ষতি হয়েছিল ১,৭৪০ কোটি। সামগ্রিক আয়ও প্রায় ৭% বেড়ে হয়েছে ৬৭,০০০ কোটি। মূলত জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভারের বিক্রি বাড়ার কারণেই মুনাফার মুখ দেখা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাটি। আলোচ্য সময়ে একক ভাবে টাটা মোটরসের নিট ক্ষতির পরিমাণ ২৮৯ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩১ কোটি টাকায়। কমেছে বিক্রিও।

টাটা-মিস্ত্রি এই বিতর্কের মধ্যেই অবশ্য রতন টাটা পাশে পেয়েছেন টাটা মোটরসের কর্মীদের। সোমবারের বৈঠকের আগেই তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিলেন দু’টি শ্রমিক সংগঠন। সংস্থার সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর গুন্টের বুট্সচেককে লেখা এক চিঠিতে সাইরাস মিস্ত্রিকে সরানো নিয়ে টাটা সন্সের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার কর্মী। গাড়ি সংস্থার বর্তমান পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে তাঁরা যে হতাশ, তা-ও স্পষ্ট করা হয়েছে ওই পুণে এবং জামশেদপুরের কারখানার কর্মীদের দুই চিঠিতে। পুণে কারখানার কর্মীদের দাবি, এক সময়ে সংস্থা কর্তৃপক্ষ ও তাঁদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত ১৪ মাসে ছোটখাট নানা কারণেই সেই সুন্দর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তা ফিরিয়ে আনতে রতন টাটার নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখার কথা চিঠিতে জানিয়েছেন তাঁরা।একই সুর শোনা গিয়েছে জামশেদপুরে টাটা মোটরস কারখানার কর্মীদের পাঠানো চিঠিতেও। সেখানে রতন টাটাকে নিজেদের নেতা বলে মেনেছেন অধিকাংশই।

সতর্ক সেবি। টাটা-মিস্ত্রি সংঘাত ক্রমেই ঘোরালো হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির উপর বাড়তি নজর রাখছে বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরুটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি)। শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ টাটাদের প্রতিটি শাখা সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় খুঁটিয়ে দেখছে তারা। সোমবার সেবি-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোন সংস্থা কোন কোন তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে প্রকাশ করছে, তার ভিত্তিতেও সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নজর রাখা হচ্ছে স্বাধীন ডিরেক্টরদের ভুমিকার উপরও। টাটাদের সংস্থাগুলির শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই সেবি সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছে। সেবি আইন মেনে চলা হচ্ছে কি না, সেটা নিশ্চিত করতেই তৎপর তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন