সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন সাইরাস মিস্ত্রি। সঙ্গে টাটা গ্লোবাল বেভারেজেসের এমডি-সিইও অজয় মিশ্র (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
বছর ঘুরলেও একই থেকে গেল ছবি। রাজ্যে আগামী দিনে টাটাদের নতুন করে লগ্নির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সেই নিরুত্তরই থাকলেন গোষ্ঠীর কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রি। গত বছরের মতো এ বারও।
রতন টাটার উত্তরসূরি হিসেবে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের পদে বসার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কলকাতায় টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস-এর (টিজিবিএল) বার্ষিক সভায় শেয়ারহোল্ডারদের মুখোমুখি হলেন সাইরাস। মঙ্গলবার সেই সময় প্রত্যাশিত ভাবেই এ রাজ্যে লগ্নি সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন তিনি। এক শেয়ারহোল্ডারই জানতে চাইলেন, দার্জিলিং-সহ এই রাজ্যে নতুন করে লগ্নির কোনও পরিকল্পনা তাঁদের আছে কি না। কিন্তু গত বছরের মতো এ বারও এ নিয়ে মন্তব্য না করে যাবতীয় বিতর্ক এড়িয়ে গেলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর সাইরাসের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সিঙ্গুর নিয়ে টাটাদের ভাবনা কী? এবং মুম্বইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা শিল্প সম্মেলনে তিনি উপস্থিত থাকবেন কি না। কিন্তু দুই প্রশ্নেই নিরুত্তর ছিলেন তিনি। সভার শেষে ফের এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রথমে মুখে কুলুপ আঁটলেও শেষে শুধু বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করতে পারব না।” এ দিন অবশ্য পরে প্রশ্ন করার সুযোগও পাওয়া যায়নি। কারণ, সভা শেষ হতেই মূল সভাকক্ষের পিছনের দরজা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে ও সংস্থার অন্য কর্তাদের।
বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই টাটা গ্লোবাল বেভারেজেসের বার্ষিক সভায় প্রায় নিয়ম করে উঠেছে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উঠেছে ভবিষ্যতে টাটাদের লগ্নি মানচিত্রে রাজ্যের ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনার কথাও। চেয়ারম্যান থাকাকালীন রতন টাটা অনেক সময়ই সেই প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন। এমনকী চেয়ারম্যান হিসেবে টিজিবিএলে নিজের শেষ বার্ষিক সভাতেও তিনি বলেছিলেন, সিঙ্গুরের ঘটনা তাঁর মনে উষ্মার উদ্রেক করে না। বরং দুঃখের অনুভূতি জাগায়। সাইরাস অবশ্য সেখানে এ নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বরাবরই বিরত থেকেছেন।
তবে এ দিন শুধু লগ্নির গুরুগম্ভীর আলোচনা নয়, উঠল সাইরাসের গাম্ভীর্য প্রসঙ্গও। সংস্থার আর্থিক ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডাররা জানতে চাইলেন, কেন সাধারণত হেসে কথা বলেন না সাইরাস! জবাবে হাসিমুখে থাকার আশ্বাস টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন এ রাজ্যে লগ্নির প্রসঙ্গ।
শেয়ারহোল্ডারদের অন্যান্য প্রশ্নের উত্তরে সাইরাস জানিয়েছেন, আগামী দিনে তাঁদের বোতলবন্দি জলের ব্র্যান্ড হিমালয়-কে পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন বাজারে নিয়ে যেতে চান তাঁরা। উদ্ভাবনী চিন্তার আমদানি চান চায়ের ব্যবসাতেও। আনতে চান কিছু বিশেষ ধরনের চা। টিজিবিএলের সদর দফতর কলকাতা হলেও, টাটা-স্টারবাকস্-এর বিপণি এ শহরে নেই। এ প্রসঙ্গে সাইরাস জানিয়েছেন, এ বার এখানে বিপণি খোলার প্রস্তাব স্টারবাকস্-কে দেবেন তাঁরা।