রাহুমুক্তি বিলগ্নিতে, বার্তা অভিজিতের

ভারতে ব্যাঙ্কিং শিল্পের সঙ্কটকে ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছেন অভিজিৎ। আর তার দাওয়াই বাতলেছেন, ‘আগ্রাসী পরিবর্তন’। কী সেই সংস্কার?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি, শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:০৪
Share:

মঙ্গলবার দিল্লিতে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। পিটিআই

সঙ্কট কাটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিলগ্নিকরণেরই সুপারিশ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

ভারতে ব্যাঙ্কিং শিল্পের সঙ্কটকে ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছেন অভিজিৎ। আর তার দাওয়াই বাতলেছেন, ‘আগ্রাসী পরিবর্তন’। কী সেই সংস্কার?

অভিজিতের উত্তর, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারি মালিকানার ভাগ ৫০ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। যাতে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের নিয়ন্ত্রণ না থাকে।’’ তাঁর যুক্তি, সরকারি নিয়ন্ত্রণ না সরলে ভিজিল্যান্স কমিশনের আতঙ্ক কাটবে না। ওই ভয়েই ব্যাঙ্ক কর্তারা ঋণ শোধ না হওয়ার তথ্য ধামাচাপা দিয়ে রাখছেন। কেউ একটা ঋণ শোধ করতে না পারলে, তাঁকে নতুন ঋণ দেওয়া হচ্ছে পুরনোটির কিছুটা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। অভিজিতের দাবি, এ ভাবে বিপদ ঠেকিয়ে রাখা যখন অসম্ভব হয়ে উঠছে, তখনই ভেঙে পড়ছে ব্যাঙ্ক।

Advertisement

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সিংহভাগের ঘাড়ে অনাদায়ি ঋণের বোঝা। অনেকে আক্রান্ত আর্থিক প্রতারণায়। শ্লথ অর্থনীতিতে চাহিদা উধাও হওয়ায় তাই আবাসন, বস্ত্রের মতো শিল্পে নতুন ঋণ দিতে ভয় পাচ্ছে তারা। এর মধ্যেই অগস্টে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি রুখতে উপদেষ্টা বোর্ড গড়েছে প্রাক্তন ভিজিল্যান্স কমিশনার টি এম ভাসিনের নেতৃত্বে। যারা ৫০ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্ত করবে। কার্যত সে দিকেই আঙুল তুলে অভিজিতের অভিযোগ, আতঙ্কে ব্যাঙ্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

ব্যাঙ্কের সঙ্কট কাটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের নীতি নিয়েছে কেন্দ্র। যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট ডাকেন কর্মীরা। আর এ দিনই দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের ‘লিভার ফাউন্ডেশন’-এর মঞ্চে ব্যাঙ্কে সরকারি অংশীদারি ৫০ শতাংশের নীচে নামানোর সওয়াল করেন অভিজিৎ। বাজেটে কেন্দ্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে তাদের অংশীদারি ৫১ শতাংশের নীচে নামানোর কথা বললেও, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তা বলেনি। তবে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর জন্য সরকারের দায় ঝেড়ে ফেলতে, নতুন চেহারায় এফআরডিআই বিল ফের সংসদে পেশ করার পরিকল্পনা করছে। অভিজিতের অভিযোগ, পুরনো অনাদায়ি ঋণকে নতুন ধারে সজীব রাখা হচ্ছে। তাই ব্যাঙ্কের ৬৬% অ্যাকাউন্টে ঋণের অঙ্কের বছরের পর বছর বদল নেই।

অগস্ট অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লাভ বাড়ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুৎপাদক সম্পদ ছিল ৮.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। গত মার্চে নেমেছে ৭.৯ লক্ষ কোটিতে। কিন্তু আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে অভিজিতের যুক্তি, ‘‘ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিটে যথেষ্ট তথ্য মিলছে না। আজকে ব্যাঙ্ক ভাল অবস্থায়, তো পরের দিনই সঙ্কটে। তাই আরও নজরদারি জরুরি। আগেই সঙ্কট রোখা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন