বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে ভারত এখন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম। ফলে ওই খাতে মোটা খরচের ভার বইতে হয় সরকারকে। এই ছবি বদলাতেই সেগুলি তৈরিতে এ বার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সামিল করার পক্ষে সওয়াল করলেন সেনাবাহিনীর কর্তারা। তবে শুধুমাত্র বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম কেনা কমানো নয়, জোর দেওয়া হচ্ছে সেগুলি রফতানি করার ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি কলকাতায় বণিকসভা সিআইআইয়ের অনুষ্ঠানে সেনাকর্তাদের দাবি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামই ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের প্রধান ব্যবসা হয়ে উঠতে পারে। যেখানে তাদের কমপক্ষে ৯৬০ কোটি ডলার (প্রায় ৬৬,০৩৮.৪ কোটি টাকা) ব্যবসার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা। বিশেষ করে কেন্দ্র এই ক্ষেত্রে দেশকে স্বনির্ভর করতে উদ্যোগী হওয়ায়, সেই সুযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও দাবি করেন তাঁরা। সেনাকর্তাদের সকলেই একবাক্যে মানছেন, এত টাকার ব্যবসা বিদেশি সংস্থার হাতে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র কী ভাবে শিল্পের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে পারে, তা নিয়েই সভার আয়োজন করেছিল বণিকসভাটি। অনুষ্ঠান শেষে সুব্রতবাবুর দাবি, কেন্দ্র যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তার রূপায়ণে প্রতিরক্ষা অন্যতম উপযুক্ত একটি জায়গা। কারণ, গত কয়েক বছরে এই ক্ষেত্রটি নিয়ে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ছে।’’
সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষায় ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে এর আগে একটি বিশেষ কমিটি গড়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। তাদের রিপোর্টে বলা হয় অস্ত্র ও বিমানের ৮০% সরঞ্জাম ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকেই আসে। ফলে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শিল্পে স্বনির্ভর হতে গেলে এই শিল্পের উপরে জোর দিতে হবে। সেনাকর্তাদের দাবি, সে ক্ষেত্রে হেলিকপ্টারের সামনের ও পিছনের পাখা বা নৌবাহিনীর নাইট ভিশন দূরবীন, জলের তলার স্ক্যানারের মতো সরঞ্জাম ছোট শিল্পের কারখানাতেই তৈরি হতে পারে।
তবে অনেকের প্রশ্ন, এ দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের গবেষণা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত যথেষ্ট পরিকাঠামো আছে কি? না-হলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য তৈরিতে সমস্যা হতে পারে। ভাল না-ও হতে পারে সেগুলির গুণগত মান। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে শিক্ষা ক্ষেত্রের সাহায্যও নিচ্ছেন তাঁরা।