নির্বিচারে বড় মাপের নোট বাতিল করলে তার বিপুল খরচের দায় যে সরকারকে নিতে হবে, সে ব্যাপারে আগেভাগেই সাবধান করেছিলেন রঘুরাম রাজন। এমনকী ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তদানীন্তন গভর্নর বলেছিলেন, দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল মিললেও এখন তার জন্য যে-খেসারত দিতে হবে, তা ঢের বেশি। এক কথায় নোটবন্দি তছনছ করতে পারে দেশের অর্থনীতিকে।
গত সেপ্টেম্বরেই আরবিআই গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কাজে ফিরে যান রাজন। তিনি এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুথ স্কুল অব বিজনেস’-এ প্রফেসর অব ফিনান্স।
আরও পড়ুন: জিএসটি রিটার্নে দেরি হলেও মকুব জরিমানা
রাজনের যে বইটি শীঘ্রই প্রকাশিত হতে চলেছে, সেটি নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন আরবিআই প্রধান। ওই বইয়ে রাজন আরবিআই কর্তা থাকাকালীন মোদী সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কথাবার্তার কথা অনেকটাই খোলাখুলি জানিয়েছেন। ‘আই ডু হোয়াট আই ডু: অন রিফর্মস রেটরিক অ্যান্ড রিজল্ভ’ শীর্ষক ওই গ্রন্থে রাজন লিখেছেন, এ নিয়ে প্রথম বার তিনি মতামত দেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর কালো টাকায় রাশ টানতে ও নোট জাল করা রুখতে ৫০০
ও ১,০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার কথা আচমকাই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর বি আইয়ের সাম্প্রতিক হিসেবে ধরা পড়েছে, বাতিল নোটের ৯৯ শতাংশই ফিরেছে ব্যাঙ্কের ঘরে। ফলে কালো টাকায় রাশ টানা নিয়ে কেন্দ্রের দাবি সত্যি হয়নি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। উল্টে চাহিদা নেমেছে তলানিতে।
সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, ‘‘মোদী সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে আরবিআই বলেছিল, ভাল প্রস্তুতি ছাড়া এই সিদ্ধান্ত নিলে ঠিক কী হতে পারে।’’ ৮০ শতাংশের বেশি নোট নাকচ যে অর্থনীতিকে তছনছ করে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দরিদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রাকে থমকে দিতে পারে, সে কথাও রাজন জানিয়েছিলেন। এ ধরনের বিপর্যয় এড়াতে হলে তাঁর মতে, আগে যথেষ্ট নতুন নোট ছাপিয়ে তবেই পুরনো নোট বাতিল করা যেতে পারে।
কেন্দ্রের নোট নাকচের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে তাঁর যে কোনও ভূমিকা ছিল না, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন রাজন। তবে সাক্ষাৎকারে রাজন উল্লেখ করেছেন যে, ‘‘নোট-বন্দির পিছনে সরকারের উদ্দেশ্য ভাল থাকতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে এটা কোনও ভাবেই বলার উপায় নেই যে, নোট বাতিল আর্থিক দিক থেকে সফল। দীর্ঘ মেয়াদে এর কোনও সুবিধা মিলবে কি না, তা সময়ই বলবে।’’