নোট কাণ্ডের জেরে বিক্রি কমছে ৩০-৪০%

সুযোগ বাড়ছে গাড়ির পুরো দাম ঋণে মেটানোর

নোট বাতিলের ধাক্কায় বেসামাল দেশের গাড়ি শিল্প। অনিশ্চয়তা ও নগদ জোগানে টান পড়ায় গাড়ি কেনা স্থগিত রাখছেন অনেকেই।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

নোট বাতিলের ধাক্কায় বেসামাল দেশের গাড়ি শিল্প।

Advertisement

অনিশ্চয়তা ও নগদ জোগানে টান পড়ায় গাড়ি কেনা স্থগিত রাখছেন অনেকেই। যদিও তাঁরা আগেই ‘বুক’ করেছিলেন বা কিনবেন বলে শো-রুমে দেখে গিয়েছিলেন পছন্দের গাড়ি। ক্রেতা টানতে তাই ডিলারদের আর্জি মেনে ও ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে গাড়ির পুরো দামই ঋণ হিসেবে নেওয়ার সুযোগ বাড়ছে বিভিন্ন সংস্থায়। গাড়ি কেনার সময়ে প্রথমে যে-টাকা নগদে ঢালতে হয়, সে ক্ষেত্রে সেই ‘ডাউনপেমেন্ট’ লাগবে না। এই অঙ্ক কমিয়েও দিচ্ছে অনেক সংস্থা।

গাড়ি শিল্পের দাবি, আগে সাধারণত দামি গাড়ি বা বিশেষ কিছু ক্রেতা ১০০% দামই ঋণ বাবদ পেতেন। বাকিরা সর্বোচ্চ ৮০-৮৫%। কিন্তু এখন ক্রমশ কম দামি গাড়ির বাজারেও পুরো দামই ঋণে মেটানোর সুযোগ ছড়াচ্ছে। স্বনির্ভর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যেমন, আগে বড় মাপের শিল্প-কর্তা বা ব্যবসায়ী ছাড়া কেউ সহজে পুরো ঋণ পেতেন না। এখন তাঁদেরও সেই সুযোগ দিচ্ছে কোনও কোনও সংস্থা। শর্তও শিথিল করা হচ্ছে।

Advertisement

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সার্বিক ভাবে গাড়ি শিল্প আগেই বলেছিল, সাধারণত ৬৫-৭০% গাড়িই কেনা হয় ঋণ নিয়ে। ফলে স্বল্প মেয়াদে কিছু সমস্যার আশঙ্কা থাকবে। ফেডারেশন অব অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন্স (ফাডা) জানাচ্ছে, এই সব সমস্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ফাডা-র সেক্রেটারি জেনারেল গুলশন আহুজার দাবি, দিল্লি, হরিয়ানা, হায়দরাবাদ, কোয়েম্বত্তুর, রাজস্থান, কলকাতা সর্বত্র একই ছবি। গড়ে বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়ে কমছে ৩০-৪০%। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধী নই। কিন্তু একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।’’ কলকাতার মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (এমআইএ)-এর চেয়ারম্যান বিনায়ক নায়ার জানান, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাতেই চার চাকার গাড়ির বুকিং কমেছে প্রায় ৫০%। দু’চাকার প্রায় ৬০%। বিয়ের মরসুমে বাড়তি বিক্রির আশায় থাকা ডিলারদের বক্তব্য, নগদ জোগানের চেয়েও ক্রেতারা শঙ্কায় বাজারের অনিশ্চয়তা নিয়ে। ভবিষ্যতে আবার কোনও কড়া সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নেবে কি না, এ সব ভেবেই গাড়ি কেনা স্থগিত রাখছেন অনেকে।

গুলশনের দাবি, গ্রামে সমস্যা আরও তীব্র। কারণ সেখানে অনেকেই নগদে গাড়ি, বিশেষ করে দু’চাকার যান কেনেন। নোট বাতিলের পরপরই শো-রুমে ক্রেতা আসা ভীষণ কমে গিয়েছিল, বলছে দু’চাকার গাড়ির বৃহত্তম সংস্থা হিরো মোটোকর্প। তবে এখন তা বাড়ছে, দাবি তাদের। ক্রেতা টানতে তাই ১০০% ঋণ দেওয়া ও ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে বসানো বাড়তি সরকারি চার্জ কমানোর দাবি তোলেন ফাডা-র প্রেসিডেন্ট জন পল।

পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১০০% ঋণের জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে গাড়ি সংস্থাগুলি। কেউ বা গাড়ি কেনার সময়ে ‘ডাউনপেমেন্ট’-এর অঙ্ক কমিয়ে দিচ্ছে। হোন্ডা যেমন গাড়ির পুরো দামই ক্রেতাকে ঋণে মেটানোর সুযোগ দিতে গাঁটছড়া বেঁধেছে এইচডিএফসি, অ্যাক্সিস ও আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের সঙ্গে। হুন্ডাই একই কারণে ওই তিনটি ব্যাঙ্কের পাশাপাশি কোটাকের সঙ্গেও গাঁটছড়া বেঁধেছে। সংস্থার এক ডিলার -কর্তা জানান, আগে হুন্ডাইয়ের ছোট গাড়িতে এই সুযোগ মিলত না। একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে মহীন্দ্রাও। তবে মাত্র ১০১ টাকা ‘ডাউনপেমেন্ট’-এর কথা বিজ্ঞাপনে জানিয়েছে তারা। ১০০% ঋণের সুবিধা দিচ্ছে রেনো ইন্ডিয়াও। পাশাপাশি বুকিংয়ের টাকা ‘এইচডিএফসি পেজ-অ্যাপ’ ও ‘পেটিএম’-এর মতো ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে দিতে পারবেন ক্রেতা।

গাড়ি শিল্পের দাবি, এখন পকেট থেকে টাকা বার করার চেয়ে বাড়তি ইএমআই-এর বোঝা নিতে রাজি হতে পারেন অনেকে ক্রেতাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন