সবুরে মেওয়া ফলাতে লগ্নি করুন পড়তি বাজারে

নোট বাতিলের প্রভাবে অনেকটা পড়ার পরে সপ্তাহ শেষে সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার সেনসেক্স উঠেছে ৪৫৬ অঙ্ক। ফের পেরিয়েছে ২৬ হাজারের সীমা।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

নোট বাতিলের প্রভাবে অনেকটা পড়ার পরে সপ্তাহ শেষে সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার সেনসেক্স উঠেছে ৪৫৬ অঙ্ক। ফের পেরিয়েছে ২৬ হাজারের সীমা। ৮ হাজারের পিঠে চেপেছে নিফ্‌টি-ও। অনেকেরই এখন প্রশ্ন, তা হলে কি পতনের শেষ হল?

Advertisement

হয়তো নয়। কষ্টের দিন এখনও শেষ হয়নি। ব্যাঙ্কের লাইন অবশ্য কিছুটা ছোট হয়ে এসেছে। চলতি সপ্তাহের পরে হয়তো মানুষকে আর কাজ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাঙ্কে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। এর মানে অবশ্য এই নয় যে, নোট সমস্যা মিটে গেল। এর অর্থ হল, গৃহস্থের সমস্যার হয়তো সাময়িক সুরাহা হল। কিন্তু শিল্পের সমস্যা মিটল কি? নতুন মাস পড়লেই তো ছোট নোটের চাহিদা আবার লাফিয়ে বাড়বে। জোগান আসবে তো? একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়: ব্যাঙ্কে জমা হওয়া সব বাতিল নোটের জায়গায় নতুন ছাপা হতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লেগে যেতে পারে।

বাজারে এখনও পর্যন্ত যত নতুন নোট ছাড়া হয়েছে, তার বড় অংশ ২০০০ টাকার। এই নোটের হস্তান্তরযোগ্যতা বেশ সীমিত। এটি আবার তুলে নেওয়া হতে পারে, সেই আশঙ্কাতেও অনেকে নিতে চাইছেন না এই গোলাপি টাকা।

Advertisement

যে-সব ব্যবসা পুরোপুরি অথবা আংশিক নগদে হয়, সেখানে দুর্দিন কিন্তু তত দিন বহাল থাকবে, যত দিন না নোট সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। বড় সমস্যার মধ্যে থাকবে ফসল কাটা থেকে ফসল বিক্রি করার পুরো প্রক্রিয়া। এই কারণে যে-বিরাট লোকসান হবে, সেই বাবদ বড় খেসারত দিতে হবে শিল্প এবং সমাজকে। এর প্রভাব অবশ্যই থাকবে শেয়ার বাজারের উপর। অর্থাৎ শুক্রবারের মাঝারি মাপের উত্থান থেকে এটা ধরে নেওয়া যায় না যে, বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মনে রাখতে হবে, নোট বাতিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পুরোপুরি এখনও অনুভূত হয়নি। যতই দিন যাবে, তত পরিষ্কার হবে চিত্রটি। এই কথা মাথায় রেখে আগামী দিনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে লগ্নিকারীদের।

এখন বড় প্রশ্ন হল, কত দিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অবসানে ছন্দে ফিরবে দেশের অর্থনীতি। কত দিন পরে আমরা পেতে শুরু করব নোট বাতিলের সুফল। কতটা সফল হবে জাল টাকা, জঙ্গির হাতে থাকা টাকা এবং কালো টাকার বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর লড়াই। বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের ধারণা— কৃষি, শিল্প এবং সমাজে কষ্টের দিন চলতে পারে এই আর্থিক বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে নোট বাতিলের প্রভাবে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হারও কিছুটা ধাক্কা খাবে। তবে আশা করা হচ্ছে, নতুন অর্থবর্ষের গোড়া থেকেই সুফল ফলতে শুরু করবে। তত দিন পর্যন্ত রাজনীতি এবং অর্থনীতি সামলানো সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

শেয়ার বাজারের জন্য পরিস্থিতি সাময়িক খারাপ হলেও বড় মেয়াদে কিন্তু সুসময় আসবে আশা করা যায়। পাশাপাশি, পড়তি সুদের জমানায় কদর বাড়ছে ঋণপত্র এবং ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ডের। এই কথা মাথায় রেখে এখন লগ্নি করা যায় ভাল ইকুইটি শেয়ারে, ব্যালান্সড এবং ডেট ফান্ডে। ছোট মেয়াদে টাকা রাখা যেতে পারে লিকুইড ফান্ডে। নেমে আসা বাজারে করদাতারা লগ্নি করতে পারেন কর সাশ্রয়কারী ইএলএসএস প্রকল্পে। এখন লগ্নি করলে ৩ বছরে ভাল ফল মিলবে আশা করা যায়।

নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে যে-সব সুফল দীর্ঘ মেয়াদে ফলবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তা একনজরে দেখে নেওয়া যেতে পারে সঙ্গের সারণিতে।

নোট পর্ব শেষ হতে না-হতেই শুরু হবে পণ্য-পরিষেবা কর চালুর পর্ব। ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু হওয়ার কথা। আরও একবার নাড়া পড়বে অর্থনীতিতে। এ বার বাজেট এগিয়ে আনা হয়েছে ফেব্রুয়ারির গোড়ায়। মাত্র মাস দু’য়েকের মধ্যে জিএসটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বাজেটে পরোক্ষ করের ব্যাপারে তেমন কিছু থাকবে না বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ বাজেটের মুখ্য বিষয় হবে প্রত্যক্ষ কর। বেশি হারে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা ঘোষণার সুযোগ সম্ভবত সরকার আরও একবার দেবে। এর আগে আয় ঘোষণা প্রকল্পে কেন্দ্র কর বাবদ সংগ্রহ করেছে ২৯,০০০ কোটি টাকা। কালো টাকা বাবদ মোটা জরিমানা সংগ্রহ করতে পারলে বাজেটে আয়করে কিছুটা সুবিধা দেওয়া হলেও হতে পারে। করদাতার সংখ্যা বাড়লে, কর বাবদ আয় বাড়লে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হতে পারে বা কমানো হতে পারে করের হার। কর বাবদ দায় কমলে মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। দেশের পক্ষে এটা ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন