পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ৬০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট থেকে অর্ধেকের কিছু বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু করেছে ডিভিসি। দ্বিতীয় ধাপে ৬৬০ মেগাওয়াটের আরও দু’টি ইউনিট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সূত্রের খবর, ব্যবসা সুনিশ্চিত করতে সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক তারা পশ্চিমবঙ্গকে বিক্রি করতে চায়। এ ব্যাপারে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। রাজ্য সেই প্রস্তাবে রাজি হলে ডিভিসি দ্রুত ওই প্রকল্প নির্মাণের কাজে হাত দেবে।
ডিভিসি কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, বর্ধমানের কাটোয়ায় এনটিপিসির ১,৩২০ মেগাওয়াটের সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। কাটোয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭৫-৮০ শতাংশই কেনার কথা ছিল পশ্চিমবঙ্গের। সেখানে রঘুনাথপুরের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। সেই প্রকল্পের অন্তত অর্ধেক বিদ্যুৎ রাজ্য কিনতে রাজি হলে উভয়েরই লাভ বলে ধারণা তাঁদের।
লোকসানে রাশ টানতে বছর দুয়েক আগে ডিভিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরো মালিকানা চেন্নাইয়ের নেইভেলি লিগনাইট কর্পোরেশনকে বিক্রি করে দেবে। তাতে প্রাথমিক ভাবে অনুমোদনও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে ডিভিসি। ঠিক করে, রঘুনাথপুরের প্রকল্প তারাই গড়বে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও চালাবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ডিভিসি এখন উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক পশ্চিমবঙ্গকে বিক্রি করে আয় বাড়ানোর পথ খোঁজা শুরু করেছে। পরামশর্দাতা সংস্থা ডেলয়েট রঘুনাথপুর প্রকল্প নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্পটি না গড়লে ডিভিসিকে যন্ত্র সরবরাহকারী দুই সংস্থাকে ২,০০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, দরপত্রে অংশগ্রহণ করে বরাত পাওয়ার পরে যন্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থাও করে ফেলেছে তারা। আবার প্রথম দু’টি ইউনিট তৈরি হয়ে গেলেও পুরো বিদ্যুৎ (১,২০০ মেগাওয়াট) বিক্রি করা যাচ্ছে না বলে সংস্থাটির বছরে ৭০০ কোটি টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত চাহিদা বাড়লে বিদ্যুৎ কেনার আগাম পরিকল্পনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এখন বিদ্যুতের চাহিদার গড় বৃদ্ধি প্রায় ৪%। যা রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদন ও বিদ্যুৎ কেনার পুরনো ব্যবস্থাতেই হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ডিভিসির কাছ থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ রাজ্য কিনবে কেন?
ডিভিসির এক কর্তার যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি হলে, এ রাজ্যে ওই প্রকল্পের জন্য কমপক্ষে ১০,০০০ কোটি টাকা লগ্নি হবে। কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের। ডিভিসির বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গ কিনলে তার দামও বাজারের তুলনায় কিছুটা কম হবে। তাতেও রাজ্যের লাভ।