মণীশ মহেশ্বরী। ছবি: বিকাশ মশান।
দেড় বছরের মধ্যে রানিগঞ্জ (পূর্ব) ব্লকে ভূগর্ভস্থ কোল বেড মিথেন (সিবিএম) উত্তোলনের পরিমাণ তিন গুণ বাড়ানো হবে বলে জানাল এসার অয়েল। এ জন্য আরও ১,০০০ কোটি টাকা ঢালবে তারা।
সম্প্রতি এই ব্লকে দিনে ১০ লক্ষ স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার (এসসিএম) মিথেন তোলার লক্ষ্য ছুঁয়েছে এসার। সংস্থার খনন ও উত্তোলন বিভাগের সিইও মণীশ মহেশ্বরীর দাবি, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের মধ্যে তা ৩০ লক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। সেই খাতেই লগ্নি হবে হাজার কোটি। এখনও পর্যন্ত সেখানে ৩,০০০ কোটি ঢেলেছে সংস্থা।
চুক্তি অনুযায়ী, সংস্থা এই ব্লক থেকে তোলা যতটা গ্যাসের ব্যবসা করবে, সেই অনুসারে রয়্যালটি পাবে রাজ্য। কেন্দ্র টাকা পাবে উৎপাদনের নিরিখে। মহেশ্বরীর দাবি, প্রাকৃতিক গ্যাসের বুধবারের দর ধরলে প্রকল্প থেকে ২০-২৫ বছরে রয়্যালটি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য ২,৫০০ কোটি টাকা। তিনি জানান, এই অর্থবর্ষ থেকেই রয়্যালটি দেওয়া শুরু হয়েছে। দেওয়া হবে প্রতি ত্রৈমাসিকে। তবে তার অঙ্ক নির্ভর করবে গ্যাসের দর বাড়া-কমার উপর।
প্রকল্পের শুরুতে জমি অধিগ্রহণের সমস্যায় কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল এসার। পরে রাজ্যের সহযোগিতায় তা শুরু হয়। ২০১২ সাল থেকে ওই ব্লকে উত্তোলন চালাচ্ছে সংস্থা। সিবিএম তুলতে ইতিমধ্যেই বর্ধমানের অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসার-সহ বিভিন্ন এলাকায় ৩০০টি কূপ খনন করা হয়েছে। এ বার তা ৪০০-তে নিয়ে যাওয়া হবে। মহেশ্বরীর দাবি, সেখানে প্রত্যক্ষ ভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৮০০ জনের। আগামী দিনে ওই সংখ্যা বাড়বে আরও ২০০।
এসার অয়েল জানিয়েছে, ২০১৭ সাল নাগাদ পানাগড়ে ম্যাটিক্স ফার্টিলাইজার্সের কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। বছরে ১৩ লক্ষ টন ইউরিয়া তৈরির পরিকল্পনা। মহেশ্বরী জানান, তার আগে দিনে এখন ২ লক্ষ এসসিএম মিথেন পাইপলাইন মারফত পাঠাচ্ছেন তাঁরা। পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন শুরু হলে সেখানে ২৪ লক্ষ এসসিএম মিথেন লাগবে। আর তা রানিগঞ্জ ব্লক থেকেই জোগানো হবে। বাদবাকি যাবে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ডিএসপি, এএসপি-সহ নানা সংস্থার কারখানায়। তাঁর দাবি, শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সংস্থায় কাঁচামাল হিসেবে মিথেন কাজে আসবে। তা ছাড়া, এই গ্যাস তুলনায় পরিবেশ বান্ধব। পাইপলাইনে পাঠানো যায় বলে মজুতের খরচও বাঁচে।
মহেশ্বরীর দাবি, পরে প্রাকৃতিক মিথেন গ্যাস পরিবহণ বা গৃহস্থালীর প্রয়োজনেও ঘরে ঘরে জোগানো যেতে পারে। তবে সরকারি নিয়ম মেনে সার, বিদ্যুৎ, ইস্পাতের মতো কিছু শিল্পকে তা ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া রয়েছে। আগামী দিনে যদি সুযোগ আসে এবং নীতি বদলায়, তা হলে পরিবহণ-সহ নানা ক্ষেত্রে মিথেন জোগাবেন তাঁরা।
সিবিএম তো আছেই। প্রাথমিক সমীক্ষায় রানিগঞ্জ ব্লকে পাথরের খাঁজে আটকে থাকা শেল গ্যাসেরও খোঁজ মিলেছে। কেন্দ্র নতুন হাইড্রোকার্বন নীতির বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করলে, তাঁরা সেই গ্যাস উত্তোলন নিয়ে এগোবেন বলে জানিয়েছেন মহেশ্বরী। আর এটা হলে বিকল্প জ্বালানির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।