শেয়ার, সুদ ও সোনা একইসঙ্গে সব নিম্নগামী। ফলে ভাল রকম ধন্দে সাধারণ মানুষ। এই বাজারে কোথায় টাকা রাখা বেশি লাভজনক, সে চিন্তা প্রায় প্রত্যেকের মনে। লগ্নির জায়গা অনেক থাকলেও আয় কমছে সর্বত্র। শেয়ার ও সোনা ততটা না-হলেও জমার উপর নিম্নগামী সুদ অবশ্যই চিন্তায় রেখেছে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে। অন্য দিকে শেয়ার ও সোনার পতনে পুরনো লগ্নিকারীদের কপালে ভাঁজ পড়লেও, এই দুই ক্ষেত্রে নতুন লগ্নিকারীদের জন্য ভাল সময় বলা যায়। এক এক করে দেখে নেব তিনটি ক্ষেত্রই।
খাতায়-কলমে পণ্যমূল্যের তথাকথিত পতনে এবং শিল্প ও সরকারের চাপে ব্যাঙ্ক-জমায় সুদ অনেকটাই কমেছে। আগামী দিনে তা আরও কমার সম্ভাবনা খুব বেশি। ব্যাঙ্কে সর্বাধিক সুদ নেমে এসেছে ৭.৭৫ শতাংশ থেকে ৮.২৫ শতাংশে। কম করে তা আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। সুদ ১ থেকে ১.২৫ শতাংশ নেমে আসায় সুদ বাবদ মানুষের আয় এরই মধ্যে কমেছে ১১ শতাংশেরও বেশি। অন্য দিকে মহার্ঘ ভাতা (ডি এ) বাড়তে শুরু করায় এবং বেশ কয়েকটি রাজ্যে বর্ষায় ভাল রকম ঘাটতি হওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
যাঁরা আগে ব্যাঙ্কে টাকা রেখেছিলেন, মেয়াদ শেষে সেই টাকা আবার ব্যাঙ্কে নতুন করে লগ্নি করলে আয় নেমে আসবে বেশ খানিকটা। এমন ঘটতে পারে এ কথা মাথায় রেখে এই কলমে আমরা অতীতে কয়েক বার পরামর্শ দিয়েছিলাম একটু বড় মেয়াদে টাকা রাখতে। সম্প্রতি যাঁরা অবসর নিয়েছেন অথবা যাঁরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে আসবেন, তাঁদের জন্য সময়টা আদৌ অনুকূল নয়। এই কারণেই অবসর পরিকল্পনা করতে হয় অনেক আগে থেকে। ব্যাঙ্ক জমার উপর সুদ কমার পাশাপাশি সুদ কমেছে বেসরকারি জমা প্রকল্পেও। কয়েকটি বড় ব্যাঙ্কে এবং বেসরকারি জমা প্রকল্পে বর্তমানে চালু সর্বাধিক সুদের হার সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল।
সর্বত্র সুদ কমলেও ডাকঘরে কিন্তু সুদ এখনও কমেনি। বরং প্রবীণ নাগরিক জমা প্রকল্পে সুদ ৯.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৩ শতাংশ হয়েছে। বর্তমান বাজারে এই সুদ বেশ আকর্ষণীয়। একবার রাখলে ৫ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ৮.৭ শতাংশ করমুক্ত সুদের অর্থ করযোগ্য ১২.৫০ শতাংশ সুদের সমান (৩০ শতাংশ হারে করদাতাদের ক্ষেত্রে)। এ ছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে করমুক্ত বন্ড, যেখানে সুদের হার হতে পারে কম-বেশি ৭.২৫ শতাংশ। উঁচু হারে করদাতাদের জন্য মন্দ নয়। মিউচুয়াল ফান্ডের ঋণপত্র-নির্ভর ইনকাম/বন্ড ফান্ডে এখন আয়/বৃদ্ধি হতে পারে কম-বেশি ৮.৫ শতাংশ। ৩ বছরের বেশি মেয়াদে এই প্রকল্পে টাকা রাখাটা করদাতাদের কাছে লাভজনক হতে পারে।
চিন ভারী আকারে সোনা বিক্রি করায়, ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এবং কয়েকটি রাজ্যে বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে চাহিদায় ঘাটতি পড়ায় সোনার দাম এখন আবার নিম্নগামী। সরকার স্বর্ণ জমা/স্বর্ণ বন্ড ইত্যাদি প্রকল্প আগামী দিনে চালু করলে চাহিদা আরও কমবে। চিন-সহ অনেক দেশের অর্থনীতি বেশ দুর্বল। এদের সোনা বিক্রির সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ পরিবারের জন্য প্রকৃত সোনার প্রয়োজন না-থাকলে লগ্নির কারণে সোনা থেকে আপাতত একটু দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বরং অপেক্ষা করা যেতে পারে সরকারি স্বর্ণ বন্ডের জন্য। দাম কমায় মহিলাদের জন্য অবশ্য সুসময় এসেছে বলা যায়।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে একের পর এক ধাক্কা আসছে শেয়ার বাজারে। সামনে আছে মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়ার সম্ভাবনা। বিশ্বের দুই শক্তিশালী অর্থনীতি চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সিদ্ধান্ত বড় রকম চাপের মধ্যে রেখেছে ভারত-সহ বিশ্বের অনেক অর্থনীতিকে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় অর্থনীতি তুলনামূলক ভাবে ভাল বলা যায়। অশোধিত তেলের দাম ২০ ডলারে নেমে আসতে পারে এমন সম্ভাবনা অবশ্যই ভারতকে শক্তি জোগাবে। এ ছাড়া সুদ আরও এক দফা কমলে তা শেয়ার বাজারকে তেজী রাখতে সাহায্য করবে। অন্য দিকে প্রথম সারির কয়েকটি শস্য উৎপাদনকারী রাজ্যে বৃষ্টিতে ১২-১৪ শতাংশ ঘাটতি চিন্তায় রেখেছে সরকারকে। এতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে। সব মিলিয়ে দেখলে শেয়ার বাজার কিছু দিন অস্থির থাকার সম্ভাবনা বেশ জোরালো। বড় উত্থানের কোনও কারণ এখন দেখা যাচ্ছে না। বরং মার্কিন মুলুকে যদি সুদ সত্যিই বাড়ে তবে তার কী প্রভাব পড়ে, তাই এখন দেখার। বর্তমান পরিস্থিতিতে নজর রাখা যায় তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, মূলধনী পণ্য এবং গাড়ি শিল্পের উপর।