সংশোধনের প্রয়োজন ছিল ঠিকই, তবে দেশের মধ্যে যা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে হয়তো এখনই তা হওয়ার কথা ছিল না। বরং আরও পাঁচশো-হাজার পয়েন্ট সেনসেক্স উঠতেই পারত। বাদ সাধল বিশ্ব বাজার।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দু’একটি প্রতিকূল বার্তা গত সপ্তাহে টেনে নামায় বিশ্ব বাজারকে। ভারত তো এর প্রভাবের বাইরে থাকতে পারে না। এটাই পতনের বড় কারণ। আর্জেন্টিনা সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে না-পারায় আশঙ্কা ছড়ায় বিশ্ব বাজারে। অন্য দিকে মার্কিন অর্থনীতিতে উন্নতির ইঙ্গিত থাকায় ওই দেশের সরকার ঘোষিত সময়ের আগেই সুদ বাড়াতে পারে, এই চিন্তাও দুর্বল করে তোলে বিভিন্ন বাজারকে। ফলে পশ্চিমের বাজারের পাশাপাশি পতন হয় চিন, হংকং, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইল্যান্ডের শেয়ার বাজারে। এই পতন প্রভাবিত করে ভারতীয় বাজারকেও।
শুক্রবার ১,৬৫৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে বিদেশি লগ্নিকারীরা। এর প্রভাবে শুধু শেয়ার বাজারই নয়, ভারতীয় টাকার দামও ভাল রকম নেমে আসে। শুক্রবার সেনসেক্স এবং নিফটি যখন নামে যথাক্রমে ৪১৪ এবং ১১৯ পয়েন্ট, তখন টাকার দামও মাত্র ১ দিনে পড়ে যায় ৬৩ পয়সা। টাকায় ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে হয় ৬১.১৮ টাকা। কোনওটাই শুভ নয় ভারতীয় অর্থনীতির কাছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউ টি ও) সঙ্গে ভারতের মতের অমিলও প্রতিকূল প্রভাব ফেলে শেয়ার বাজারে।
অথচ এমনটা হওয়ার কিন্তু কথা ছিল না। দেশের মধ্যে থেকে পরপর ভাল খবর পাচ্ছিল শেয়ার বাজার। বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় বাজার জুন মাসে দেশের পরিকাঠামো শিল্পের ৭.৩ শতাংশ বৃদ্ধির খবর পায়। গত বছর জুন মাসে এই বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২.৩ শতাংশ। এই বৃদ্ধির ফলে চলতি বছরে ভারতের জাতীয় উৎপাদন পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি হারে বেড়ে উঠতে পারে বলে আশা জাগে। এই তথ্যে চাঙ্গা হয়ে সরকারের তরফে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, ২০১৪-’১৫ সালে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ ছাপিয়ে যেতে পারে। জুলাই মাসে মারুতি, হুন্ডাই, হোন্ডা, টয়োটা সব সংস্থারই কমবেশি গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। এটিও অর্থনীতির চাঙ্গা হয়ে ওঠার একটি ছোটখাটো ইঙ্গিত।
জুলাই মাসে যা-বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, এল নিনো এ বার হয়তো ততটা ক্ষতি করতে পারবে না। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত সংস্থার আর্থিক ফলাফলকে মোটের উপর ভালই বলতে হবে। সব মিলিয়ে দেশের ভিতরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ আশা জাগায়।
কিন্তু বাজারের জন্য সেটাই সব নয়। মনে রাখতে হবে, সেনসেক্স ও নিফটির এই উত্থানের অন্যতম কারণ হল, বিদেশি আর্থিক সংস্থার বড় আকারের লগ্নি। মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়লে এবং আর্থিক ত্রাণ কমলে এই লগ্নির একাংশের সে দেশে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা কিন্তু সব সময়েই থাকবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারত কী ভূমিকা নেয়, তা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে বিশ্ব বাজার।
দেশের অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগায় বাজারের খুব বড় পতনের আশঙ্কা অবশ্য এখনই করা হচ্ছে না। বরং সাময়িক আশঙ্কাগুলি কিছুটা লাঘব হলে বাজার আবার উঠবে বলেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এই পতন মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছে কম দামে নতুন করে লগ্নি করার।
গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি নজর-কাড়া কোম্পানি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আশার তুলনায় ভাল ফল প্রকাশ করেছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। শেষ তিন মাসে ব্যাঙ্কের নিট লাভ ২২৭২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ২৬৫৫ কোটি টাকায়। গাড়ি বিক্রি বেড়ে ওঠায় লাভ বেড়েছে মারুতি-সুজুকিরও। ৬৩২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তা হয়েছে ৭৬২ কোটি টাকা। ইনফোসিস, টিসিএস এবং উইপ্রোর পরে এ বার ভাল ফল উপহার দিয়েছে এইচসিএল টেকনো। প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়ে এপ্রিল থেকে জুন, এই তিন মাসে সংস্থাটির নিট মুনাফা পৌঁছেছে ১৮৩৪ কোটি টাকায়। ভারতী এয়ারটেলের একত্রিত মুনাফা ৬১ শতাংশ বেড়ে স্পর্শ করেছে ১১০৮ কোটি টাকা।
১৪ অগস্টের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে যাবে বাকি সব ফলাফল। আশা করা হচ্ছে গড় ফলাফল ভালই হবে। বিভাজনের পরে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের নতুন প্রতিটি ২ টাকার শেয়ার গত সপ্তাহে বাজারে নথিবদ্ধ হয়েছে। শুরুতেই ২ টাকার শেয়ারের দাম টপকে গিয়েছে ৪০০ টাকার মাত্রা। শুক্রবার এই শেয়ার শেষ বেলায় বন্ধ হয়েছে ৩৮৭ টাকায়। দাম নাগালের মধ্যে চলে আসায় শেয়ারটির চাহিদা ও দাম, দু’ইই বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ২ টাকা ফেস ভ্যালু-যুক্ত শেয়ারের বাজার দর এখন ৮০০ টাকারও উপরে।