বিক্ষোভ: দাবিতে জমায়েত। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
দরজায় কড়া নাড়ছে গুজরাত ভোট। ঘর গোছানোর সময় এগিয়ে আসছে লোকসভা নির্বাচনেরও। এই অবস্থায় কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে চাষিদের আত্মহত্যা আর কৃষক বিক্ষোভ রক্তচাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের। কিন্তু সেই ক্ষোভে জল ঢালতে ঋণ মকুবের জন্য বিপুল অঙ্ক চট করে জোগাড় করাও কঠিন কেন্দ্রের পক্ষে। কারণ, তাতে নড়ে যেতে পারে রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম টেনে রাখার চাঁদমারি। হালে মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ-এর রেটিং এক ধাপ ওঠার পরে যা করা আরও কঠিন মোদী সরকারের পক্ষে।
ঋণ মকুবের দাবিতে দিল্লিতে এসে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছেন কৃষকরা। প্রায় ১৮০টি কৃষক সংগঠন মিলে তৈরি সর্বভারতীয় কিসান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি সোমবার থেকে পার্লামেন্ট স্ট্রিটে দু’দিনের ‘কিসান সংসদ’ শুরু করেছে। সেখানে ঋণ মকুবের বিল ‘পাশ করেছে’ তারা। তৈরি করেছে ঋণ মকুব কমিশন। ওই ‘সংসদে পাশ হয়েছে’ ফসলের সঠিক দামে চাষির অধিকার সংক্রান্ত বিলও।
তাঁদের দাবি, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনেই চাষের খরচের অন্তত দেড় গুণ ফসলের দাম দিতে হবে। একই সঙ্গে দাবি, নভেম্বর পর্যন্ত ঋণ মকুব করতে হবে। সংগঠনের নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হলে, সরকার তার দায় নিক। তারপরে তা মকুব করুক। কোনও কৃষক যখন নতুন ঋণ নেবেন, তখন যেন আগের ঋণ শোধ হয়েছিল কি না, তা দেখা না হয়।’’
লোকসভা ভোটের দু’বছর বাকি থাকতে কৃষকদের ক্ষোভ কোনও সরকারেরই কাম্য নয়। কিন্তু মোদী সরকারের মুশকিল হল, রাজকোষের টানাটানির জেরে ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করা অন্তত এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে শক্ত। বিশেষত মুডি’জ যে ভাবে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই অর্থনীতির ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে, তার পরে ঘাটতি লাগামছাড়া করা মুশকিল।
এতদিন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলছিলেন, রাজ্যগুলি নিজেরা ঋণ মকুব করতে পারে। উত্তরপ্রদেশের দেখাদেখি পঞ্জাব, মহারাষ্ট্রর মতো রাজ্য সে পথে হেঁটেছে। কিন্তু মুশকিল হল, এতে আবার রাজ্যগুলির ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা। অথচ মুডি’জের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।
সব মিলিয়ে, এই মুহূর্তে শাঁখের করাত দশা কেন্দ্রের। অনেকের মতে, লখনউয়ের তখ্ত দখলের লক্ষ্যে বিজেপির দেওয়া ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি এখন গলার কাঁটা কেন্দ্রের।