বিমা থেকে বিয়ে

শুধু কি পড়াশোনা? তার বাইরেও হাজারো খরচ ছড়িয়ে রয়েছে সন্তানকে বড় করার পথে। চিকিৎসা, বিয়ে, বিমার সুরক্ষা— প্রয়োজনের তালিকা লম্বা। তাই সময় থাকতে তহবিল গড়ায় নজর দিনপড়াশোনার বিভিন্ন ধাপে স্বপ্নপূরণের জ্বালানি জোগানোর কথা যেমন আলোচনা হল, তেমনই মনে করে নেওয়া ভাল অন্যান্য জরুরি খরচের কথাও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

টাকা জমাতে শুরু করার আগে তা কেন, কী প্রয়োজনে, কত দিনের জন্য জমাচ্ছি, তা ভেবে নেওয়াটা ভীষণ জরুরি। একমাত্র তবেই ঠিকঠাক তহবিল গড়ে ওঠে। সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রেও তা-ই। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সন্তানের উচ্চশিক্ষা— পড়াশোনার বিভিন্ন ধাপে স্বপ্নপূরণের জ্বালানি জোগানোর কথা যেমন আলোচনা হল, তেমনই মনে করে নেওয়া ভাল অন্যান্য জরুরি খরচের কথাও। মহাভারতে অর্জুনের পাখির চোখ দেখার কথা মনে আছে?

Advertisement

পাখির চোখ

• গোড়াতেই হিসেব কষুন, মূলত কী কী কারণে কখন কখন মোটা টাকা প্রয়োজন হবে আপনার। এ ক্ষেত্রে চারটি বিষয় শুরু থেকেই মাথায় রাখুন— (১) চিকিৎসা (২) বিমার সুরক্ষা (৩) পড়াশোনা (৪) বিয়ে। পড়াশোনা নিয়ে এতক্ষণ কথা বলেছি। এখানে কথা বলব বাকিগুলি নিয়ে।

Advertisement

চাইল্ড পলিসি

সন্তানের জন্য সঞ্চয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই ‘চাইল্ড পলিসি’র কথা ভাবি আমরা। একটা কথা বলতে পারি, ছেলে/মেয়ের জন্য সঞ্চয় করতে এই ধরনের পলিসি কেনা আর যা-ই হোক, একমাত্র পথ নয়।

যদি মনে করেন, কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে ওই ধরনের প্রকল্পেই বেশি-বেশি বিনিয়োগ করে টাকা জমিয়ে ফেলতে পারবেন, তা হলে অসুবিধা নেই। নইলে একটু অন্য ভাবে ভাবুন। যেমন, সন্তানের কথা মাথায় রেখে নিজের নামে মোটা টাকা জমালেও সুবিধা একই।

চিকিৎসার খরচ

• প্রথম থেকেই সন্তানকে চিকিৎসা বিমার আওতায় রাখুন।

• শুরু করুন ‘ফ্যামিলি ফ্লোটার পলিসি’তে তাকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে। ধরুন, আপনার এবং স্ত্রীয়ের একটি তিন লক্ষ টাকার ফ্লোটার পলিসি রয়েছে। সেখানে সন্তানের নামও যোগ করুন। তাতে প্রিমিয়াম সামান্য বাড়বে। কিন্তু তেমনই ছেলে/মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারবেন আপনি।

• সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রমশ বাড়াতে থাকুন কভারেজের অঙ্ক।

• সন্তান কিছুটা বড় হলে (ধরুন ১৮ বছর), তার জন্য আলাদা চিকিৎসা বিমার বন্দোবস্ত করুন। যাতে পরে স্বাবলম্বী হলে, সে নিজেই ওই বিমা চালিয়ে যেতে পারে।

• যে-পলিসিই করুন না কেন, তাতে ক্যাশলেস পরিষেবা থাকা বাঞ্ছনীয়। যাতে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে, চট করে পকেটে হাত দেওয়ার প্রয়োজন না-পড়ে।

বিমার সুরক্ষা

এখানে বিমার সুরক্ষা মানে কিন্তু সন্তানের নামে বিমা কেনা নয়। তার থেকে বরং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনার কিছু হলে সেই পলিসি সন্তানের ঝুঁকির সুরক্ষা হিসেবে যথেষ্ট কি না। যাতে, পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীর (বাবা/মা) মৃত্যু হলেও তার বেড়ে ওঠা বা পড়াশোনায় টাকার সমস্যা না-হয়।

• বেশি টাকার এনডাওমেন্ট পলিসি করতেই পারেন। কিন্তু তাতে প্রিমিয়ামও মোটা। তার বদলে টার্ম পলিসির কথা ভাবতে পারেন।

বিয়ের ব্যবস্থা

• এর জন্যও অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে সঞ্চয় করা যায়। কিন্তু কাজের সময়ে প্রয়োজন হয় মোটা অর্থ। তাই মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি-র মাধ্যমে লগ্নি এ ক্ষেত্রে করা যেতে পারে। বাকি টাকা জমানো যেতে পারে পিপিএফের মতো কম ঝুঁকির প্রকল্পে।

• বিয়েতে যে-জিনিসটা বাড়তি লাগবে, তা হল গয়না। তাই সোনা কেনার টাকার বন্দোবস্ত করে রাখতে হবে। অনেকেই এ জন্য মাসিক কিস্তিতে সোনা কেনেন। তার পাশাপাশি চল বাড়ছে গোল্ড-ইটিএফে (গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) লগ্নিরও। কাগুজে সোনা থেকে মোটা টাকা হাতে এলে, গয়নার সোনা কিনে ফেলা যাবে তা দিয়েই।

পাঠকের প্রশ্ন

আমার ২৭ বছর বয়স। মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি শুরু করেছি ২ লক্ষ টাকায় ছ’টি ফান্ডের ইউনিট কিনে। আমার প্রশ্ন হল—

১) মাসে ১৫ হাজার করে লগ্নি করতে পারি ৩ ও ৫ বছরের জন্য। যেখান থেকে ভাল রিটার্ন পাওয়া যাবে। কোন ফান্ডে করব?

২) এখন ২ লাখ হাতে আছে। আরও ৫ লাখ টাকা কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে জমাতে চাই ২-৩ বছরের জন্য। যাতে আচমকা নগদের প্রয়োজন পড়লে অসুবিধা না হয়।

৩) ন্যাভ কখন, কতটা নীচে থাকলে বুঝব এটাই লগ্নি করার পক্ষে ঠিক সময়, বুঝতে পারছি না।

৪) রেগুলার প্ল্যান ও ডিরেক্ট প্ল্যানের মধ্যে কোনটা লাভজনক?

সুনীতি, শ্রীরামপুর

একেবারে শুরুতেই নানা ধরনের ফান্ড কিনে ফেলেছেন আপনি। পোর্টফোলিও হিসেবে যা বেশ আকর্ষণীয়। তবে আমার মনে হয় লার্জ ক্যাপ ফান্ডে আরও লগ্নি করার সুযোগ রয়েছে আপনার। এক বা একাধিক লার্জ ক্যাপ ফান্ড বেছে নিন এবং তাতে এসআইপি শুরু করুন। আপনিই জানিয়েছেন, মাসে ১৫,০০০ টাকা করে ঢালতে পারবেন। পাঁচ বছরের মেয়াদে জমিয়ে যান। কোনও ভাবেই তাতে যেন কোনও ছেদ না পড়ে।

আপনি বলেছেন, ৫ লক্ষ টাকার সুরক্ষিত কোনও প্রকল্পে জমাতে চান। সেটা মিউচুয়াল ফান্ডই তো? যদি তা-ই হয়, তবে বলব ভাল মানের ডেট ফান্ডে লগ্নি করুন। চাইলে ঋণপত্র ভিত্তিক বিনিয়োগ একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে, এমন ভাল কোনও এমআইপি-ও করতে পারেন। ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে যে প্রকল্পে, সেটাই বাছুন।

সবচেয়ে ভাল ন্যাভ সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা না করারই পরামর্শ দেব আপনাকে। মনে রাখবেন, ন্যাভ কিন্তু কোনও সংস্থার শেয়ারের দর নয় যে, যত কম হবে তত ভাল। বরং কোন ফান্ডের তহবিল কোথায় কী ভাবে কতটা লগ্নি করা হচ্ছে, সেটার খুঁটিনাটি জেনে পুঁজি ঢালার সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

আমার মনে হয় রেগুলার প্ল্যান-ই আপনার পক্ষে ভাল হবে। এতে পেশাদার উপদেষ্টার সহায়তায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে লগ্নির পথ নির্ধারণ করে দেওয়ার সুবিধা আছে।

পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন