জিএসটি ঘিরে শঙ্কায় বাজার

পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় এ এক আমূল পরিবর্তন। গোটা ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগবে। মাস দুই-তিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক জায়গায় ফিরবে বলে আশা করা যায়। তখন বিচার করা যাবে, এই পণ্য-পরিষেবা কর সাধারণ মানুষের জন্য কতটা ভাল এবং কতটা মন্দ।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

অবশেষে আমরা জিএসটি জমানায়। প্রাথমিক পরিস্থিতি অনেকটা নোট বাতিল-উত্তর পরিস্থিতির মতো। সবাই ধন্দে। মানুষ বুঝতে পারছেন না, ব্যাপারটা ভাল না মন্দ। নোট বাতিলের সময়ে ঘরে টাকা ছিল না, কিন্তু বাজারে পণ্য ছিল। এখন নোটের অভাব অনেকটাই মিটেছে, কিন্তু কর-গোলযোগে বহু পণ্যই অমিল। বিশেষ করে সমস্যা হচ্ছে ওষুধ নিয়ে।

Advertisement

পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় এ এক আমূল পরিবর্তন। গোটা ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগবে। মাস দুই-তিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক জায়গায় ফিরবে বলে আশা করা যায়। তখন বিচার করা যাবে, এই পণ্য-পরিষেবা কর সাধারণ মানুষের জন্য কতটা ভাল এবং কতটা মন্দ।

এই কর ব্যবস্থা চালু হওয়ায় বাজেট কিন্তু অনেকটাই আকর্ষণ হারাল। তেল, সাবান, সিগারেট, টুথপেস্ট ইত্যাদির দামের ওঠা-পড়া নিয়ে বাজেটের পরে আর দেশ সরগরম হবে না। পরোক্ষ করের পুরোটাই চলে এসেছে জিএসটি ব্যবস্থার অধীনে। আয়কর সমেত প্রত্যক্ষ কর কতটা বাড়ল বা কমল, তা দেখার জন্যই মানুষ এ বার বাজেটের উপর দৃষ্টি রাখবেন বলে আশা করা যায়। তবে বাজেটে পরোক্ষ কর হেরফের করা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

জমানা বদল

থমকে শেয়ার বাজার


নতুন ব্যবস্থা থিতু হলে সূচকের শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা


পড়তি বাজারে ঘরে তোলা যেতে পারে ভাল শেয়ার


জৌলুস অনেকটাই হারাবে কেন্দ্রীয় বাজেট


দামের ওঠা-পড়া নিয়ে সম্ভবত সরগরম হবে না দেশ


তিন মাসে গাড়ি বিক্রি প্রায় ৮% কমার আশঙ্কা


কমতে পারে অন্যান্য পণ্য বিক্রিও


ভাল বর্ষার জেরে জিএসটি
নিয়ে আশঙ্কা কাটিয়ে উঠতে পারে বাজার


ব্যাঙ্ক পরিষেবা, বিমা প্রিমিয়ামের খরচ বাড়বে

জিএসটি নিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতা দু’পক্ষই এখন বেশ ধন্দে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বুঝতে না-পেরে উৎপাদন কমানো হয়েছে অনেক কারখানায়। আশঙ্কা, জিএসটি জমানার প্রথম তিন মাসে গাড়ি বিক্রি কমতে পারে কম-বেশি ৮ শতাংশ। উৎপাদন কমিয়ে আনার কারণে বিক্রি কমতে পারে আরও বেশ কিছু পণ্যের। এই কর ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগের এক মাসে ঢালাও ছাড় দেওয়া হয়েছে বহু পণ্যের দামে, এমনকী গাড়িতেও। লক্ষ্য, মজুত থাকা পুরনো মালপত্র যতটা সম্ভব বিক্রি করে ফেলা।

অনেক শপিং মল এবং বৈদ্যুতিন পণ্যের শো-রুমে জুন মাসে ৮০/৮৫ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে বলে শোনা গিয়েছে। এই কারণে এপ্রিল থেকে জুন, ৩ মাসে অনেক কোম্পানির বিক্রি বাড়লেও লাভের অঙ্ক সম্ভবত কমবে। পরের ৩ মাসে বিক্রি কমার সম্ভাবনা অবশ্য প্রবল।

অর্থনীতির এই অস্থির পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারও কিছুটা থমকে। বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁদের সংশয় আছে, তাঁদের অনেকে গত কয়েক দিন ব্যস্ত ছিলেন লাভের টাকা ঘরে তুলতে। এই কারণে কিছুটা সংশোধনের কবলে পড়ে শেয়ার সূচক। তবে জিএসটি-র ওড়ানো ধুলো থিতু হলে বাজার আবার শক্তি ফিরে পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সুতরাং বড় মেয়াদে যাঁরা লগ্নি করতে চান, তাঁরা সাময়িক পতনের সুযোগ নিয়ে কিনে ফেলতে পারেন ভাল শেয়ার।

সারা দেশে বর্ষা ভালই হচ্ছে। শস্য উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে ভাল বর্ষণ চলতে থাকলে তা জিএসটি নিয়ে বাজারের আশঙ্কাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে, সন্দেহ নেই।

এ বার দেখা যাক, বিমা, ব্যাঙ্কিং এবং লগ্নির বাজারে পণ্য- পরিষেবা করের প্রভাব কতটা পড়তে পারে।

• জিএসটি জমানায় পরিষেবার উপর কর বাড়লেও (১৫ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ) তাতে গাড়ি এবং বাড়ির মাসিক কিস্তি বা ইএমআই বাড়বে না। তবে কিছুটা বাড়তে পারে ঋণের প্রসেসিং ফি।

• দাম বাড়তে পারে ব্যাঙ্কের দেওয়া বিভিন্ন পরিষেবায়। এস এম এস মারফত এই ব্যাপারে গ্রাহকদের অবহিত করছে ব্যাঙ্কগুলো। যে-সব পরিষেবায় অতিরিক্ত মাশুল ধার্য হবে, সেগুলির মধ্যে থাকবে ন্যূনতম জমা না-রাখলে সেই খাতে নেওয়া ফি, নিখরচায় ব্যবহারের জন্য বেঁধে দেওয়া সংখ্যার অতিরিক্ত এটিএম ব্যবহার বাবদ ফি, এসএমএস অ্যালার্ট ফি, অতিরিক্ত চেক বই ইস্যুর ফি ইত্যাদি।

• স্বাস্থ্য বিমার খরচ বাড়তে পারে অনেকটাই। বার্ষিক প্রিমিয়ামের উপর আগের ১৫ শতাংশের জায়গায় এ বার বসবে ১৮ শতাংশ পরিষেবা কর

• চাপ আসবে জীবন বিমার প্রিমিয়ামের উপরও। বিমা কোম্পানিগুলি এ ব্যাপারে গ্রাহকদের জানাতে শুরু করেছে।

জিএসটি জমানায় হাত গুটিয়ে বসে নেই মিউচুয়াল ফান্ডগুলিও। নতুন কর ব্যবস্থা চালু হলে কিছু শিল্প সুবিধা পাবে, এই কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে কয়েকটি নতুন প্রকল্প (এনএফও) বাজারে এনেছে অগ্রণী কয়েকটি ফান্ড। এনএফও নিয়ে হাজির হয়েছে এমন তিনটি ফান্ডের তথ্য সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল। প্রকল্পগুলি ক্লোজ এন্ডেড, সর্বাধিক মেয়াদ সাড়ে ৩ বছর।

গত শুক্রবার শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হয়েছে ডিপজিটরি কোম্পানি সিডিএসএল। ইস্যুতে বড় সাফল্যের প্রভাব পড়েছে বাজার দরের উপর। ১৪৯ টাকায় ইস্যু করা এই শেয়ার নথিবদ্ধ হয়েছে ২৫০ টাকায়। অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ প্রিমিয়ামে। পরে আরও বেড়ে দিনের শেষে বন্ধ হয় ২৬০ টাকায়।

টাকা তুলতে গেলে বেশির ভাগ এটিএম এখন উগরে দিচ্ছে শুধু মাত্র ২০০০ টাকার নোট। এতে মাসের প্রথমে বড় অসুবিধায় পড়ছেন বহু মানুষ। ছোট নোটের জোগান বাড়াতে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০০ টাকার নোট ছাপার। ছাপার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে সরকারি এক ছাপাখানায়। প্রথম বারের জন্য ২০০ টাকার নোট হাতে পেলে মানুষ খুশিই হবেন আশা করা যায়।

নতুন ফান্ড

প্রকল্প ইস্যু খুলেছে ইস্যু বন্ধ


বিড়লা সানলাইফ রিসার্জেন্ট ইন্ডিয়া ২৩ জুন ৭ জুলাই
(সিরিজ-৪)


আইসিআইসিআই প্রু-ভ্যালু ফান্ড ২৭ জুন ১১জুলাই
(সিরিজ-১৫)

এইচডিএফসি ইকুইটি অপরচুনিটিজ ২৭ জুন

১১জুলাই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন