লাফিয়ে বাড়া তেলের দামে আমজনতার ভোগান্তিতে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। দরে রাশ টানতে কেন্দ্রকে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্নায় বসতে চলেছেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু পেট্রল, ডিজেলের দর চড়ায় কিছুটা যেন খুশির ছোঁয়া অর্থ দফতরের হিসেবের খাতায়। কর্তাদের ইঙ্গিত, দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা আর কিছু দিন স্থায়ী হলে, অন্তত ২,০০০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আসতে পারে রাজ্যের ভাঁড়ারে।
বরং এক ধাপ এগিয়ে নবান্নের এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘তেলের দাম বাড়লে বাড়তি টাকা আসবে। বাজেটে কেন্দ্র শুল্ক কমিয়ে সম পরিমাণ সেস না বসালে, আরও রোজগার হত।’’
এখন প্রতি লিটার পেট্রল, ডিজেলে কর প্রায় ৪২%। এর মধ্যে রাজ্য প্রতি লিটার তেলের দামে ২০% হারে বিক্রয় কর আদায় করে। দিল্লি তেলের দাম বাড়ালে, রাজ্যের বিক্রয় কর বাবদ রোজগারও তাই বেড়ে যায়। এ ছাড়া, প্রতি লিটার তেলে রাজ্য এক টাকা সেস আদায় করে। ফলে এ রাজ্যে যত তেল যত বেশি দামে বিক্রি হয়, ততই রাজস্ব আদায় বাড়ে রাজ্যের। গত আর্থিক বছরে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা এই বাবদ আয় হয়েছে অর্থ দফতরের। নবান্নের কর্তারা মনে করছেন, যে হারে তেলের দাম বাড়ছে, তা যদি আর কিছু দিন স্থায়ী হয়, তা হলে অন্তত বাড়তি ২,০০০ কোটি আসতে পারে।
রেকর্ড তেলের দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। তার উপর রোজ নিয়ম করে এ নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করছেন বিরোধীরা। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরেও এখনও উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের কথা বলেনি কেন্দ্র। তাদের দাবি, তেমনটা করলে রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশা উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা। তার বদলে বরং রাজ্যগুলিকে ফের যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) কমানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অধিকাংশ রাজ্যই তাতে সাড়া দেয়নি।
উল্টো দিকে, তেলের মূল দামের উপর উৎপাদন শুল্ক চাপিয়ে যে দাম হয়, তার উপর কর বসে রাজ্যে। ফলে উৎপাদন শুল্ক যদি কমে, তাহলে ভ্যাট বাবদ আয়ও কমবে। সম্প্রতি বারবার প্রশ্ন উঠেছে, সে জন্যই কি এ নিয়ে সর্বাত্মক ভাবে সরব নয় অধিকাংশ রাজ্য?
তবে রাজ্যের কর্তাদের অভিযোগও রয়েছে। বাজেটে প্রতি লিটার তেলে ৮ টাকা কর মকুব করেছে কেন্দ্র। বদলে বসেছে সম পরিমাণ সেস। এক কর্তা জানাচ্ছেন, ৮ টাকা কেন্দ্রীয় শুল্ক আদায় হলে, ২৩ পয়সা রাজ্য পেত। কিন্তু সেস একতরফা ভাবে দিল্লির ভাঁড়ারে চলে যাচ্ছে। এই খাতে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘বিক্রয় কর বাবদ আদায় বাড়বে। কিন্তু শুল্কের বদলে সেস বসায় প্রাপ্যে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য।’’