অভিষেকে হোঁচট বৃদ্ধির

বৃদ্ধি পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন, হাতছাড়া দ্রুততমের তকমা

আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের দাবি, পুরো অর্থবর্ষের বৃদ্ধির ফিতেয় ভারত এখনও চিনের আগে। ২০১৮-১৯ সালে এ দেশের অর্থনীতির মাপ বেড়েছে ৬.৮%। চিন ৬.৪%।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০২:২৬
Share:

আগুয়ান: দায়িত্ব নিতে অর্থ মন্ত্রকের পথে নির্মলা সীতারামন। বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই এখন প্রথম চ্যালেঞ্জ। পিটিআই

বৃদ্ধির গতিতে চিনকে পিছনে ফেলে দ্রুততমের তকমা হাসিলের কথা বার বার বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হল সেই মুকুট খুইয়ে। ইন্দিরা গাঁধীর পরে প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারামনের অভিষেকের দিনে সরকারি পরিসংখ্যান জানাল, গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি নেমেছে ৫.৮ শতাংশে। ১৭ ত্রৈমাসিকে সব চেয়ে নীচে।

Advertisement

আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের দাবি, পুরো অর্থবর্ষের বৃদ্ধির ফিতেয় ভারত এখনও চিনের আগে। ২০১৮-১৯ সালে এ দেশের অর্থনীতির মাপ বেড়েছে ৬.৮%। চিন ৬.৪%। কিন্তু দুশ্চিন্তার মেঘ সেই তথ্যেও। কারণ, মোদী সরকারের প্রথম দফার পাঁচ বছরে ৬.৮ শতাংশই সর্বনিম্ন। তার উপরে এপ্রিলে কমেছে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধির গতি। দীর্ঘ টালবাহানা শেষে কেন্দ্র মেনেছে, নোটবন্দির ঠিক পরে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বেকারত্বের হার পৌঁছেছিল ৬.১ শতাংশে। ভোটের আগে এনএসএসও-র ফাঁস হওয়া রিপোর্টে যাকে সাড়ে চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বলায় চটেছিল কেন্দ্র।

গর্গ মানছেন, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে আরও শ্লথ হতে পারে বৃদ্ধির গতি। কিন্তু তাঁর দাবি, এই হোঁচট সাময়িক। মূলত তা হয়েছে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাগুলিতে (এনবিএফসি) সমস্যার জেরে নগদের অপর্যাপ্ত জোগানের কারণে।

Advertisement

দুশ্চিন্তার মেঘ

• গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে বৃদ্ধি নেমে গেল ৬ শতাংশের নীচে (৫.৮%)।
• ১৭টি ত্রৈমাসিকের মধ্যে বৃদ্ধির হার মন্থরতম। গত দু’বছরের মধ্যে এই প্রথম চিনের পিছনে।
• পুরো আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হারও (৬.৮%) মোদী জমানার প্রথম পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, এই নিরিখে আরও পিছনে চিন।
• ২০১৭-১৮ সালে বেকারত্বের হার ৬.১%। যা সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ বলে দাবি করেছিল এনএসএসও-র ফাঁস হওয়া রিপোর্ট।
• খোদ আর্থিক বিষয়ক সচিব মানছেন, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে আরও ঢিমে হতে পারে বৃদ্ধির হার।
• এপ্রিলে ধাক্কা খেয়েছে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বৃদ্ধিও। নেমে এসেছে ২.৬ শতাংশে। সরাসরি উৎপাদন কমেছে অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সারের মতো পণ্যের।

কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ অনেক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, ভোট প্রচারে অর্থনীতির হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রসঙ্গ মোদীরা তুলেছেন, সেগুলিকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছে এ দিনের পরিসংখ্যান। যেমন, আলোচ্য ত্রৈমাসিকে চিনের কাছে হাতছাড়া হয়েছে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা। বৃদ্ধির পালে যখন হাওয়া আছে, তখন কাজের সুযোগও তৈরি হচ্ছে প্রচার করেও এখন সামনে আসছে ৬.১% বেকারত্ব। মানতে হচ্ছে চাহিদার অভাবে অর্থনীতি শুকিয়ে যাওয়ার কথা। হালে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রথীন রায় তো বলেইছেন, বার বার অভিযোগ উঠেছে, নোটবন্দির পর থেকেই এই সমস্যা জমাট বেঁধেছে অর্থনীতিতে।

কেন্দ্রের আশ্বাস

• বৃদ্ধির চাকায় গতি ফিরবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকেই।
• সমস্ত চাষিকে বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তে গ্রামে চাহিদা বাড়বে। একই কাজ করবে দোকানির পেনশন।
• চাহিদায় জোয়ার আনতে লগ্নি পরিকাঠামোয়। জোর বেসরকারি লগ্নি বৃদ্ধিতে।
• নগদ ও ঋণের সমস্যা মেটাতে এনবিএফসি-সমস্যার দ্রুত সমাধান।
• নীতি আয়োগের দাবি, প্রথম একশো দিনেই সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলবে কেন্দ্র। যেমন, শ্রম আইন ও ব্যাঙ্কিংয়ে সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণে জোর এবং জমি ব্যাঙ্ক তৈরি।
• মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে রাজকোষ ঘাটতিও (৩.৩৯%)। ফলে সুদ কমানোর রাস্তা খোলা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে।
• মাথাপিছু আয় ১০% বেড়ে মাসে ১০,৫৩৪ টাকা।

মূল্যবৃদ্ধি কম থাকাকেও প্রচারে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, সেই সাফল্যও কি মূলত এসেছে চাষিরা জলের দরে কৃষিপণ্য বেচতে বাধ্য হওয়ায়? তার মাসুল গুনেই কি এখন চাহিদায় ভাটা গ্রামে? এখন যাকে চাঙ্গা করতে ত্রাণ প্রকল্পের আর্জি জানাচ্ছে শিল্প। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘বৃদ্ধিতে ধস আর বিপুল বেকারত্বই এখন দেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন