সোনা ৫ বছরের তলানিতে

সাংহাইয়ের পণ্য লেনদেনের বাজারে একলপ্তে বিক্রি হল ৩৩,০০০ কেজি সোনা। বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আইএমএফের কাছে তা বিক্রির অনুমতি চাইল গ্রিসও। সব মিলিয়ে, জোগান উপচে পড়ার সম্ভাবনায় বিশ্ব বাজারে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে গেল সোনার দাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০২:২৮
Share:

সাংহাইয়ের পণ্য লেনদেনের বাজারে একলপ্তে বিক্রি হল ৩৩,০০০ কেজি সোনা। বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আইএমএফের কাছে তা বিক্রির অনুমতি চাইল গ্রিসও। সব মিলিয়ে, জোগান উপচে পড়ার সম্ভাবনায় বিশ্ব বাজারে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে গেল সোনার দাম। সোমবার লেনদেন চলাকালীন প্রতি ট্রয় আউন্স সোনার (৩১.১ গ্রামের বার) দর এক সময় তলিয়ে গেল ১,১০০ ডলারেরও নীচে। কিছুটা একই ছবি কলকাতা-সহ ভারতের বাজারে। এ দিন শহরে প্রতি ১০ গ্রাম পাকা (২৪ ক্যারাট) সোনার মূল দাম দাঁড়িয়েছে ২৫,৬৬০ টাকা। শনিবারের তুলনায় ৩৭০ টাকা কম। কমেছে রুপোর দরও।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম এতখািন কমে যাওয়ার কারণ মূলত তিনটি—

(১) উপচে পড়া জোগান: সোমবার শুধু সাংহাইয়ের পণ্য লেনদেনের বাজারেই ৩৩ হাজার কেজি সোনা বেচেছেন লগ্নিকারীরা। সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে হাতে ধরে রাখা সোনা বেচে দ্রুত তা শেয়ার বাজারে ঢালছেন চিনা লগ্নিকারীরা। বেজিং জানিয়েছে, তাদের সোনার ভাণ্ডার গত ছ’বছরে ফুলেফেঁপে উঠেছে প্রায় ৫৭%। কিন্তু সেখানেও হিসেব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, আসলে এই সময়ের মধ্যে চিন সোনা কিনেছে বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক কম। তাই সব মিলিয়ে, লগ্নিকারীরা মনে করেছেন, এই মুহূর্তে বাজারে উপচে পড়ছে সোনার জোগান। ফলে নেমে গিয়েছে গয়নার ধাতুর দরও।

Advertisement

(২) পোক্ত ডলার: ধীরে হলেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। তার দৌলতে দাম বাড়ছে ডলারের। সাধারণত শেয়ার বাজার বা ডলারের দর পড়লে, সোনার দাম বাড়ে। কারণ, তখন লগ্নির নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে ওই ধাতুতে টাকা ঢালেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখন ডলারের দর বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চাহিদা কমছে সোনার।

(৩) আমেরিকায় সুদ বাড়ার সম্ভাবনা: সেই ২০০৬ সালের পরে গত ১০ বছরে এই প্রথম এ বছর সুদ বাড়ানোর কথা বলেছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। আগামী বছরের গোড়ায় সুদ বাড়তে পারে ব্রিটেনেও। তাই লগ্নির নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে কদর কমছে সোনার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাঙ্কে সুদ বা়ড়লে, সোনায় লগ্নিতে ভাটা পড়ে। তার উপর যদি খোদ ফেড রিজার্ভই সে কথা বললে তার প্রভাব তো সোনার দামে পড়বেই।

সোনার দর অবশ্য কমছে বেশ কিছু দিন ধরেই। গত এক মাসে তা কমেছে ৮%। ভারতে সোনার দাম নির্ভর করে বিশ্ব বাজারে তার ওঠা-নামার উপর। তাই দর কমেছে এখানেও। অনেকের মতে, এটা সোনা কেনার সুবর্ণ সুযোগ।

জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখের দাবি, ‘‘বিশ্ব বাজারে ২৩ জুন প্রতি ট্রয় আউন্স সোনা ছিল ১,১৯৩.৭০ ডলার। সম্প্রতি তা নামে ১,০৯৩ ডলারে। কিন্তু দর ১,০৮০ ডলারের নীচে নামবে না। কারণ ওই বার তৈরির খরচই ১,০৮০ ডলার।’’

স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘২০১৩ সালের শেষে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম উঠেছিল ৩৩,০০০ টাকায়। সোমবার তা হয়েছে ২৫,৬৬০ টাকা। অর্থাৎ, দু’বছরেরও কম সময়ে দাম কমেছে প্রায় ৩৯%। বিশ্ব বাজারের জেরে দাম (প্রতি ১০ গ্রামে) হয়তো আরও ২৫০-৩০০ টাকা কমবে। কিন্তু মল মাস কেটে বিয়ে ও উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় এ বার তা কিছুটা বাড়তেও পারে।’’ ফলে এখনই সোনা কেনার সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন