খোঁজ।
লগ্নির নিরাপদ গন্তব্যের।
লগ্নিকারীদের (বিশেষত বিদেশি) আস্থা বজায় রাখতে নতুন মুখের।
আর টালমাটাল বিশ্ব বাজারেও বিনিয়োগ টানার বিকল্প রাস্তার।
ব্রিটেন গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার পক্ষে রায় দেওয়ার পর থেকে জোরদার হয়েছে এই তিনের খোঁজ। যার দৌলতে প্রথম ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে চড়চড়িয়ে বাড়ছে সোনার দর। শুক্রবার ও সোমবার মিলিয়ে লন্ডনের বাজারে তা বেড়েছে গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রঘুরাম রাজনের উত্তরসূরি ঘোষণা করতে চাইছে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রের খবর, আরবিআই গভর্নর পদের জন্য নাকি প্রাথমিক ভাবে বাছাইও করা হয়েছে চার জনকে।
আর তৃতীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনে মোটা অঙ্কের মূলধন জোগাড়ের জন্য ‘রুপি’ বা ‘মশলা’ বন্ডের দিকে আরও বেশি করে ঝুঁকতে পারে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থা। সেই বন্ড, যার বিক্রি বিদেশে কিন্তু দাম টাকায়। মূলধন সংগ্রহের বিকল্প রাস্তা হিসেবে সম্প্রতি এই ধরনের ঋণপত্র ছাড়তে আগ্রহও দেখিয়েছে এইচডিএফসি, এন টি পি সি, ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি। প্রস্তুতি শুরু করেছে আদানি গোষ্ঠীও।
ব্রিটেন ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দেওয়ায় এই মুহূর্তে টালমাটাল বিশ্ব বাজার। এই অবস্থায় বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে রঘুরাম রাজনের মতো আস্থাভাজন মুখ সেপ্টেম্বরে গভর্নর পদ থেকে সরে যাওয়া যে দেশের অর্থনীতির পক্ষে ভাল খবর নয়, তা বিলক্ষণ আঁচ করতে পারছে কেন্দ্র। সেই কারণে রাজনের উত্তরসূরির নামও তড়িঘড়ি ঘোষণা করতে চাইছে তারা। যাতে লগ্নিকারীরা কিছুটা আশ্বস্ত হন।
সরকারি সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে বাছাই তালিকায় রয়েছেন— (১) জানুয়ারিতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর পদে মেয়াদ বাড়া উর্জিৎ পটেল (২ ও ৩) দুই প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর রাকেশ মোহন ও সুবীর গোকর্ণ (৪) স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য।
অনেকে বলছেন, দীর্ঘ দিন ঋণনীতি নির্ধারণে যুক্ত থাকায় এর মধ্যে পটেলের পাল্লা কিছুটা ভারী। বৃদ্ধির হার বাড়াতে বরাবরের আগ্রহ এবং কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়ক সচিবের অভিজ্ঞতা থাকায় পিছিয়ে নেই রাকেশ মোহনও। আর যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ না-থাকলেও অরুন্ধতীদেবীকে নাকি স্টেট ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদেই আরও এক বছর দেখার সম্ভাবনা বেশি।
কেন্দ্র যেমন রাজনের উত্তরসূরির খোঁজে হন্যে, তেমনই টালমাটাল বিশ্ব বাজারে বিনিয়োগের নিরাপদ জায়গা খুঁজছেন লগ্নিকারীরাও। আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত-সহ এশিয়ার শেয়ার বাজার অস্থির। হু হু করে পড়ছে পাউন্ডের দর। এই অবস্থায় লগ্নির নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে সারা পৃথিবীতেই কদর বাড়ছে সোনার। শুক্রবার ৮.১% বাড়ার পরে সোমবারও লন্ডনের বাজারে প্রতি আউন্স পাকা সোনার দাম বেড়েছে ০.৮%। পৌঁছে গিয়েছে ১,৩২৫.৭৯ ডলারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দুনিয়ার এক বড় অংশে সুদ এখনও শূন্যের নীচে। এখনই ফের তা বাড়ানোর ঝুঁকি নেবে না মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেড রিজার্ভ। শেয়ার বাজার অস্থির। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে কদর বাড়ছে সোনার।
এ দিন কলকাতার বাজারেও প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম বেড়েছে ২০৫ টাকা। স্থানীয় সোনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, একে বিশ্ব বাজারে সোনার দর বাড়ছে। তার উপর দাম বাড়ছে ডলারের। ফলে দুই মিলিয়ে দেশে সোনার দাম বাড়ারই কথা। বিয়ের মরসুম হওয়া সত্ত্বেও এখনও চাহিদা তেমন নেই। নইলে আগামী দিনে দর আরও বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা।