টেলি শিল্পে চাকরি যাচ্ছে, মানল কেন্দ্র
Business News

ছাঁটাই কর্মীদের কাজের আশ্বাস

টেলিকম সচিব অরুণা সুন্দররাজন দাবি করলেন, টেলিকম শিল্পে যে কর্মীদের চাকরি যাচ্ছে, তাঁদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে কোমর বেঁধেছে সরকার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০৩:০১
Share:

অরুণা সুন্দররাজন

এক দিকে স্পেকট্রাম কেনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে ঘাড়ে বিপুল ধারের বোঝা। অন্য দিকে টেলি পরিষেবার বাজারে রিলায়্যান্স জিয়ো পা রাখার পরে মাসুলের লড়াইয়ে ‘রক্তাক্ত’ আর্থিক অবস্থা। দুইয়ের চাপে জেরবার অনেক সংস্থা তাই টিকে থাকতে হয় একে অপরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, নয়তো ঝাঁপ বন্ধ করে পাট গুটোচ্ছে। আর তারই জেরে কাজ হারাচ্ছেন বহু কর্মী। যে অভিযোগ শুক্রবার কার্যত স্বীকার করে নিল কেন্দ্র। টেলিকম সচিব অরুণা সুন্দররাজন দাবি করলেন, টেলিকম শিল্পে যে কর্মীদের চাকরি যাচ্ছে, তাঁদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে কোমর বেঁধেছে সরকার।

Advertisement

এ দিন সুন্দররাজনের আশ্বাস, এই শিল্পে যাঁরা একেবারে নীচের স্তরে কাজ করেন, প্রথমেই তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। যে তালিকায় রয়েছেন মূলত বিভিন্ন দোকানে (টেলিকম) কর্মরতরা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই আমজনতার জন্য ওয়াই-ফাই (পাবলিক ওয়াই-ফাই) পরিষেবা বা ভারতনেট কর্মসূচির মতো প্রকল্পে নতুন কাজের সুযোগ তৈরির চে‌ষ্টা চলছে বলে জানান সচিব। সেই সঙ্গে অরুণার দাবি, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের যোগ্য করে তুলতে দক্ষতা বাড়ানোর পথও নিচ্ছে সরকার। যাতে তাঁদের নতুন চাকরি পাওয়া সহজ হয়।

বস্তুত, বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েই এক সময় দিল্লির মসনদে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অথচ দু’লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি করতেই এখন হিমসিম দশা। উল্টে নোটবন্দি, তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর মতো পদক্ষেপে ছোট ও মাঝারি শিল্প ধাক্কা খাওয়ায় বহু কাজ হারানোর অভিযোগ ইতিমধ্যেই বিঁধেছে তাঁর সরকারকে। সঙ্গে যোগ হয়েছে মার্কিন ভিসা নীতিতে কড়াকড়ির গেরো। যা অনিশ্চিত করেছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্মসংস্থানকে। এই অবস্থায় টেলি শিল্পে ছাঁটাই হতে থাকলে, তা যে তাদের অস্বস্তি বাড়াবে, সেই বিষয়টি বিলক্ষণ বুঝছে কেন্দ্র। বিশেষত লোকসভা ভোট যেখানে শিয়রে।

Advertisement

তার উপর কিছু দিন আগেই একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছে, জিয়ো সস্তার পরিষেবা নিয়ে বাজারে পা রাখার পরেই কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। এয়ারটেল টেলিনরকে কিনে নেওয়ায় নরওয়ের ভারতীয় শাখায় বহু কর্মীর চাকরি গিয়েছে বলেও খবর।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, তাই নতুন করে যাতে টেলি শিল্পে আর কাজ খোয়ানোর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় কেন্দ্র। যে কারণে এ দিন সোজা-সাপ্টা বিকল্প কর্মসংস্থানের বার্তা দিয়েছেন সুন্দররাজন। এর আগে খসড়া টেলিকম নীতিতেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি প্রাধান্য পাচ্ছে বলে জানিয়েছিল তারা। তুলে ধরা হয়েছিল ৪০ লক্ষ নতুন কাজের হিসেব।

টেলি শিল্পের একাংশের দাবি, দেরিতে হলেও কাজ হারানোর কথা শেষমেশ মেনে নেওয়া কেন্দ্রের পক্ষে অন্তত মন্দের ভাল। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘এই অবস্থা তৈরি হল কেন? কারাই বা এর জন্য দায়ী?’’ এক কর্তার আবার অভিযোগ, এমন পরিস্থিতি এড়াতে সংস্থাগুলির আয় বাড়ানো কিংবা স্পেকট্রাম, লাইসেন্স ফি-র খরচ কমানোর দিকে আগেই নজর দেওয়া উচিত ছিল সরকারের।

প্রশ্ন উঠে আসছে আরও কিছু। যেমন, এত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার! তা হলে তত দিন কী করে চলবে?

তবে টেলিকম সচিবের এ দিনের ‘স্বীকারোক্তি’ দেখে শিল্পের একাংশের কটাক্ষ, ‘‘কেন্দ্র তো নতুন কাজ তৈরির কথা বলেছিল। আর এখন জনসমক্ষে স্বীকার করতে হচ্ছে কাজ হারানোর কথা। ফলে নতুন কাজ দূর অস্ত্‌। এখন পুরনো কাজ ধরে রাখতেই তো নতুন ভাবনার কথা বলতে হচ্ছে তাদের!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন