কর বসেছে ভারতে। কিন্তু তা ঘুম কেড়েছে পড়শি মুলুকের! তা-ও এমন প্রতিবেশী, এই মুহূর্তে চিনের সঙ্গে ‘টক্করে’ যাকে পাশে পাওয়া একান্ত জরুরি। আর সেই কারণেই পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ায় বিপাকে পড়া ভুটানের অসুবিধা দূর করতে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে সাউথ ব্লক।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সম্প্রতি থিম্পু দিল্লিকে জানিয়েছে যে, ভারতে জিএসটি চালু হওয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে তারা। ভুটানের আশঙ্কা, জিএসটি-র কারণে শুধু তাদের দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়েই (২০১৮ থেকে ২০২৩) ক্ষতি হতে চলেছে অন্তত ১,৪০০ কোটি টাকার। শোনা যাচ্ছে, এ নিয়ে ইতিমধ্যে ভুটানের শিল্পমহলের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠকেও বসেছে সে দেশের সরকার।
পড়শির গুরুত্ব ও মাথাব্যথা বুঝে দ্রুত বিষয়টির সমাধান খুঁজছে দিল্লিও। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে বৈঠক করছে অর্থ মন্ত্রক। ভুটানের কাছে তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছে সমাধানসূত্র খোঁজার জন্য। এই সময়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি ভুটানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা।
কিন্তু ভারতে জিএসটি চালুর দরুন ভুটানের ক্ষতির কারণ কী?
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ভুটানের প্রায় ৯০% আমদানিই হয় ভারত থেকে। এ দেশ থেকে যে সমস্ত পণ্য সেখানে যায়, বন্ধুত্বের খাতিরে তাদের উৎপাদন শুল্ক মকুব করে দিল্লি। প্রথমে নেওয়া হলেও, পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয় থোক টাকা হিসেবে। ভুটানের আশঙ্কা, জিএসটি চালু হওয়ায় সেই সুবিধা আর মিলবে না। শুধু তার দরুনই ক্ষতি হবে ১,২০০ কোটির কাছাকাছি। অনেকে বলছেন, সম্প্রতি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য ওই একই ধরনের সুবিধা বহাল রাখার বন্দোবস্ত করেছে দিল্লি। কিন্তু রাজ্যের জন্য তা করা যতটা সহজ, তা প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রে করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভুটানের জন্য আলাদা ভাবে ছাড় দেওয়া তো সম্ভব নয়। তাহলে আইন পাল্টাতে হবে। তাই বর্তমান আইনের মধ্যে থেকেও কতটা কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছে সে জন্যই।’’
তা ছাড়া থিম্পুর আশঙ্কা, জিএসটির দরুন এমন বেশ কিছু পণ্যের দাম কমবে, যা তাদের দেশে আমদানি হয়। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে সেগুলির আমদানি আরও বাড়বে। কমতে শুরু করবে তাদের ভারতীয় মুদ্রার ভাঁড়ার।
শুধু তা-ই নয়। ভুটান মনে করছে, সেখান থেকে যে সমস্ত পণ্য ভারতে আসে, জিএসটির দৌলতে তার মধ্যে অনেকগুলির বাজার ধরে রাখা শক্ত হবে। যুক্তি হিসেবে তাদের উদাহরণ, এত দিন পশ্চিমবঙ্গে কোনও ব্যবসায়ী কোনও পণ্য ভুটান থেকে আমদানি করলে, তা হরিয়ানা থেকে সেটি আনার তুলনায় সস্তা হত। কিন্তু জিএসটি-জমানায় আর তা না-হওয়ারই সম্ভবনা। নিজেদের দেশের ব্যবসা মার খেলে ধাক্কা খাবে কর আদায়ও। আর এই সমস্ত কিছুর প্রভাব অর্থনীতির উপর পড়ার আশঙ্কা করছে থিম্পু।
ডোকা লা উপত্যকা নিয়ে চিনের সঙ্গে এখন পাঞ্জা কষছে দিল্লি। ফলে এই মুহূর্তে ভুটানকে পাশে পাওয়া ভারতের পক্ষে আরও বেশি জরুরি। বিশেষত যেখানে ভুটানে ভারতের প্রভাব কমাতে আদাজল খেয়ে নেমেছে চিন। এই অবস্থায় থিম্পুকে দিল্লির আশ্বাস, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান খুঁজছে তারা।
থিম্পুর চিন্তা
• ভারত থেকে ভুটানে যাওয়া পণ্যে উৎপাদন শুল্ক ছাড় মিলত। পরে ফেরত পাওয়া যেত সেই টাকা। জিএসটিতে সেই সুবিধা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা
• নতুন কর জমানায় ভারতীয় পণ্যের দর কমলে, তার আমদানি বাড়বে ভুটানে। হালকা হবে তাদের ভারতীয় মুদ্রার ভাঁড়ার
• ভুটান থেকে কমতে পারে এ দেশে পণ্য আমদানিও
• সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে ক্ষতি হতে পারে প্রায় ১,৪০০ কোটি টাকা
তথ্য সহায়তা: প্রেমাংশু চৌধুরী।