প্রথমে জিএসটি পরিষদ ও তারপরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বড় ও দামি গাড়ির উপর সেস ফের ১০% বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিল। শনিবার পরিষদ জানাল, ততটা না-হলেও বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে সেস বাড়ছে ২ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
আগেই সেস বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল গাড়ি শিল্প। শনিবার হায়দরাবাদে জিএসটি পরিষদের বৈঠকের পরে ফের দাবি করেছে, এর ফলে ধাক্কা খাবে এই ধরনের গাড়ির তৈরির ব্যবসা। এবং দামও বাড়বে সংশ্লিষ্ট গাড়িগুলির।
এত দিন ভারতে তৈরি গাড়ির উপর বিভিন্ন ধরনের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের কর ছাড়াও চাপত সেস। জিএসটিতে সার্বিক ভাবে সেই বোঝা কমে। কারণ সর্বোচ্চ সেসের হার ২৫% থেকে কমে হয় ১৫%। তাল মিলিয়ে গাড়ির দাম কমায় সংস্থাগুলি। গত মাসে ওই সেস ফের বাড়াতে জিএসটি পরিষদের প্রস্তাবের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংশোধনে সায় দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
এ দিন হায়দরাবাদে জিসএটি পরিষদের বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, ছোট (১২০০ সিসি-র পেট্রোল ও ১৫০০ সিসি-র ডিজেল ইঞ্জিন), ১৩ আসন বিশিষ্ট ও হাইব্রিড গাড়ির উপর মোট করের হার একই থাকছে। কিন্তু কর বাড়ছে মাঝারি (মিড), বড় (লার্জ) এবং এসইভি-র। তাঁর মতে, এ ধরনের গাড়ির দাম বেশি। সেই গাড়ি কেনার সাধ্য থাকলে তাই করের হারও বেশি হওয়া উচিত। তিনি অবশ্য আলাদা করে সেস-এর কথা বলেননি। তবে গাড়ি শিল্প সূত্রের দাবি, সেস-ই বাড়ছে।
প্রত্যাশা মতোই এই সিদ্ধান্তে অখুশি গাড়ি সংস্থাগুলি। মার্সিডিজ বেঞ্জ ইন্ডিয়ার এমডি তথা সিইও রোল্যান্ড ফোলগার এ দিন রাতে বলেন, ‘‘সেস বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। অর্থনীতি ও এই শিল্পে দামি গাড়ির ভূমিকাই খেয়াল করা হল না। সুষ্ঠু কর ব্যবস্থা থাকলে এই ব্যবসার বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ক্রমাগত কর চাপিয়ে ব্যবসায় ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে। গোটা বিশ্বে যেখানে যাত্রীবাহী গাড়ির মধ্যে এ ধরনের গাড়ির অংশিদারি বাড়ছে, ভারত তার ব্যতিক্রম। সেস বৃদ্ধির ফলে গাড়ির দাম বাড়বে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জিএসটি চালুর আগের দামের চেয়েও বেশি হবে।
ফলে জিএসটি ব্যবস্থার সুবিধাটাই খর্ব হয়ে যাবে।’’
সেস বাড়ছে
• মাঝারি (মিড) মাপের গাড়ি—২%
• বড় (লার্জ) গাড়ি– ৫%
• এসইউভি—৭%
কর একই
• ছোট গাড়ি (১,২০০ সিসি পর্যন্ত পেট্রোল ইঞ্জিন ও ১,৫০০ সিসি পর্যন্ত ডিজেল ইঞ্জিন)
• ১৩ আসন বিশিষ্ট গাড়ি
জিএসটি-র পরে করের হার কমায় গাড়ির দাম কমেছিল। তার ফলে বড় ও দামি গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায় আখেরে গাড়ি শিল্পের প্রসারই ঘটছিল বলে দাবি জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার ইন্ডিয়ার প্রধান রোহিত সুরি।
ভারতে বিএমডব্লিউ-এর শীর্ষ কর্তা বিক্রম পাওয়াহ বলেন, ‘‘দীর্ঘমেয়াদি কর সংস্কার ও নিয়মকানুন শিল্পের প্রসারের পক্ষে। জিএসটি-ও স্বাগত। কিন্তু এই সেস বৃদ্ধির ফলে দেশির গাড়ি শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’’ তাঁদের সঙ্গে সহমত আর এক দামি ও বড় গাড়ি নির্মাতা জার্মান বহুজাতিক অডি-ইন্ডিয়ার প্রধান রাহিল আনসারিও। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই ভারতে এ ধরনের গাড়ির করের হার চড়া। তিনি আরও বলেন, ‘‘তা ছাড়া এই শিল্পের উপর জিএসটি-র প্রকৃত প্রভাব মূল্যায়ণের জন্য ৬-১২ মাস পর্য়ালোচনা করা দরকার। তত দিন এই বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকুক।’’
তবে এসইউভি নির্মাতা দেশিয় সংস্থা মহিন্দ্রার এমডি পবন গোয়েনকা-র মতে, সেস বৃদ্ধি করে কার্যত জিএসটি-র আগের পর্যায়ে পৌঁছেছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির কর। তবে সর্বোচ্চ হারে (১০%) সেস বৃদ্ধি না করার জন্য জিএসটি পরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে গাড়ির মাপকাঠি ঠিক করা হয়েছে তার গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করে জানার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে সেস বৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটবে গাড়ির দামের ক্ষেত্রে।