জিএসটি-জট কাটার ইঙ্গিত অমিত, জেটলির

কাঁটা ছিল তিনটে। তার মধ্যে একটা সরলেও এখনও বাকি দু’টো। দশ বছর ধরে নানা জটে আটকে থাকার পরে কলকাতায় মঙ্গলবার সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গড়া ‘এমপাওয়ার্ড কমিটি’র বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে অন্তত বেশ কিছুটা এগিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৮:৫০
Share:

কলকাতায় অমিত মিত্রের সঙ্গে অরুণ জেটলি। মঙ্গলবার। –নিজস্ব চিত্র।

কাঁটা ছিল তিনটে। তার মধ্যে একটা সরলেও এখনও বাকি দু’টো।

Advertisement

দশ বছর ধরে নানা জটে আটকে থাকার পরে কলকাতায় মঙ্গলবার সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গড়া ‘এমপাওয়ার্ড কমিটি’র বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে অন্তত বেশ কিছুটা এগিয়েছেন তাঁরা। কারণ জিএসটি-র হার সংবিধান সংশোধনী বিলেই বেঁধে দেওয়ার যে-দাবি কংগ্রেসের ছিল তা খারিজ করার প্রস্তাব কমিটি মেনে নিয়েছে। পরে মডেল জিএসটি আইনের খসড়া বিলও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।

তবে দু’টি বিষয় নিয়ে এখনও আলোচনা বাকি। প্রথমত, করের হার কত হলে কোনও রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি হবে না, তার হিসেব কষতে জুলাইয়ে ফের রাজ্যগুলি আলোচনায় বসবে। দ্বিতীয়ত, দ্বন্দ্ব এড়িয়ে কর বসানোর উপর কেন্দ্র ও রাজ্যের অধিকার কী ভাবে কতটা বহাল থাকবে, তা নিয়েও পরের বৈঠকে আলোচনা হবে। কমিটির চেয়ারম্যান তথা এ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের দাবি, ব্যবসার পরিমাণ বার্ষিক ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে তার উপর রাজ্যেরই নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

Advertisement

রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ অবশ্য এ দিনও জানান যে, জিএসটি নিয়ে বিরোধিতা থেকে সরে আসতে নারাজ তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নীতিগত ভাবে জিএসটি-র বিরোধী নই। গোড়া থেকে সব তো আমরাই করেছি। যদি ওরা আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়, তা হলে তো বিল সংসদে পাশ হতে দু’মিনিটও লাগবে না।’’ গুলাম নবির অভিযোগ, ‘‘আসলে জিএসটি বিল পাশ হোক, সেটা বিজেপি চায় না। কারণ, নরেন্দ্র মোদী-ও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে এর বিরোধিতা করতেন।’’

এ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এমপাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পরে এ দিনই ছিল তাঁর প্রথম বৈঠক। বস্তুত, তৃণমূল কংগ্রেস নিঃশর্তে জিএসটি-তে সমর্থন জানানোয় এবং রাজ্যসভায় এনডিএ সাংসদদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এই বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ছিল বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিনের বৈঠকে ২২টি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ও ৭টি রাজ্যের সরকারি কর্তারা প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

কমিটির প্রথম দফার বৈঠকের পরে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা দাবি করেন, জট কাটার প্রয়াস ফলপ্রসূ হয়েছে। জেটলি বলেন, ‘‘তামিলনাড়ুর কিছু আপত্তি থাকলেও কার্যত সব রাজ্যই জিএসটি সমর্থন করেছে।’’

উল্লেখ্য, কংগ্রেসের আমলেই জিএসটি-র পরিকল্পনা নেওয়া হলেও মোদী জমানায় কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি তোলে তারা। যেমন, জিএসটির হারের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি সংবিধান সংশোধনী বিলেই রাখার দাবি তোলে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে পরে সেই হার বদলাতে হলে ফের সংবিধান সংশোধন করতে হত, যা জটিল বলেই দাবি এই মতের বিরোধীদের। বস্তুত, এ দিন এই বিতর্কে ইতি টানেন জেটলি। কংগ্রেসের সেই দাবি খারিজ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এমন কিছু করার প্রয়োজন নেই বলেই এ দিনের বৈঠকে সম্পূর্ণ সহমত মিলেছে। কারণ ভবিষ্যতে হঠাৎ হার বদলের প্রয়োজন হতে পারে। বিষয়টি জিএসটি পরিষদের উপর ছেড়ে দেওয়াই সবচেয়ে ভাল।’’ কংগ্রেস শাসিত মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী মুকুল সাংমা অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

অন্য দিকে, পণ্য উৎপাদনকারী রাজ্যের উপর অতিরিক্ত ১% কর বসানোর প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যগুলির একাংশের আপত্তি ছিল। জেটলি জানিয়েছেন, এ নিয়ে তিনি নমনীয় হতে রাজি।

প্রথম পাঁচ বছরে রাজস্ব ক্ষতি হলে তা পুষিয়ে দেওয়ার দায়ও কেন্দ্রের, ফের আশ্বাস দিয়েছেন জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যগুলির এই উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।’’ তবে এ দিনের বৈঠকে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈত অধিকারের আওতা থেকে ১.৫ কোটি টাকার বার্ষিক ব্যবসা বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত হওয়ায় ছোট ও মাঝারি শিল্প উপকৃত হবে বলে দাবি করেন অমিতবাবু।

প্রসঙ্গত, ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করার কথা বাজেটে বলেছিলেন জেটলি। লোকসভায় এ জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে রাজ্যসভায় তা পাশ করাতে পারেনি কেন্দ্র। ফলে আঞ্চলিক দলগুলির উপর তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এ দিন অন্তত একটা কাঁটা সরে যাওয়ার পরে জেটলি জানান, বাদল অধিবেশনে সংশোধনীটি পাশের চেষ্টা করবেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের জিএসটি আইন বছর শেষেই তৈরি হবে। তারপর আন্তঃ-রাজ্য জিএসটি আইন তৈরি করতে হবে কেন্দ্রকে। এ দিনের বৈঠকে এই সব বিষয় নিয়ে জিএসটি বিলের খসড়াও পেশ করা হয় কমিটির সদস্যদের কাছে, যাতে তাঁরা সায় দেন।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সমস্ত অনলাইন কেনাকাটা জিএসটি-র আওতায় আসবে। সে ক্ষেত্রে ‘ফার্স্ট পয়েন্ট অব ফিনান্সিয়াল ট্রানজাকশন’ বা প্রথম লেনদেনে ওই কর বসবে। ই-কমার্স সংস্থা পণ্য বিক্রেতার কাছ থেকে কর কেটে নিয়ে তা জমা দেবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে সার্বিক ভাবে রাজ্যগুলিতে ৯ লক্ষ টাকা বা তার বেশি ব্যবসা হলে জিএসটি বসবে। তবে সিকিম ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য তা ৪ লক্ষ টাকা। জিএসটি ফাঁকি দিলে জরিমানা ও পাঁচ বছর পর্ষন্ত জেল হবে।

বৈঠকে জট কিছুটা কাটায় ও খসড়া প্রকাশ হওয়ায় খুশি শিল্পমহল। সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যো -পাধ্যায় বলেন, ‘‘জিএসটি বাস্তবায়ন এক ধাপ এগোল। আসন্ন বাদল অধিবেশনের পরে তা চালু করার পথে হাঁটা সম্ভব হবে বলেই আশা শিল্পমহলের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন