জিএসটি কী? সস্তা হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য?

আজ মাঝরাতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে চালু হতে চলেছে জিএসটি। পর্দা উঠতে চলেছে দেশের বৃহত্তম কর সংস্কারের উপর থেকে। কিন্তু আদপে জিনিসটি কী? তার আঁচ হেঁশেলে পড়বে? সস্তা হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য? না কি ছ্যাঁকা খেতে হবে বাড়তি দামের? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজাররোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে সমস্ত পণ্য-পরিষেবা ব্যবহার করেন, তার প্রায় সবেরই দাম নির্ভর করবে এই করের উপর। তা সে উড়ানের টিকিট হোক বা প্যাকেটবন্দি আটা। রেস্তোরাঁর বিল থেকে শুরু করে মোবাইলের রিচার্জ— জিএসটির হাত থেকে আর আপনার নিস্তার নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০২:৩৯
Share:

জিএসটি-র জন্য দেশ তৈরি তো?

প্রশ্ন: জিএসটি কী?

Advertisement

পুরো নাম গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা পণ্য-পরিষেবা কর। সংক্ষেপে জিএসটি।

প্র: এ নিয়ে এত শোরগোল কেন?

Advertisement

স্বাধীনতার পরে পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় এত বড় সংস্কার আর হয়নি। এ নিয়ে কথা শুরু হয়েছিল ১৭ বছর আগে! সেই অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানায়। মাঝে কখনও কোনও দল বেঁকে বসেছে। কখনও বেঁকে বসেছে কোনও রাজ্য। শেষমেশ বিস্তর দর কষাকষি আর আলাপ-আলোচনার পরে তা চালু হতে চলেছে আজ।

প্র: আমার আয়কর কমবে?

না। আয়করের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

প্র: তাহলে কীসের মাথাব্যথা?

রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে সমস্ত পণ্য-পরিষেবা ব্যবহার করেন, তার প্রায় সবেরই দাম নির্ভর করবে এই করের উপর। তা সে উড়ানের টিকিট হোক বা প্যাকেটবন্দি আটা। রেস্তোরাঁর বিল থেকে শুরু করে মোবাইলের রিচার্জ— জিএসটির হাত থেকে আর আপনার নিস্তার নেই।

প্র: কীসের দাম বাড়বে-কমবে?

এখনই হলফ করে এই তালিকা দেওয়া শক্ত। কেন্দ্রের দাবি, দাম কমবে বহু পণ্য-পরিষেবার। যেমন—

চাল, গম-সহ প্রায় সমস্ত খাদ্যশস্য, ডাল, আটা, ময়দা, বেসন, পূজা সামগ্রী, দুধ, তাজা শাকসব্জি, ফল, মুড়ি, নুন, জৈব সার, উল, চিনি, চা, কফি, গুঁড়ো দুধ, স্মার্ট ফোন, বস্তাবন্দি সিমেন্ট ইত্যাদি।

আরও পড়ুন:জিএসটি নিয়ে মধ্যরাতের অধিবেশন বয়কট করছে কংগ্রেসও

অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক থেকে ইউনানি— প্রায় সব রকম ওষুধ তৈরির উপকরণ, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি কেবল্‌ টিভি পরিষেবা, ডিটিএইচ ইত্যাদি।

উল্টো দিকে, তেমনই শিল্পমহলের দাবি, দাম বাড়বেও বেশ কিছু জিনিসের। যেমন, কম ও মাঝারি দামের গাড়ি, মোবাইলে টাকা ভরার খরচ, বিমার প্রিমিয়াম, ফ্রিজ-টিভির মতো বৈদ্যুতিন পণ্য, দামি হোটেলের ভাড়া, সোনার গয়না ইত্যাদি।

অর্থাৎ, কিছু জিনিসের দাম বাড়বে। কমবেও কিছু পণ্য-পরিষেবার। যদিও শেষমেশ কী হবে, তা বোঝা যাবে জিএসটি চালু হলে।

প্র: তা হলে সুবিধা কোথায়?

সুবিধা হওয়ার কথা আসলে শিল্প আর ব্যবসার। কারণ, জিএসটি চালুর সঙ্গে-সঙ্গে একলপ্তে ১৪টি কর, সেস ও সারচার্জ উধাও হয়ে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে— কেন্দ্রের নেওয়া উৎপাদন শুল্ক, পরিষেবা কর, আমদানি শুল্কের একটি অংশ (যাকে বলে কাউন্টারভেলিং‌ ডিউটি) ইত্যাদি।

আছে রাজ্যের সংগৃহীত যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট), কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর, ক্রয় কর, বিলাস কর, বিনোদন কর (পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনের বসানো ছাড়া), প্রবেশ কর, বিজ্ঞাপন কর ইত্যাদিও। উঠে যাবে রাজ্যের চাপানো সেস, সারচার্জও। এখন এই সবকিছুর আওতায় যা যা পড়ে, তার প্রায় সবই ঢুকবে জিএসটি-র চৌহদ্দিতে।

প্র: তা হলে বসবে কী?

প্রতি ক্ষেত্রেই পণ্য বা পরিষেবা যেখানে জোগান দেওয়া তথা কেনা-বেচা হচ্ছে, জিএসটি বসবে সেখানে। তা চার নামের হতে পারে:

(১) কেন্দ্রের বসানো জিএসটি (সিজিএসটি)

(২) রাজ্যের বসানো জিএসটি (এসজিএসটি)

(৩) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বসানো জিএসটি (ইউটিজিএসটি)

(৪) ইন্টিগ্রেটেড বা সম্মিলিত জিএসটি (আইজিএসটি)

পণ্য বা পরিষেবা বেচা-কেনা একটি রাজ্যের মধ্যেই হলে, বসবে সিজিএসটি ও এসজিএসটি। কিন্তু একাধিক রাজ্যে হলে, আইজিএসটি।

ধরুন, কোনও রাজ্যের মধ্যেই একটি পণ্য কেনা-বেচা হচ্ছে। তার উপর জিএসটি ১৮%। সে ক্ষেত্রে ৯% সিজিএসটি হিসেবে কেন্দ্রের ঘরে জমা পড়বে। বাকি ৯% এসজিএসটি হিসেবে যাবে রাজ্যের ঘরে।

কিন্তু মহারাষ্ট্রে কেনা কোনও পণ্য পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি হলে, শুরুতেই আইজিএসটি দিতে হবে। কেন্দ্রের দাবি, পরে এখানে এনে তা বিক্রির সময় সিজিএসটি ও এসজিএসটি মেটালে, আগের কর (আইজিএসটি) ফেরত পাবেন ব্যবসায়ী।

করের হার ছয়টি (শূন্য, ০.২৫%, ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%)।

প্র: এখনকার সঙ্গে ফারাক?

একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে—

বিস্কুট তৈরিতে ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি ইত্যাদি লাগে। এই প্রতিটির উপর কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক বসে। কাঁচামাল হিসেবে কেনার সময় তা প্রথমে মেটাতে হয় বিস্কুট উৎপাদনকারীকে। সেটি তাদের দামের মধ্যেই ধরা থাকে। এর পর যখন সেই বিস্কুট তিনি কারখানা থেকে কর গুনে বার করেন (ক্লিয়ারেন্স), তখন সেই আগে মেটানো করের টাকা সরকারের থেকে ফেরত পান। একই ভাবে পরে ফেরত পান পরিষেবা করের টাকাও।

এই পর্যন্ত তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু এর পরে যেই কেন্দ্রের কর মিটিয়ে কারখানা থেকে বিস্কুট বেরোল এবং বিক্রি করা হল, তখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে তার জন্য ভ্যাট দিতে হবে। গোলমাল শুরু তখন থেকেই।

কারণ, রাজ্যের যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) বসবে বিস্কুটের দামের উপর। যার মধ্যে ধরা রয়েছে কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক এবং পরিষেবা করও। কিন্তু এ বার লেনদেন রাজ্যের সঙ্গে হওয়ায় ওই কেন্দ্রীয় কর কিন্তু বিস্কুট উৎপাদক আর ফেরত পান না।

ধরুন, বিস্কুটের প্যাকেটের দাম ১২০ টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা কর ১০ টাকা করে মোট ২০ টাকা। এখন রাজ্যে ভ্যাট ১০% হলে, বিস্কুটের প্যাকেটে ওই কর গুনতে হবে (১২০x১০%)= ১২ টাকা। কিন্তু এর মধ্যে ২ টাকা যুক্তমূল্য কর আসলে গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা কেন্দ্রীয় করের জন্য। তার মানে, করের উপর ফের কর চাপছে। জিএসটি জমানায় এই সমস্যা থাকবে না। আগের স্তর পর্যন্ত মেটানো কর (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট) ফেরত মিলবেই।

প্র: তা হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ কেন?

কারও আপত্তি করের হার বেশি বলে। অনেকে বলছেন, তাঁরা তৈরি নন এখনও। সড়গড় নন কম্পিউটার ও নেট ব্যবহারে। নতুন কর ও তার রিটার্ন জমা দিতে যা লাগবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন