সুদ কমা শুরু হয়েছে নতুন আর্থিক বছরের প্রথম দিন থেকেই। দিন পাঁচেক যেতে না-যেতেই ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এর প্রভাবে ব্যাঙ্কগুলিও ঋণ এবং জমার উপর সুদ কমানোর পথে হাঁটছে। যাঁদের বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদি কেনার জন্য ঋণ নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, তাঁদের কিন্তু বড় লোকসান হবে জমায় সুদ কমলে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের। শিল্প-ঋণে সুদ কমলে উৎপাদন খরচ কমার কথা। দাম কমলে বাড়ার কথা চাহিদার। এতে শিল্প চাঙ্গা হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। এ সব হলে তো ভালই। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধাপে ধাপে সুদ কমানো সত্ত্বেও এই সব সুফলের তেমন দেখা মেলেনি। সরকারের দাবি এবং বাস্তবের মধ্যে ফারাক বেশ প্রকট। শুধুমাত্র জিডিপি বা জাতীয় আয় বাড়লে কাজ হবে না। দেখতে হবে সুদ কমার পাশাপাশি যেন কমে খাদ্য, ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। এবং বাড়ে কর্মসংস্থান। বাস্তবে এগুলি ঘটলে সুদ হ্রাসে সায় পাওয়া যাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও।
ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ কমায় মানুষকে অন্যত্র লগ্নির সন্ধান করতে হচ্ছে, যেখানে কিছুটা হলেও বেশি সুদ পাওয়া যায়। এতে হয়তো সুরক্ষার সঙ্গে কিছুটা আপস করতে হবে। তা হলেও মানুষ বাধ্য হয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে চান কোথায় কী সুযোগ আছে এবং তাতে ঝুঁকিই বা কতটা। অনেকে সরকারি ব্যাঙ্ক ছেড়ে ছোট মাপের এবং নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে শুরু করেছেন। কোনও কোনও মেয়াদে এখানে ১ শতাংশ বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে। বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের একাংশ কেউ কেউ রাখছেন বিভিন্ন গৃহঋণ সংস্থা এবং অন্যান্য বেসরকারি অর্থ-সংস্থায় (এনবিএফসি)। এই সব জায়গায় মাসিক আয় প্রকল্পেও যোগদানের সুযোগ আছে। এদের অনেকেরই জমা প্রকল্পের ক্রেডিট রেটিং করানো হয়। রেটিং দেখে আন্দাজ পাওয়া যায়, ওই সব প্রকল্পে আপনার টাকা কতটা সুরক্ষিত। ‘এএএ’ এবং ‘এএ+’ রেটিংযুক্ত প্রকল্পে ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম। এই ধরনের কিছু প্রকল্পের তথ্য সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল। এখান থেকে প্রাপ্ত সুদের পুরোটাই করযোগ্য।
এ ছাড়া টাকা রাখা যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের ঋণ নির্ভর প্রকল্প বা ডেট ফান্ডে। এখানে কম-বেশি ৮ শতাংশ আয় আশা করা যেতে পারে। করছাড়ের সুবিধা হল এখানে টাকা রাখার বড় সুবিধা। ডেট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত আয়/ডিভিডেন্ড প্রাপকের হাতে থাকে পুরোপুরি করমুক্ত। যাঁরা ডিভিডেন্ড না-নিয়ে বৃদ্ধি বা গ্রোথ-এর সুযোগ নিতে চান, তাঁরা লগ্নির পরে তিন বছর ধরে রেখে বিক্রি করলে যা-লাভ হবে, তার উপর মূল্যবৃদ্ধি সূচক প্রয়োগের সুযোগ পাবেন এবং এর ফলে তাঁদের মূলধনী লাভের পরিমাণ অনেকটাই নেমে আসবে এবং সেই কারণে করও দিতে হবে নামমাত্র। ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্রকল্প বা এফএমপি ছাঁচে ফেলা এই ধরনের একটি প্রকল্প। প্রকল্পগুলির মেয়াদ ৩ বছর বা তার থেকে একটু বেশি। এই ধরনের প্রকল্পে সংগৃহীত অর্থ এমন সব ঋণপত্রে লগ্নি করা হয়, যাদের মেয়াদ শেষ হবে ৩ বছরের মধ্যে। এখানে অবশ্য মাসিক বা নিয়মিত আয় সম্ভব নয়। বেশির ভাগ মিউচুয়াল ফান্ড এফএমপি নিয়মিত ইস্যু করে থাকে। ফান্ডগুলির ওয়েবসাইটে এই ধরনের প্রকল্পের সন্ধান করা যায়। যে সব এফএমপি-র টাকা উঁচু রেটিংযুক্ত ঋণপত্রে লগ্নি করা হয়, শুধু মাত্র সেখানেই টাকা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
উঁচু হারে করদাতারা আর যেখানে টাকা রাখতে পারেন, তা হল করমুক্ত বন্ড। এই ধরনের বন্ডের সরাসরি ইস্যু এখন আর নেই। অর্থাৎ কিনতে হলে তা এখন কিনতে হবে বাজার থেকে। এতে কিছুটা প্রিমিয়াম পড়লেও এই বন্ড বাবদ আয় দীর্ঘ মেয়াদে (১০, ১৫ অথবা ২০ বছর) করমুক্ত থাকবে। ব্যাঙ্কের সুদ যদি ভবিষ্যতে আরও কমে, তবে করমুক্ত বন্ডের বাজার দর বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। অর্থাৎ মাঝপথে বিক্রি করে আপনার কিছু মূলধনী লাভও হতে পারে। বাজার থেকে এই বন্ড কিনতে হলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। শেয়ারের মতোই ব্রোকারের মাধ্যমে মুম্বই বাজার এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কেনা যায় করমুক্ত বন্ড।
চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে যাবে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা। নামী কোম্পানিগুলির মধ্যে আমরা প্রথমেই হাতে পাব অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের ফলাফল। এই ফলাফলের বড় প্রভাব পড়বে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তথা গোটা শেয়ার বাজারের উপর। এর পর এক এক করে ফল প্রকাশ করবে বাকি সবাই। অর্থাৎ টানটান উত্তেজনা থাকবে
আগামী দিনগুলিতে।