রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন ইতিমধ্যেই সুদের হার কমানোর ব্যাপারে তাঁর ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার বেসরকারি ক্ষেত্রে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এক ধাক্কায় ঋণে মূল সুদ বা বেস রেট ৩৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। ফলে তাদের সুদের হারই এই মুহূর্তে ব্যাঙ্ক শিল্পে সব থেকে কম। রাষ্ট্রায়ত্ত কানাড়া ব্যাঙ্কও তার বেস রেট ১০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করেছে ৯.৯০%। এ দিনই বিভিন্ন মেয়াদের আমানতে সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমিয়েছে বেসরকারি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এই বেসরকারি ব্যাঙ্ক শীঘ্রই ঋণেও সুদ কমাবে বলে ইঙ্গিত সংশ্লিষ্ট মহলের। কারণ, অনেক সময়েই আমানত সংগ্রহের খরচ কমিয়ে ঋণে সুদ ছাঁটাই করে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কিং মহলের ধারণা, এ বার অন্যরাও একে একে সুদ কমানোর পথে হাঁটবে।
সোমবার এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক বেস রেট ৩৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯.৩৫% করেছে। আজ থেকেই চালু হচ্ছে নতুন হার। এত দিন দেশের প্রথম তিনটি বড় ব্যাঙ্কের বেস রেটই ৯.৭০% ছিল। ওই তিনটি ব্যাঙ্ক হল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। সুদ কমানোর দৌড়ে আপাতত স্টেট ব্যাঙ্ক এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ককে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক।
এ প্রসঙ্গে ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর জে কে গর্গ জানিয়েছেন, ‘‘সুদ কমানোর বিষয়টি আমাদের মাথায়ও রয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্যাঙ্কের অ্যাসেট লায়াবিলিটি কমিটি (অ্যালকো) বৈঠকে বসবে, সেখানেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ সব ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেই ঋণ ও আমানত উভয়ের উপরেই সুদ কমার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন ব্যাকিং বিশেষজ্ঞরা। গর্গ বলেন, ‘‘ঋণে সুদ কমাতে হলে তহবিল সংগ্রহের খরচও কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে কমতে পারে আমানতে সুদের হারও।’’
অবশ্য ব্যাঙ্কে সুদের হার নিয়ে রাজন সম্প্রতি যে-সব মন্তব্য করেছেন, তা থেকে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ইতিমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক আরবিআইয়ের কাছ থেকে ঋণ নেয়) পর পর তিন দফায় ২৫% করে মোট ৭৫% কমিয়েছ। এর ফলে ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের তহবিল সংগ্রহের খরচ বেশ কিছুটা কমেছে। তাই সুদ কমানোর জায়গায় তারা রয়েছে বলে মত রাজনের। বরং ব্যাঙ্কগুলি সেই ভাবে সুদের হার না-কমানোয় অনেক সময়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাজন।
আগামী ঋণনীতিতে ফের সুদ কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। কারণ, কেন্দ্র, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সুদের হার কমানোর পক্ষে লাগাতার সওয়াল করে চলেছেন। এ ছাড়া রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশেষ কমিটির সিংহভাগ সদস্যই সুদ কমানোর ব্যাপারে রায় দিয়েছে।
তা ছাড়া চিন সম্প্রতি তাদের মুদ্রা ইউয়ানের মূল্য হ্রাস করেছে। এর ফলে শুধু বিদেশের রফতানির বাজারেই নয়, দেশের মধ্যেও ভারতীয় শিল্পকে চিনা পণ্যের সঙ্গে চরম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভারতীয় শিল্পের পক্ষে উৎপাদন খরচ কমানো জরুরি। তাই সুদ কমিয়ে তাদের মূলধন সংগ্রহের খরচ কমানোর ব্যাপারে সাহায্য করার তাগিদও রয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ককে শিরোপা। সমগ্র ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এই দু’টি ব্যাঙ্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (সিস্টেমিক্যালি ইমপর্ট্যান্ট) বলে চিহ্নিত করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কোনও মতেই যাতে তারা ক্ষতির মুখে না-পড়ে সে জন্য এই দুই ব্যাঙ্ককে সতর্ক থাকতেও বলল আরবিআই।