ভোঁতা অস্ত্রে ডিজিটাল বিপ্লব

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগান থেকে নোটবন্দির প্রাপ্তি—সাড়ে চার বছরে সর্বত্র ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন ফেরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪৯
Share:

ত্রিমূর্তি: ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে (বাঁ দিক থেকে) রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানী, আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর কর্ণধার কুমার মঙ্গলম বিড়লা এবং ভারতী এন্টারপ্রাইজেসের চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তল। ছবি: পিটিআই।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগান থেকে নোটবন্দির প্রাপ্তি—সাড়ে চার বছরে সর্বত্র ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন ফেরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির হাত ধরে দেশ বদলানোর কথা। কিন্তু মূলত যে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সেই স্বপ্ন ধাওয়া করার কথা, সেই টেলিকম শিল্পের বিবর্ণ ছবি ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসের মঞ্চে তুলে ধরলেন ভারতী এন্টারপ্রাইজেসের চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তল। প্রশ্ন তুললেন, যেখানে মোদী নিজে ডিজিটাল ভারতের স্বপ্ন দেখেন, সেখানে স্পেকট্রামের চড়া দাম, লাইসেন্স ফি ও করের চাপে তার প্রধান অস্ত্রকেই ভোঁতা হতে দেওয়া হয় কী ভাবে?

Advertisement

সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকেই মিত্তলের হাতে গড়া সংস্থা এয়ারটেলের সার্বিক নিট মুনাফা কমেছে ৬৫%। মাসুলের গলাকাটা প্রতিযোগিতার এই বাজারে অনেক দিনই ভাল ফলের মুখ দেখতে ‘ব্যর্থ’ তারা। বৃহস্পতিবার সেই মিত্তলের মুখে উঠে এল পুরো শিল্পের সমস্যার কথা। জিয়োর নাম না করেও বললেন, কী ভাবে মাসুলের তীব্র প্রতিযোগিতার দাম দিয়ে বহু জনের চাকরি গিয়েছে টেলিকম শিল্পে। ঝাঁপ বন্ধ করতে কিংবা অন্যের সঙ্গে মিশে যেতে বাধ্য হয়েছে অনেক সংস্থা। আর সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বুঝি না কী করে এই বৈপরীত্য থাকে... এক দিকে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ভারতের স্বপ্ন। ...যার জন্য বিপুল লগ্নি জরুরি। অন্য দিকে, স্পেকট্রামের এত চড়া দাম ও লাইসেন্স ফি...সঙ্গে অবশ্যই ১৮% হারে জিএসটি।’’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, যদি ডিজিটাল ভারতই লক্ষ্য হয়, তাহলে তার প্রধান অস্ত্রে করের হার কেন হবে তামাকজাত পণ্যের মতো চড়া?

কর নিয়ে এ দিন সম্পূর্ণ আলাদা একটি মঞ্চে প্রশ্ন তুলেছেন গোদরেজ গোষ্ঠীর কর্ণধার আদি গোদরেজও। এ দিন মুম্বইয়ে ওই প্রবীণ শিল্পপতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, কর কম হলে তার আদায় বাড়ে। কিন্তু ভারতে কোম্পানি কর যথেষ্ট বেশি।

Advertisement

মিত্তল বা গোদরেজ যে দিন এই সব প্রশ্ন তুলছেন, সেখানে মোবাইল কংগ্রেসের মঞ্চেই ভারতের ডিজিটাল অগ্রগতির গল্প শুনিয়েছেন রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানী। দেশের টেলিকম শিল্পের নকশা বদলে দিয়েছে যাঁর সংস্থা রিলায়্যান্স-জিয়ো।

সংশ্লিষ্ট শিল্পের অনেকে অবশ্য বলছেন, এমনই তো হওয়ার কথা! কারণ, নিজেদের ‘বন্ধু’ বললেও ব্যবসার দুনিয়ায় বরাবর তাঁরা একে অপরের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। আর এক মোবাইল পরিষেবা সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়ার চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লা যখন ডিজিটাল ভারত গড়তে দায়বদ্ধতার কথা বলছেন, তখন তাঁরই সংস্থার এক কর্তা বলেছেন টেলি শিল্পের রক্তাক্ত অবস্থার কথা। মিত্তলেরও প্রশ্ন, টেলিকম নীতি তৈরির পরেও রাজস্ব আদায় ঘিরে টেলিকম দফতর ও সংস্থাগুলির শতাধিক মামলায় জড়িয়ে থাকা আদৌ ভাল বিজ্ঞাপন কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন