এই দফায় ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে সুদ একই রেখেছেন উর্জিত পটেল। এতে শিল্প আশাহত হলেও সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন সুদ-নির্ভর অসংখ্য মানুষ। শেয়ার বাজারও এক ঝটকায় অনেকটা নেমেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তে। পরের কয়েক দিনে অবশ্য বাজার কিছুটা শক্তি ফিরে পায় বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার কিনতে শুরু করায়।
আরবিআই সুদ কমায়নি ঠিকই, কিন্তু তাতে কি সুদের পতন বন্ধ হয়েছে? উত্তর হল, ‘না’। হাতে অত্যধিক টাকা থাকায় ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমাচ্ছে ঋণ ও জমা দু’য়েরই উপর। সম্ভবত এই জন্যই শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। পাশাপাশি, নোট বাতিলের জেরে হয়রানিতে ব্যতিব্যস্ত সুদ-নির্ভর অসংখ্য মানুষকে ফের ধাক্কা দিতে চায়নি শীর্ষ ব্যাঙ্ক। বরং জনতার রোষ প্রশমিত করতে কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে একগুচ্ছ ছাড়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের পর-পরই ঋণের উপর ১৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে কানাড়া ব্যাঙ্ক। নতুন বছরের প্রথম দিন সুদ কমানোর কথা বিবেচনা করবে স্টেট ব্যাঙ্ক। জমার উপর সুদ কমতে শুরু করেছিল আগেই। ব্যাঙ্কের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টাকা থাকায় সুদ আরও কমলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জমায় সুদ কমাচ্ছে গৃহঋণ সংস্থাগুলিও। আজ থেকে নতুন সুদ চালু করছে এইচডিএফসি। সর্বাধিক সুদ (বার্ষিক) কমে হচ্ছে ৭.৫৫% (২২-৪৪ মাসের)। প্রবীণ নাগরিকেরা পাবেন ৭.৮০%। মাসিক আয় প্রকল্পে সর্বাধিক নতুন সুদ ৭.৩০%। প্রবীণদের ক্ষেত্রে ৭.৫৫%। অন্য গৃহঋণ কোম্পানিগুলিও সম্ভবত সুদ কমাবে অদূর ভবিষ্যতে। একটু বেশি সুদের আশায় অনেকেই টাকা রাখেন এইচডিএফসি, এলআইসি হাউসিং ফিনান্স, পিএনবি হাউসিং, ডিএইচএফএল ইত্যাদি গৃহঋণ সংস্থায়।
ব্যাঙ্ক-জমায় সুদ এখন নেমে এসেছে ৭ শতাংশের আশেপাশে। একটু বেশি সুদের সন্ধানে মানুষকে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের বাইরে বেরোতে হচ্ছে। যে-সব প্রকল্পে তুলনামূলক ভাবে বেশি সুদ/আয় পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি হল:
১) ভারত সরকারের ৮% সেভিংস (করযোগ্য) বন্ড, ২০০৩ প্রকল্প
২) ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ড। এখানেও রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৮%। ৩ বছর ধরে রাখলে আছে কর বাবদ সুবিধাও
৩) ‘ট্রিপল-এ’ রেটিং-এর কর্পোরেট বন্ড। সম্ভাব্য সুদ ৯%। কেনা যায় নতুন ইস্যুতে বা খোলা বাজার থেকে। বাজার থেকে কিনলে একটু প্রিমিয়াম পড়বে
৪) বাজার থেকে কেনা যেতে পারে করমুক্ত বন্ড। এখানে প্রকৃত আয় বা ইল্ড ৭ শতাংশের আশেপাশে
৫) ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের আওতায় থাকা সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম
৬) ‘ট্রিপল-এ’ রেটিংযুক্ত গৃহঋণ সংস্থার জন-আমানত প্রকল্প। সুদ পাওয়া যেতে পারে ৭.৫% থেকে ৮.১৫%
৭) ডিভিডেন্ড ইল্ড ফান্ড এবং ব্যালান্সড ফান্ড। মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড পুরোপুরি করমুক্ত
এলোমেলো হাওয়া বইছে শেয়ার বাজারেও। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানোর সম্ভাবনা, দেশে জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার কমার আশঙ্কা, নোট বাতিলের কারণে চাহিদা হ্রাস ও বিভিন্ন সংস্থার লাভ কমার আশঙ্কা, ইত্যাদি কারণে বাজারে এখন ওঠা-পড়া চলবে। তবে স্বল্প মেয়াদে অনিশ্চয়তা থাকলেও বড় মেয়াদে কিন্তু অর্থনীতি ভাল করবে বলেই ধারণা। অর্থাৎ ভাল শেয়ারে লগ্নি করা যেতেই পারে।