অরবিন্দ পানাগড়িয়া, ভাইস চেয়ারম্যান, নীতি আয়োগ
বৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়ার পরে নাগাড়ে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা। শুক্রবার আবার যন্ত্রণা বাড়িয়ে চিমটি কেটেছে চিন। অভিযোগের আঙুল উঠছে নোট বাতিলের ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের দিকে। এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির পরে এ বার মোদী সরকারের পক্ষে ব্যাট ধরলেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়া।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন অর্থনীতি অধ্যাপকের দাবি, দীর্ঘ মেয়াদে নোট নাকচের সুফল মিলবে। চলতি ত্রৈমাসিকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে অর্থনীতি। চাঙ্গা হবে বৃদ্ধির হার। এই অর্থবর্ষে ৭.৫% বৃদ্ধি ছুঁয়ে ফেলা যাবে। পরের আর্থিক বছরে তা ফের পৌঁছে যেতে পারে ৮ শতাংশে। অর্থাৎ, চিনের কাছে সদ্য খোওয়ানো দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতির তাজ শীঘ্রই ফিরবে ভারতের কাছে।
বুধবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-’১৭ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি নেমেছে ৬.১ শতাংশে। সেই সূত্রে চিনের (৬.৯%) কাছে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা খুইয়েছে ভারত। পুরো অর্থবর্ষে বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.১%। মোদীর ৩ বছরের জমানায় সবচেয়ে কম। এর জন্য অভিযোগের আঙুল উঠছে নোট নাকচের দিকে।
নোট বাতিলের তুমুল বিরোধিতার পরেও উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিপুল জয় চুপসে দিয়েছিল বিরোধীদের। কিন্তু বৃদ্ধি ধাক্কা খেতেই নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছেন তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাহুল গাঁধী— সকলের বক্তব্য, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে কেন্দ্রের।
এই প্রবল চাপের মুখে গতকাল জেটলির দাবি ছিল, ‘‘নোট বাতিলের আগেই থেকেই বিশ্বজোড়া মন্দার প্রভাব এ দেশে পড়েছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধি বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য কম নয়।’’ কিন্তু বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, তবে যে মোদী বলেছিলেন, অর্থনীতির হাল ভাল আর পোক্ত ছিল বলেই তখন নোট নাকচের ওই সিদ্ধান্ত!
এ দিন আবার মোদী সরকারকে চিমটি কেটেছে চিনা সংবাদমাধ্যমও। তাদের মতে, নোট বাতিলের আত্মঘাতী গোলেই চিনের সঙ্গে বৃদ্ধির ‘ম্যাচ হেরেছে’ ভারত।
এই অবস্থায় মোদী সরকারের ৩ বছর পূর্তির উৎসবের মুখে ঝুঁকি না-নিয়ে পানাগড়িয়াকেও মাঠে নামিয়েছে কেন্দ্র। তাঁর দাবি, ‘‘নোট বাতিলের দীর্ঘ মেয়াদি ফল ভাল হবে।’’
নোট বাতিলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে বলে সরব হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। প্রশ্ন তুলেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন-ও বলেছিলেন, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের শেষ ছ’মাসে বৃদ্ধি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। এ দিনও কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মন্তব্য, ‘‘নোট বাতিলে ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি।’’
এই ঝড়ের মুখে এ দিন একা কুম্ভ পানাগড়িয়ার দাবি, ‘‘নোট বাতিলের সময়ে বহু নামী অর্থনীতিবিদ বলেন, বৃদ্ধি ২ থেকে ৫ শতাংশ কমবে। তা যে হয়নি, সেটি হিসেব থেকেই স্পষ্ট।’’