ঘাটতি কমাতে কাগুজে সোনা

অর্থনীতির হাল ফেরাতে হাতিয়ার এ বার ‘কাগুজে সোনা’। জ্বালানি ছাড়া যে পণ্য আমদানিতে সাধারণত কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা (ডলার) খরচ হয়, তা হল সোনা। তাই সোনা না-কিনেও ওই দামি ধাতুতে লগ্নির বিকল্প পথ খুলে দেওয়ার কথা ফেব্রুয়ারিতেই বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০১:৪৬
Share:

অর্থনীতির হাল ফেরাতে হাতিয়ার এ বার ‘কাগুজে সোনা’।

Advertisement

জ্বালানি ছাড়া যে পণ্য আমদানিতে সাধারণত কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা (ডলার) খরচ হয়, তা হল সোনা। তাই সোনা না-কিনেও ওই দামি ধাতুতে লগ্নির বিকল্প পথ খুলে দেওয়ার কথা ফেব্রুয়ারিতেই বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ বার তার অঙ্গ হিসেবে বাজারে গোল্ড লিঙ্কড বন্ড (সোনার দামের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি ঋণপত্র) আনার খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করল অর্থ মন্ত্রক। আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত সকলের কাছে ওই খসড়ার বিষয়ে মতামত চেয়েছে তারা। প্রস্তাবিত এই খসড়া অনুযায়ী—

• কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে ওই বন্ড বাজারে ছাড়বে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

• ওই বন্ডে টাকা ঢেলে লগ্নিকারী আসলে সোনাই কিনবেন। তবে তা রাখা থাকবে কাগজে। বন্ড মারফত কেনা যাবে ২, ৫ ও ১০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের সোনা।

• সুদও দেওয়া হবে সোনায়। টাকার অঙ্কে তা হিসেব করা হবে ১০,০০০ টাকার উপরে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণঋণে সুদের হারের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে এই বন্ডের ন্যূনতম সুদ (সম্ভবত ২-৩ শতাংশ)। তবে দীর্ঘমেয়াদে সুদের প্রকৃত হার ঠিক করবে বাজারই।

• বন্ড জমা রেখে ধার মিলবে।

• এই ঋণপত্রে লগ্নি করতে পারবেন শুধু ভারতীয়রা। তবে এর মারফত বছরে ৫০০ গ্রামের বেশি সোনা কিনতে পারবেন না কেউ।

• মেয়াদ শেষে বন্ডে কেনা সোনার দাম যত দাঁড়াবে, তা-ই পাবেন লগ্নিকারী। সঙ্গে সুদও।

• এই বন্ডগুলি সহজেই পণ্য বাজারে (কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) বেচা-কেনা করা যাবে।

• প্রথম বছরে ৫০ টন সোনার সমমূল্যের (১৩,৫০০ কোটি টাকা) বন্ড বাজারে ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। যা বাড়ানো হতে পারে।

• বাজারে বন্ড ছাড়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যাঙ্কের হয়ে কাজ করবে ডাকঘর, ব্রোকার এবং এজেন্টরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁদের কমিশন দেবে। পরে তা মিটিয়ে দেবে কেন্দ্র।

• বিপণি থেকে সোনা কেনার সময় যে হারে মূলধনী লাভ কর দিতে হয়, সেই হারে কর গুনতে হবে এই প্রকল্পেও।

কেন্দ্রের আশা, এই ঋণপত্র জনপ্রিয় হলে, কিছুটা হলেও চাহিদা কমবে ধাতু-সোনার। ফলে সে ক্ষেত্রে কম ডলার গুনতে হবে তা আমদানির জন্য। তাতে বাণিজ্য ঘাটতিতে রাশ টানা সম্ভব হবে। কমবে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিও।

কিন্তু কেন্দ্রের এমন আশা সত্ত্বেও এই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সত্যিই কতটা জনপ্রিয় হবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের এই চিন্তার কারণ মূলত চারটি—

(১) সোনার সঙ্গে যুক্ত এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড এ দেশের বাজারে তেমন জনপ্রিয় হয়নি।

(২) লগ্নিকারীদের মনে হতে পারে যে, এই বন্ডে সুদের হার বেশ কম।

(৩) সোনার উপর দুর্বলতা এবং তাকে ঘিরে আবেগ ভারতীয়দের মধ্যে বরাবরের। ফলে গয়না তৈরির উপযুক্ত ধাতু-সোনার বদলে কাগুজে সোনায় তাঁদের মন কতটা ভরবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

(৪) সাধারণত বিপণি থেকে নগদেই সোনার গয়নাপত্তর কেনেন সাধারণ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা কর দেন না। কিন্তু এখানে বন্ডে মূলধনী লাভ কর গুনতে হওয়াও প্রকল্পটি জনপ্রিয় হওয়ার পথে বাধা হতে পারে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ব্যাঙ্ক মারফত স্বর্ণ জমা প্রকল্পের খসড়া কেন্দ্র পেশ করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেখানেও সমস্যা হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ জানান, এমনিতে ব্যাঙ্কে সোনা জমা রেখে সুদ পাওয়া সুবিধাজনক। কিন্তু তার জন্য সোনা গলিয়ে তা অন্য কাজে লাগানোয় হ্যাঁ করতে রাজি নন অনেকেই। এ বার সোনায় টাকা ঢালতে ইচ্ছুক লগ্নিকারীদের কাগুজে সোনায় টেনে আনতে কেন্দ্র কতটা সফল হয়, সে দিকেই এখন তাকিয়ে সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন