আর্থিক বৃদ্ধি ছাড়াল চিনকে, হিসাবে সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা

চিন ৭, ভারত ৭.৫। জানুয়ারি থেকে মার্চে শতাংশের হিসেবে আর্থিক বৃদ্ধির দৌড়ে ভারতীয় অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার এই খতিয়ানই শুক্রবার দিয়েছে সরকারি পরিসংখ্যান। ২০১৪-’১৫ অর্থ বছরের শেষ তিন মাসে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি চিনকে ভারত টপকে যাওয়ায় স্বভাবতই খুশি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবে সরকারি হিসাব কতটা নিখুঁত, তা নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০২:০৬
Share:

চিন ৭, ভারত ৭.৫।

Advertisement

জানুয়ারি থেকে মার্চে শতাংশের হিসেবে আর্থিক বৃদ্ধির দৌড়ে ভারতীয় অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার এই খতিয়ানই শুক্রবার দিয়েছে সরকারি পরিসংখ্যান। ২০১৪-’১৫ অর্থ বছরের শেষ তিন মাসে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি চিনকে ভারত টপকে যাওয়ায় স্বভাবতই খুশি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবে সরকারি হিসাব কতটা নিখুঁত, তা নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদরা।

জাতীয় আয় মাপার যে-নতুন পদ্ধতি সরকার চালু করেছে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের মতে অর্থনীতির এগিয়ে চলার অন্যান্য মাপকাঠির সঙ্গে এ দিনের পরিসংখ্যান মানানসই নয়। তাঁদের মতে অর্থনীতি এগিয়েছে ঠিকই, তবে তা অত্যন্ত ধীরগতিতে। যে-সব কারণ দেখিয়ে বিশেষজ্ঞেরা প্রশ্ন তুলেছেন, তার মধ্যে রয়েছে:

Advertisement

বিভিন্ন শিল্প সংস্থার চরম হতাশাজনক আর্থিক ফল

ঢিমে তালে এগোনো শিল্পোৎপাদন

ঋণ ফেরত না-আসার কারণে ব্যাঙ্কের বোঝা বাড়া

এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধির হিসাবে বাস্তব ছবির প্রতিফলন ঘটছে না বলেই তাঁদের আশঙ্কা। সন্দেহ বাড়ার আর একটি কারণ, ঠিক এর আগের ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর বৃদ্ধির হার সংশোধন করে এক ধাক্কায় ৭.৫% থেকে কমিয়ে দিয়েছে ৬.৬ শতাংশে। সে সময়েও বৃদ্ধির হারে চিনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলে নরেন্দ্র মোদী সরকার আর্থিক সংস্কারের হাত ধরে নিজেদের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছিল। বাকি দু’টি ত্রৈমাসিকের হারও সংশোধিত হয়েছে, তবে হেরফের সামান্য। গোটা অর্থবর্ষের জন্য জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ৭.৩%, এক বছর আগে যা ছিল ৬.৯%।

বস্তুত, নতুন ও পুরনো পদ্ধতিতে জাতীয় আয় হিসাবের মধ্যে তুলনা টেনে পরিসংখ্যানে ‘গরমিল’-এর অভিযোগ এনেছেন অর্থনীতিবিদরা। নতুন হিসাবে জাতীয় আয় মাপা হয় বাজার দরে উৎপাদনের মূল্য হিসেব করে। আগে তা মাপা হত, উৎপাদনের খরচের ভিত্তিতে। উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে করা হিসাবের সঙ্গে পরোক্ষ কর যোগ করে এবং ভর্তুকি বাদ দিলে পাওয়া যায় বাজার দরের ভিত্তিতে জাতীয় আয়। তাই এখান থেকে অর্থনীতির প্রকৃত ছবি পাওয়া কঠিন বলে মনে করছেন অনেকেই।

যেমন, ক্রিসিলের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ডি কে জোশী বলেছেন, এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবের বিস্তর ফারাক। সিঙ্গাপুরে ডিবিএস ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ রাধিকা রাও জানান, এই পরিসংখ্যানের তুলনায় অন্য মাপকাঠিগুলির ভিত্তিতেই বৃদ্ধির বিচার করতে হবে। সেগুলি হল: শিল্পোৎপাদন, তেল-সোনা ছাড়া অন্যান্য আমদানি, বাজারে চাহিদা বাড়ার পরিমাপ। তাঁর মতে, এ সবের ভিত্তিতে বলা যায় অর্থনীতি এখনও শ্লথগতিতেই এগোচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও তার নীতি তৈরিতে এই সব পরিসংখ্যানকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান লন্ডনের আর্থিক সংস্থা ক্যাপিটাল ইকনমিক্স-এর শিলান শাহ।

ত্রৈমাসিকে কারখানার উৎপাদন ৮.৪% বাড়ার কথা বলা হলেও কৃষি উৎপাদন কমেছে ১.৪ শতাংশ। খনন ক্ষেত্রেও উৎপাদন কমেছে। বিশেষজ্ঞেরা আঁচ করছেন, প্রকৃতপক্ষে গত অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধির পর থেকেই অর্থনীতি ধীরে চলতে শুরু করেছে। বাজার দরে হিসাব করতে গিয়ে কর সমেত জাতীয় আয়ের মূল্যায়নই অর্থনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বেশি পরিমাণেই। কারণ পুরনো পদ্ধতির হিসাবে বার্ষিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল মাত্র ৫.৫%।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন