ভাদিনারে এসার অয়েলের তেল শোধনাগার। ছবি:রয়টার্স।
ভারতের বৃহত্তম প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি আসছে রাশিয়ার সরকারি তেল সংস্থা রোজনেফ্টের হাত ধরে।
শনিবার গোয়ায় ব্রিক্স গোষ্ঠীর দেশগুলির সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানেই এসার অয়েলের সিংহভাগ অংশীদারি (৯৮%) কিনতে চুক্তি করেছে রোজনেফ্ট এবং তার সহযোগী সংস্থা ট্রাফিগুরা ও ইউনাইটেড ক্যাপিটাল পার্টনার্সের (ইউসিপি) কনসোর্টিয়াম। এ জন্য সংস্থাগুলি ঢালছে নগদ ৭২,৮০০ কোটি টাকা। আরও ১৩,৩০০ কোটিতে গুজরাতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি তেল সংস্থাটির ভাদিনার বন্দর প্রকল্পও কিনছে তারা। সব মিলিয়ে লগ্নি ৮৬,১০০ কোটি টাকা (১,২৯০ কোটি ডলার)। যা এখনও পর্যন্ত দেশে আসা বৃহত্তম প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ।
চুক্তি অনুসারে, এসার অয়েলের ৪৯% অংশীদারি কিনছে রোজনেফ্টের শাখা পেট্রোল কমপ্লেক্স। আর ৪৯% শেয়ার হাতে নেবে পণ্য বাজারে লেনদেনকারী নেদারল্যান্ডসের সংস্থা ট্রাফিগুরা এবং রাশিয়ার লগ্নি তহবিল ইউসিপি-র কনসোর্টিয়াম কেসানি এন্টারপ্রাইজেস কোম্পানি। এই লেনদেনের জন্য ট্রাফিগুরাকে অর্থ জোগাবে রাশিয়ার ভিটিবি ব্যাঙ্ক। পরবর্তী কালে যার ৩৯০ কোটি ডলার (২৬,১৩০ কোটি টাকা) ঋণ শোধে ব্যবহার করবে এসার। আর শেয়ার বাজার থেকে নথিভুক্তি তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে বাকি ২% থাকবে এসার গোষ্ঠীর হাতে।
অংশীদারি বিক্রি করে হাতে আসা অর্থের বেশিরভাগটাই ঋণ শোধে ব্যবহার করা হবে বলে জানান এসার গোষ্ঠীর কর্তা প্রশান্ত রুইয়া। এর সাহায্যে ৮৮,০০০ কোটি টাকার ঋণ অর্ধেক কমবে বলে তাঁদের আশা। বাকি টাকা ঢালা হবে অন্যান্য ব্যবসায়। তবে পুরোপুরি তেল ও গ্যাস ব্যবসা থেকে সরছে না এসার গোষ্ঠী। রুইয়া জানান, ব্রিটেনে স্ট্যানলো শোধনাগার ব্যবসা থাকছে তাঁদের হাতে। তেল উত্তোলন ব্যবসাও এ দিনের চুক্তির অঙ্গ নয়। সংস্থার কোল বেড মিথেন ব্লক এবং ভাদিনার শোধনাগারের নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রও থাকছে চুক্তির বাইরে।
ভাদিনারে দিনে ৪.০৫ লক্ষ ব্যারেল তেল শোধন করে এসার। দেশ জুড়ে রয়েছে ২,৭০০টি পেট্রোল পাম্প। ব্যবসা বিক্রি হলেও, ভবিষ্যতে এসারের ব্র্যান্ড নামেই পাম্পগুলি থেকে তেল বিক্রি হবে বলে স্থির হয়েছে এ দিনের চুক্তিতে। পুরো বিষয়টিই আপাতত বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিচারাধীন। আগামী বছরের শুরুতেই অংশীদারি বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে বলে এসারের আশা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যবসা বিক্রির কথা চালাচ্ছিল ঋণের ভারে জর্জরিত এসার অয়েল। গত বছর প্রাথমিক ভাবে রোজনেফ্টকে ৪৯% বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। কথা ছিল এ জন্য রোজনেফ্ট ঢালবে ২১,৩৫০ কোটি টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসারের ঘাড়ে চেপে বসা ধার পুরোপুরি শোধ হওয়ার সম্ভব ছিল না। বিকল্প হিসেবে পরবর্তী কালে রাশিয়ার সংস্থাটিকে ৭৪% শেয়ার বিক্রির ভাবনা-চিন্তা করা হলেও, তাতে বাধ সেধেছিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। সে ক্ষেত্রে সংস্থার সিংহভাগ মালিকানা রোজনেফ্টের হাতে গেলে এসারও পড়ে যেত নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। এর পরেই পণ্য বাজারে লেনদেনকারী নেদারল্যান্ডসের সংস্থা ট্রাফিগুরাকে আরও ২৪% অংশীদারি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এ দিন ৯৮% অংশীদারি বিক্রির চুক্তি করল এসার অয়েল।