নজরে: জামিন পেয়ে লন্ডনে আদালতের বাইরে। ছবি: পিটিআই।
কেউ বলছেন, দু’মিনিটের নুডলসকে হারিয়ে দিলেন তিনি! কেউ বলছেন, আলো নয়, চিতা নয়, এ দুনিয়ায় দ্রুততার আর এক নাম বিজয় মাল্য!
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড যে মাল্যকে গ্রেফতার করেছে, খবরটা সোশ্যাল মিডিয়ায় জাঁকিয়ে বসতে না বসতেই জামিন! প্রাক্তন কিংগ্ফিশার মালিক নিজেই ‘যত্ত সব বাড়াবাড়ি’ বলে টুইটও করে ফেললেন!
‘কিংগ্ অব গুড টাইমস’ যথারীতি ‘কুল’ই। কিন্তু দিল্লির অলিন্দ সরগরম! মন্ত্রীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। বুক বাজিয়ে দাবি করছেন, এ বার সিবিআই লন্ডনে গিয়ে কোমরে দড়ি বেঁধে ভারতে ফিরিয়ে আনবে মাল্যকে। আর কংগ্রেস বলার চেষ্টা করছে, এ সবই সম্ভব হল তাদের চাপের ফলে।
অথচ ব্যাপারটা মোটেই এমন নয় যে, কালই মাল্যকে ফেরত পাঠাবে ব্রিটেন। কিংবা সিবিআই-ইডি কর্তারা লন্ডনে গিয়ে মাল্যকে ধরে আনবেন। আজকের নিয়মমাফিক গ্রেফতারি এবং নিয়মমাফিক জামিনের পরে বিষয়টি আইনের ময়দানে ঢুকল বলা চলে। এ বার ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সিবিআইকে প্রমাণ করতে হবে, প্রত্যর্পণের মতো যথেষ্ট অপরাধ মাল্য করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি তথা জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। আর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তাঁর প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিলেও উচ্চতর আদালতে যেতে পারবেন মাল্য। আইনজীবীদের ধারণা, প্রক্রিয়াটা ঠিক মতো চললে অন্তত এক বছর লাগবে।
১৭টি ব্যাঙ্ক থেকে কিংগ্ফিশার এয়ারলাইন্সের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে না মেটানোর মামলা ঝুলছে মাল্যর বিরুদ্ধে। গত বছর মার্চে তিনি লন্ডন পালিয়ে যান। মোদী সরকারই মাল্যকে পালাতে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল গাঁধী। সরকার মাল্যর মতো বড়লোকদের বিরুদ্ধে কিছু করে না বলে প্রচার করেন। সম্প্রতি অরুণ জেটলি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাল্যর প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানান। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাতে সিলমোহর দিয়ে আদালতে পাঠায়। জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা।
মামলার মাল্য
•১৭টি ব্যাঙ্ক থেকে ৯ হাজার কোটি ঋণ নিয়ে মেটাননি
• ২০১৬-র মার্চ মাসে লন্ডনে পালিয়ে যান
• ২০১৬-র জুনে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড কর্নার নোটিস ইডি’র
• লন্ডন থেকে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা
• ৬,৮৬৮ কোটি টাকা মেটানোর প্রস্তাব মানল না ব্যাঙ্কগুলি
• জানুয়ারিতে চার্জশিট পেশ
করল সিবিআই
• ফেব্রুয়ারি মাসে মাল্যর প্রত্যর্পণে চেয়ে সরকারি
অনুরোধ ব্রিটেনকে
• ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র কাছে অরুণ জেটলির দরবার
• ভারতের আর্জি আদালতে পাঠিয়ে জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
আজ লন্ডনে সকাল সাড়ে ন’টায় মাল্যকে গ্রেফতার করে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। খবর শুনেই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘এটা সরকার ও অর্থ মন্ত্রকের বিরাট সাফল্য।’’ অর্থ প্রতিমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার বলেন, ‘‘কোনও অপরাধী, ঋণখেলাপিকে ছাড়া হবে না।’’ অন্য দিকে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘আমাদের চাপেই সরকার মাল্যর প্রত্যর্পণের আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু এখনই বুক বাজানোর কিছু হয়নি।’’
আরও পড়ুন:প্রত্যর্পণের ইতিহাস কিন্তু উজ্জ্বল নয়
গ্রেফতারির ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই সাড়ে ছ’লক্ষ পাউন্ড জমা দিয়ে জামিন পান মাল্য। টুইট করে বলেন, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের চিরাচরিত বাড়াবাড়ি। প্রত্যর্পণের শুনানি আদালতে শুরু হল আজ। এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল।’
অর্থাৎ দৃশ্যত মাল্য তেমন বিচলিত নন। আজকের পর জীবনে তাঁর একটাই পরিবর্তন হল। আইনের নজরদারির বাইরে আর নেই তিনি। লন্ডনের বাইরে যাওয়ারও অনুমতি পাবেন না। পরবর্তী শুনানি ১৭ মে। তার আগেই যাবতীয় নথি নিয়ে সিবিআই দল লন্ডনে পৌঁছে যাবে।