টালমাটাল বাজারেও আস্থা অটুট ফান্ডের

ভারতের শেয়ার লগ্নিকারীরা এখন অনেক বেশি পরিণত, বলছেন অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস অব ইন্ডিয়ার কর্তা এন এস ভেঙ্কটেশ। তাঁর দাবি, চলতি অর্থবর্ষে ফান্ডে লগ্নি আরও বাড়বে।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০১
Share:

নোটবন্দি, তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর সমস্যা বা নীরব মোদীর ব্যাঙ্ক প্রতারণা টালমাটাল করেছে ভারতের শেয়ার বাজারকে। সূচককে টেনে নামিয়েছে বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা। তবু বাজারের প্রতি আস্থায় ভাটা পড়েনি মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীদের। ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াই যার প্রমাণ। বিশেষজ্ঞদের মতে এতে স্পষ্ট, এ দেশে শেয়ারে লগ্নিকারীরা বিনিয়োগের ব্যাপারে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত।

Advertisement

গত অর্থবর্ষের ১১ মাসে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে আগের বছরের থেকে লগ্নি বেড়েছে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। আয়কর ছাড় পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার ইএলএসএস-সহ শেয়ার ভিত্তিক প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৪২ কোটি। আর ঋণপত্র ও শেয়ার, দু’ধরনের ফান্ড প্রকল্পে মোট ২২ লক্ষ ২০ হাজার ৩২৬ কোটি। আগের বছরের থেকে ২৪.১১% বেশি।

এই পরিসংখ্যানই বলছে ভারতের শেয়ার লগ্নিকারীরা এখন অনেক বেশি পরিণত, বলছেন অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস অব ইন্ডিয়ার কর্তা এন এস ভেঙ্কটেশ। তাঁর দাবি, চলতি অর্থবর্ষে ফান্ডে লগ্নি আরও বাড়বে। ভেঙ্কটেশের কথায়, ‘‘২৯ জানুয়ারি সেনসেক্স ৩৬,২৮৩ অঙ্কে উঠে সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে। তার পর গত দুই মাসেই শেয়ার দরে বড় মাপের সংশোধন হয়েছে। গড় দাম ২৫% নেমেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসআইপি পদ্ধতিতে যাঁরা ফান্ডে নিয়ম করে প্রতি মাসে বিনিয়োগ করেন, তাঁদের প্রায় কেউই প্রকল্প বন্ধ করেননি। এটা শেয়ার বাজার সম্পর্কে লগ্নিকারীদের সচেতনতা বাড়ারই লক্ষণ।’’

Advertisement

ফান্ড নিয়ে গবেষণাকারী ভ্যালু রিসার্চের সিইও ধীরেন্দ্র কুমারের দাবি, বাজারের প্রতি এই আকর্ষণের অন্যতম কারণ ব্যাঙ্ক, স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমা। তিনি বলেন, ‘‘সুদ কমেছে ক্রমাগত। আরও কমবে। ব্যাঙ্কে টাকা রেখে যে আয় হবে, তার সিংহভাগই খেয়ে নেবে মূল্যবৃদ্ধি। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কের তুলনায় গড়ে কমপক্ষে ৪ থেকে ৭ শতাংশ বেশি আয় করা যাচ্ছে ফান্ড থেকে। তাই লগ্নিকারীরা সে দিকেই ঝুঁকছেন।’’

আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল মিউচুয়াল ফান্ডের এমডি-সিইও নিমেষ শাহের মতে, ‘‘ব্যাঙ্কে আমানত রাখা ছাড়াও সাধারণ মানুষ আগে সোনা, ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনেও লগ্নি করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ওই সব জায়গায় মুনাফা দ্রুত কমেছ। অথচ শেয়ারে বেড়েছে। তাই অনেকেই ফান্ডের মাধ্যমে পুঁজি ঢালছেন শেয়ারে।’’

লগ্নির আর একটি ক্ষেত্র হল বিদেশি মুদ্রা। কিন্তু সেই বাজারও বেশ কিছু দিন হল অনিশ্চয়তার কবলে। তা ছাড়া, সাধারণ মানুষ মুদ্রা বাজারের লগ্নিতে তেমন সড়গড়ও নন। এটাও ফান্ডের লগ্নিতে ভিড় বাড়ার কারণ। কুমার বলেন, ‘‘ফান্ডে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ। ফলে সেখানে বিনিয়োগ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন লগ্নিকারীরা। এটাও আর একটি কারণ। এ ছাড়া, ওঠাপড়ার বাজারে এসআইপিতে লগ্নি করে ঝুঁকি কমানোর সুযোগও পাওয়া যায়।’’

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ফান্ডে লগ্নি আরও বাড়বে। অ্যামফির চেয়ারম্যান এ বালসুহ্মণ্যন জানান, ‘‘গত অর্থবর্ষে ৩২ লক্ষ নতুন লগ্নিকারী মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। চলতি বছরে নতুন ৫০ লক্ষ লগ্নিকারীকে যুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন