Investment

দুয়োরানি দেশের বাজার, স্বদেশ থেকে মুখ ঘুরিয়ে বিদেশে বিপুল লগ্নি করছেন ভারতীয় শিল্পপতিরা

ভারতীয় সংস্থাগুলি দেশে লগ্নি করার ক্ষেত্রে ‘সাবধানতার’ নীতি নিয়ে চলছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বিদেশে তাদের প্রত্যক্ষ লগ্নি বাড়ছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ০৮:২১
Share:

সামগ্রিক ভাবে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ স্থিতিশীল। —প্রতীকী চিত্র।

দেশীয় শিল্পপতিরা ভারতে লগ্নি করে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। অথচ বিদেশে বিপুল পুঁজি ঢালছেন। শিল্পের এই নীতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে মোদী সরকারকে। অর্থ মন্ত্রক মেনেছে, এ দিকে নজর দেওয়া দরকার।

মন্ত্রকের সাম্প্রতিক মাসিক রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় সংস্থাগুলি দেশে লগ্নি করার ক্ষেত্রে ‘সাবধানতার’ নীতি নিয়ে চলছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বিদেশে তাদের প্রত্যক্ষ লগ্নি বাড়ছে। রিপোর্টে আরও দাবি, গত অর্থবর্ষে ৮১০০ কোটি ডলার বিদেশি প্রত্যক্ষ লগ্নি ভারতে এসেছে। মার্চে তা তলানিতে ঠেকলেও, মন্ত্রকের দাবি সামগ্রিক ভাবে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ স্থিতিশীল। যা লগ্নিকারীদের আস্থার প্রমাণ। অথচ ভারতীয় সংস্থাগুলি বিদেশে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। ফলে ভারতে আসা নিট বিদেশি লগ্নি মাত্র ৪০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। ২০২৪-২৫ সালে ভারতীয় সংস্থাগুলির বিদেশে লগ্নি ১২৫০ কোটি বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বিদেশে তাদের বিপুল লগ্নি অথচ দেশে সতর্ক মনোভাবের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

আজ বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ, গত এক দশকে কৃষি ক্ষেত্র থেকে উচ্চপদস্থ চাকরিজীবীদের বেতন একই জায়গায় থমকে। মানুষের হাতে ইচ্ছে মতো খরচের টাকা নেই। কেনাকাটা না থাকলে কর্পোরেট মহলের লগ্নির উৎসাহ থাকবে না। দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের অভিযোগ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির গড় আয় বছরে মাত্র ২.৬ লক্ষ টাকা বা মাসে ২২,০০০ টাকার মতো। দেশের মোট আয়ে মধ্যবিত্তদের ভাগ ১৮২০ সাল বা ব্রিটিশ জমানারও আগের স্তরে। পরিবারের সঞ্চয় ২০১৯-২০ সালে ১১.৬১ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। ২০২৪-২৫-এ নেমেছে ৬.৫২ লক্ষ কোটিতে। সোনা বন্ধক রেখে ঋণ ৭১% বেড়েছে। গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি মাত্র ৬%। দু’চাকার বিক্রিতেও মন্দার ছবি। ভাটা ঘর-গেরস্থালির পণ্য বিক্রিতে। তা হলে শিল্প লগ্নি করবে কেন?

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছিল, গত অর্থবর্ষে ভারতীয় সংস্থাগুলি বিদেশে ২৯২০ কোটি ডলার লগ্নি করেছে। তার আগের বছরের তুলনায় ৭৫% বেশি। তাই ভারতে আসা নিট বিদেশি লগ্নি ৯৬% কমে মাত্র ৪০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। এখন অর্থ মন্ত্রক একে চিন্তার কারণ বলে মেনে নিয়েছে।

সম্প্রতি পরিসংখ্যান মন্ত্রক দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলির নতুন লগ্নিতে খরচের পরিকল্পনা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল। যা বলছে, ভারতীয় কর্পোরেট মহল এই অর্থবর্ষেও গত বছরের থেকে খুব বেশি নতুন লগ্নির পরিকল্পনা করছে না। ২০২৩-২৪-এ তারা ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা মূলধনী খাতে খরচ করেছিল বা নতুন লগ্নি করেছিল। গত বার ৬.৬ লক্ষ কোটির মতো খরচ করেছে বলে আশা। কিন্তু এ বার তা ফের ৪.৯ লক্ষ কোটিতে নামার আশঙ্কা। এর থেকেই অর্থ মন্ত্রক মনে করছে, ভারতের শিল্পমহল সাবধানী মনোভাব নিচ্ছে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, মোদী জমানায় কর-সন্ত্রাসও এর কারণ। মোট ৪১টি কর্পোরেট সংস্থার ঠিকানায় ৫৬ বার ইডি, সিবিআই বা আয়কর দফতর তল্লাশি চালিয়েছে। তাদের থেকে বিজেপি ২৫৯২ কোটি টাকা নির্বাচনী বন্ডে চাঁদা আদায় করেছে। জটিল জিএসটি ব্যবস্থায় সংশোধন হয়নি। মোদী সরকারের ‘ম্যাক্সিমাম থিয়েট্রিক্স, মিনিমাম গভর্ন্যান্স’-এর প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন