অবশেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পালে হাওয়া। আচমকা ও বেশ জোরালো। পাহাড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের চাপে ব্যাঙ্কগুলি যখন ধুঁকছিল, প্রাণ হাঁসফাঁস করছিল অক্সিজেনের জন্য, ঠিক তখনই কেন্দ্রের তরফে এল নতুন করে মূলধন ঢালার প্রতিশ্রুতি। একটু-আধটু নয়। গত বুধবার সরকারের তরফে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকার এক সাহায্যের ঝুলি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র। আর এতেই তাৎক্ষণিক ভাবে তেতে ওঠে সরকারি ব্যাঙ্ক শেয়ারের ভাগ্য। হু-হু করে বাড়তে দেখা যায় প্রায় সব ক’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারকে।
বাড়ার দৌড়ে প্রথম সারিতে ছিল পিএনবি (৪৬.২%), কানাড়া ব্যাঙ্ক (৩৮.৭৩%), স্টেট ব্যাঙ্ক (২৭.৬৯%)। ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলির এই হঠাৎ উত্থানে গোটা বাজারই বেশ তেতে ওঠে। প্রথম বারের জন্য সেনসেক্স পৌঁছয় ৩৩ হাজারে। নিফ্টিও এক সময়ে ছাড়িয়ে যায় ১০,৩০০-এর সীমা। পরের দিনও বাড়তে দেখা যায় কয়েকটি ব্যাঙ্ক শেয়ারকে। বিক্রির চাপ এলে শুক্রবার কিছুটা জমি হারায় অত্যধিক বেড়ে ওঠা সরকারি ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি।
অনুৎপাদক সম্পদের চাপে মূলধনের অনেকটাই খুইয়ে বসেছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। কঠিন হয়ে পড়ছে ব্যালান্স শিটে অনাদায়ী ঋণের জন্য সংস্থান রাখা। কমে আসছিল ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা। এতে ভুগছিল দেশের অর্থনীতি। নতুন মূলধন এলে ব্যালান্স শিট পরিষ্কার করা সহজ হবে, বাড়বে ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও এবং সম্ভব হবে বাড়তি ঋণদান।
প্রশ্ন উঠছে, ঋণ নেবে কে? শিল্প-বাণিজ্য ঝিমিয়ে পড়ায় এমনিতেই ঋণের চাহিদা কমেছে। ব্যাঙ্কগুলি এখন চেষ্টা করছে কম দামি বাড়ি তৈরির ঋণ, গাড়ি এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য ব্যক্তিগত ঋণকে জনপ্রিয় করে তুলতে। এই পথে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছলে তা অনেক পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করবে, ফলে উপকৃত হবে শিল্প।
পাশাপাশি ৮৪,০০০ কিমি নতুন রাস্তা তৈরির জন্য ৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র, যা ইন্ধন জোগায় দুই সূচকের উত্থানে। আশা, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে, উন্নত হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রাণ ফিরবে অনেক নির্মাণ সংস্থায় এবং চাহিদা বাড়বে রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু উপকরণের।
গত সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ করে বেশ কিছু সংস্থা। কোনও কোনও সংস্থা আশাহত করলেও জিএসটি চালু হওয়ার কারণে ফলাফল যতটা খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা কিন্তু এখনও হয়নি। কিছু ফলাফল ইঙ্গিত করছে, পরের ত্রৈমাসিক ফলাফলগুলি ভালর দিকেই যাবে।
ত্রৈমাসিক লাভ কিছুটা বাড়লেও গোটা বছর সম্পর্কে কিন্তু ইনফোসিস বড় কোনও আশা জাগাতে পারেনি। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের লাভ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বাড়লেও জমেছে খারাপ ঋণের পরিমাণও। এর ফলে সাময়িক ভাবে কিছুটা কমেছে এই ব্যাঙ্ক শেয়ারের দর। আয় এবং লাভ দুই-ই ৩.১% করে বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি-র। বেসরকারি বন্ধন ব্যাঙ্কের লাভ ১৮.২১% বেড়ে পৌঁছেছে ৩৩১ কোটি টাকায়। ইয়েস ব্যাঙ্কের আয় বেড়ে ৬,০০০ কোটি এবং নিট মুনাফা ১,০০০ কোটি টাকা ছাড়ালেও অনাদায়ী ঋণের বোঝা বাড়ার কারণে এই ব্যাঙ্ক শেয়ারের দর এখন কিছুটা চাপের মধ্যে। আয় এবং লাভ বেড়েছে শ্রেয়ী ইনফ্রা-র।
হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের বিক্রি বেড়েছে ১০%। সংস্থার দাবি, পণ্য চাহিদা এখন ভালই ও উন্নতি ঘটেছে ব্যবসার পরিবেশের। কোটাক মাহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের আয় যখন বেড়েছে ১৬%, তখন ব্যাঙ্কের নিট লাভ বেড়েছে ২২%। ৬৮% লাভ বেড়েছে আরবিএল ব্যাঙ্কের। আয় (-৬.৮%) এবং লাভ (-৪০%) দুই-ই কমেছে আইডিএফসি ব্যাঙ্কের। এল অ্যান্ড টি ফিনান্সের লাভ বেড়েছে ৪৫%। সামান্য বেড়ে আইসিআইসিআই প্রু লাইফ ইনশিওরেন্সের নিট লাভ পৌঁছেছে ৪২১ কোটিতে। ২৬% লাভ বেড়েছে ইন্ডিয়া বুলস হোম লোনস-এর। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হবে আরও কিছু ফলাফল এবং পরিষ্কার হবে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থান।
বাজার বিরাট উচ্চতায় উঠলেও তা যে এখনই আবার নেমে আসতে পারে, এমনটা কিন্তু ভাবা হচ্ছে না। বরং ফিউচার অ্যান্ড অপশনস বাজারে ‘রোল ওভার’ দেখে মনে হচ্ছে, বাজার আরও কিছুটা উপরে গেলেও যেতে পারে। আশাবাদীরা নভেম্বরেই নিফ্টি ১০,৫০০ ছুঁতে পারে বলে মনে করছেন। ভাল ফল ও বাই-ব্যাকের আকর্ষণে ইনফোসিস বাড়তে শুরু করেছে। কিছুটা সুদিন ফেরায় অনেকটাই বেড়েছে টাটা স্টিল। স্টিল অথরিটিও ভাল বেড়েছে গত সপ্তাহে। আবার ৮,০০০ টাকার সীমা ছাড়িয়েছে মারুতি-সুজুকি। ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে আরও বেশ কিছু শেয়ার।
ভরা জোয়ার এখন নতুন ইস্যুর বাজারেও। গত সপ্তাহে আইপিও এনে ভাল সাড়া পেয়েছে রিলায়্যান্স নিপ্পন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ে বিক্রি হয়ে যায় পুরো ইস্যুটি। শেষ পর্যন্ত আবেদন জমা পড়ে ৮০ গুণেরও বেশি। গত সপ্তাহে নথিবদ্ধ হয় জিআইসি শেয়ার। এই শেয়ারে কিন্তু লাভের মুখ দেখেননি লগ্নিকারীরা। দর এখন ইস্যুর দামের চেয়ে অনেকটা নীচে।
আশার আলো
• ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা মূলধন জোগানোর প্রতিশ্রুতিতে প্রাণ ফেরার আশা ব্যাঙ্ক শিল্পে
• ৮৪ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির প্রস্তাব কার্যকর হলে চাঙ্গা হবে নির্মাণ শিল্প, চাহিদা বাড়বে রাস্তা তৈরির উপকরণের
• জিএসটি চালু হওয়ার কারণে যতটা খারাপ আর্থিক ফলাফল আশা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি
• পরের ত্রৈমাসিক ফলাফলও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা
• আরও কিছুটা উপরে যেতে পারে শেয়ার বাজার
• ভরা জোয়ার নতুন ইস্যুর বাজারেও