বাজেটে বদলাতে পারে আয়কর কাঠামোও

সঞ্চয়ে করছাড়ের সীমা বাড়ানোর ইঙ্গিত

নোট বাতিলের পরে নগদের জোগান স্বাভাবিক হয়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তকে অন্তত কিছুটা খুশি করতে এ বারের বাজেটে সঞ্চয়ের উপর করছাড়ের সুবিধা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব আনতে পারে কেন্দ্র।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

নোট বাতিলের পরে নগদের জোগান স্বাভাবিক হয়নি এখনও। এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তকে অন্তত কিছুটা খুশি করতে এ বারের বাজেটে সঞ্চয়ের উপর করছাড়ের সুবিধা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব আনতে পারে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, পিপিএফ ছাড়াও শেয়ার বাজারে লগ্নিতে উৎসাহ দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যেমন, ৮০সি ধারায় কিছু প্রকল্পে কর বাঁচানোর সুযোগ মিলতে পারে বাড়তি ৫০ হাজার সঞ্চয়ে।

Advertisement

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পরে সমস্যায় পড়েছেন দেশের সব প্রান্তের মানুষ। অথচ শিয়রে পাঁচ রাজ্যের ভোট। তাই সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে এ বারের বাজেটে করের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুরাহা দেওয়া হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এখন আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে সব মিলিয়ে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে করছাড় পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে জীবনবিমার প্রিমিয়াম, পিএফের একটি অংশ, পিপিএফ, বাড়ি ঋণের আসল, সন্তানের স্কুল ফি, ব্যাঙ্কে নির্দিষ্ট মেয়াদের আমানত, জাতীয় পেনশন প্রকল্প (এনপিএস), মিউচুয়াল ফান্ডের ইএলএসএস প্রকল্প ইত্যাদি। বাজেটে সেই সীমা বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।

এর সঙ্গে বাজেটে আয়করের কাঠামোতেও পরিবর্তন করা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিজেপির অন্দরমহল থেকে এই আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে। এখন বছরে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হয় না। আড়াই থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০% এবং ৫ থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে ২০% কর দিতে হয়। আয় ১০ লক্ষের বেশি হলে তা ৩০%। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো না-হলেও, কর কাঠামোয় বদল করা হতে পারে। যাতে মধ্যবিত্তদের বড় অংশের উপর সামগ্রিক ভাবে করের বোঝা কমে। সঞ্চয়ে ছাড় ও কর কাঠামোয় বদল— দুই মিলিয়ে কর সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন মন্ত্রকের কর্তারা।

Advertisement

পাশাপাশি জেটলি চাইছেন, শেয়ার বাজারেও টাকা রাখুন মধ্যবিত্তরা। মনমোহন সরকারও এই চেষ্টায় রাজীব গাঁধী ইকুইটি সেভিংস স্কিম (আরজিইএসএস) চালু করেছিল। যেখানে বাজারে প্রথমবার পা রাখা লগ্নিকারীরা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে তার অর্ধেকের উপর করছাড় পেতেন। লগ্নির শর্ত ছিল, বছরে আয় হতে হবে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে। তিন বছরের আগে টাকা তোলা যাবে না। কিন্তু করছাড় পাওয়ার নিয়মে জটিলতা থাকায় বেশি মানুষ এতে উৎসাহ দেখাননি। এ বার লগ্নি টানতে প্রকল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে নতুন নামে ও নতুন সাজে চালু করার কথা ভাবছেন জেটলি।

অর্থ মন্ত্রক চাইছে, প্রথম বারের লগ্নিকারীদের বদলে সবাইকেই এই প্রকল্পে করছাড়ের সুবিধা দিতে। মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, এর ফলে শেয়ার বাজারে লগ্নিতে মানুষের উৎসাহ আরও বাড়বে। সেই বাড়তি বিনিয়োগে বাজারও চাঙ্গা হবে।

একই সঙ্গে এনপিএস-কেও আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা হতে পারে বাজেটে। মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এনপিএসে টাকা রাখা সরকারি কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক হলেও, বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা এতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। কারণ, এতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে বাড়তি করছাড় পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু পিপিএফ বা ইপিএফের মতো টাকা জমা, সুদে-আসলে বৃদ্ধি ও টাকা তোলা, তিনটি স্তরেই কর ছাড়ের সুবিধা নেই। এনপিএসে টাকা তোলার সময় একটি অংশে কর লাগে। এ বার বাজেটে তিনটি স্তরেই করছাড় দেওয়ার ঘোষণা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন