মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা
Business News

উৎপাদন শুল্ক ছাঁটার সওয়াল শিল্পেরও

তেলের আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। আশঙ্কা দানা বাঁধছে এর জেরে জিনিসপত্রের দাম বাড়া নিয়ে। এ বার তেল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করল শিল্পমহলও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

তেলের আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। আশঙ্কা দানা বাঁধছে এর জেরে জিনিসপত্রের দাম বাড়া নিয়ে। এ বার তেল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করল শিল্পমহলও।

Advertisement

পেট্রল লিটারে ৮০ টাকা ছুঁইছুঁই। ডিজেল পেরিয়েছে ৭০ টাকা। উদ্বিগ্ন ফিকি, অ্যাসোচ্যাম, ভারত চেম্বারের মতো বণিকসভাগুলি বলছে অবিলম্বে উৎপাদন শুল্ক কমাক কেন্দ্র। না হলে অর্থনীতির বিপদ। মঙ্গলবারও পেট্রল, ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটারে যথাক্রমে ২৯ ও ২৬ পয়সা। দাঁড়িয়েছে ৭৯.৫৩ এবং ৭০.৬৩ টাকায়।

সোমবার ফিকির প্রেসিডেন্ট রাশেশ শাহ বলেন, এতে আরও মাথা তুলতে পারে মূল্যবৃদ্ধি। তখন হয়তো সুদ আর কমবে না। ধাক্কা খাবে লগ্নি। তাঁর দাবি, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বৃদ্ধি মার খাবে। আপাতত একমাত্র উপায় উৎপাদন শুল্ক কমানো।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: অনিশ্চয়তা বহাল, জারি পতনও

তাঁর সঙ্গে একমত ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সীতারাম শর্মা ও অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াতও। শর্মা বলেন, ‘‘তেলের দাম বৃদ্ধি ধারাবাহিক ভাবে নানা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’’ দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে পেট্রল, ডিজেলকে জিএসটি-র আওতায় আনার সওয়ালও করেছেন তাঁরা।

যদিও সরকারের তরফে এখনও তেমন সাড়া মেলেনি। কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ জানান, বিষয়টি নজরে রাখা ছাড়া এখনই তাঁদের এ নিয়ে কিছু বলার নেই। আর তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের আশ্বাস, ‘‘বিভিন্ন বিকল্প খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আশঙ্কা

তেলের দাম বাড়লে

• পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়বে

• আরও চওড়া হবে বাণিজ্য ঘাটতি

• মূল্যবৃদ্ধির পারদ চড়বে

• আগামী দিনে সুদের হার বাড়তে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

• সুদ বাড়লে ভাটা পড়বে চাহিদায়

• ঋণ নিতে খরচ বাড়বে শিল্পেরও

• বিনিয়োগ কমাবে তারা

• ধাক্কা খাবে বৃদ্ধি। পণ্ড হবে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া

তবে বণিকসভার উৎপাদন শুল্ক কমানোর প্রস্তাবে খটকা লেগেছে অনেকেরই। কারণ কেন্দ্র এর আগে বলেছিল প্রতি টাকা উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ে ১৩ হাজার কোটি রাজস্ব খোয়াতে হয় তাদের। ফলে শুল্ক কমালে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা কঠিন হবে। অনেকের প্রশ্ন, শিল্প তো সাধারণত ঘাটতির বিপক্ষে। যে কোনও মূল্যে তাকে লক্ষ্যমাত্রায় বাঁধার পক্ষপাতী। তা হলে বণিকসভাগুলি এখন হঠাৎ শুল্ক কমানোর কথা বলছে কেন?

বহু বিশেষজ্ঞের মতে, এর কারণ মূলত দু’টি। এক, ডিজেলের দাম বাড়ায় পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়বে। যা শিল্পের পক্ষে চিন্তার। আর দুই, মাথাচাড়া দেবে মূল্যবৃদ্ধি। তখন সুদ কমানো দূর অস্ত্‌, হয়তো বাড়ানোর পথে হাঁটবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেটা হলে, পুঁজি জোগাড়ের খরচ বাড়বে সংস্থার। মার খাবে লগ্নি। যা অর্থনীতির এগোনোর পথ আটকাবে। তা ছাড়া, সুদ বাড়ালে ভাটা পড়বে চাহিদাতে। সেটাও শিল্পের পক্ষে সুখকর হবে না।

যদিও বেঙ্গল চেম্বারের পরোক্ষ কর কমিটির চেয়ারম্যান তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে লাভ নেই। তাতে কেন্দ্রের আয় কমবে। বাড়বে রাজকোষ ঘাটতি। শিল্পকে চড়া সুদে ধার করতে হবে। তাতেই বরং বাড়বে মূল্যবৃদ্ধি।’’ অনেকের দাবি, আয় বেড়েছে বলেই পরিকাঠামোয় লগ্নি বাড়িয়েছে কেন্দ্র। রাজস্ব কমলে তা-ও ধাক্কা খাবে।

শর্মার মত, অপ্রয়োজনীয় সরকারি খরচ কমিয়েও রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বস্তুত শিল্প কর্তাদের অনেকেরই আপত্তি আয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জ্বালানিকে অস্ত্র করার ঝোঁক নিয়ে।

এ দিন কংগ্রেসের সচিন পায়লট, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শরদ যাদব ও আম আদমি পার্টিও তেলের দাম নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন। এ দিকে, ২০ জুলাই থেকে প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে ট্রাক মালিকদের সংগঠন এআইএমটিসি। সব মিলিয়ে বিতর্ক আপাতত তুঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন