গাঁটছড়া অ্যামাজনের সঙ্গে

নেটে বিক্রিবাটার ব্যবসায় লগ্নি নারায়ণমূর্তির সংস্থার

ইনফোসিস পর্ব শেষ। এ বার অন্য সম্ভাবনাময় ব্যবসার বৃত্তে মন দিচ্ছেন এন আর নারায়ণমূর্তি। নিজের হাতে গড়া তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা থেকে প্রথম বার অবসরের পর ব্যক্তিগত সঞ্চয়কে পুঁজি করে ক্যাটামারান ভেঞ্চার্স নামে লগ্নি-সংস্থা তৈরি করেছিলেন নারায়ণমূর্তি। সেই সংস্থাই এ বার টাকা ঢালছে ভারতে অনলাইনে জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবসায় (ই-কমার্স)।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০২:৪০
Share:

ইনফোসিস পর্ব শেষ। এ বার অন্য সম্ভাবনাময় ব্যবসার বৃত্তে মন দিচ্ছেন এন আর নারায়ণমূর্তি।

Advertisement

নিজের হাতে গড়া তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা থেকে প্রথম বার অবসরের পর ব্যক্তিগত সঞ্চয়কে পুঁজি করে ক্যাটামারান ভেঞ্চার্স নামে লগ্নি-সংস্থা তৈরি করেছিলেন নারায়ণমূর্তি। সেই সংস্থাই এ বার টাকা ঢালছে ভারতে অনলাইনে জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবসায় (ই-কমার্স)। এ জন্য তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স বহুজাতিক অ্যামাজন-এর এশীয় শাখা। নতুন তৈরি এই যৌথ উদ্যোগের শাখা সংস্থা এ বার পাখির চোখ করবে এ দেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলিকে। যা সংখ্যায় প্রচুর, কিন্তু নেট ব্যবহারে তেমন দড় নয়। এই সমস্ত ব্যবসাগুলির জন্য অনলাইনে বিক্রিবাটার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে ক্যাটামারান এবং অ্যামাজন-এশিয়ার এই যৌথ উদ্যোগ।

বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালে এ দেশে নেটে কেনাকাটার মোট অঙ্ক ছিল ২০০ কোটি ডলার। কিন্তু তারা মনে করে, ২০২১ সালের মধ্যে এই ব্যবসাই পৌঁছে যাবে ৭,৬০০ কোটি ডলারে। ফলে এই সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক অ্যামাজন। কিন্তু ভারতে ই-কমার্সে বিদেশি লগ্নি নিয়ে এখনও নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা ক্যাটামারানের হাত ধরায় সেই সমস্যা না-হওয়ারই কথা।

Advertisement

কারণ, এই নতুন যৌথ উদ্যোগে ৫১% অংশীদারি থাকবে নারায়ণমূর্তির সংস্থার। বাকিটা থাকবে অ্যামাজনের হাতে। ফলে সিংহভাগ শেয়ার ক্যাটামারানের কাছে থাকায় ওই নতুন যৌথ উদ্যোগ পরিচিত হবে ভারতীয় সংস্থা হিসেবে। ফলে তখন তার শাখা সংস্থা যদি ই-কমার্সের পরিসরে ছোট ও মাঝারি ব্যবসাকে অনলাইনে কেনা-বেচার পরিকাঠামো গড়ে দেয়, তা হলে বাধা থাকবে না তাতে। এই গাঁটছড়ার কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে ক্যাটামারান। যদিও নারায়ণমূর্তি এর পরিচালন পর্ষদে (বোর্ড) থাকবেন না বলেই তাদের দাবি। অন্য দিকে, এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি অ্যামাজন। কিন্তু ওই সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানান, এর জন্য ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলিকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং জিনিস পৌঁছে দেওয়ায় সহায়তা দেবে অ্যামাজন-ই।

ইনফোসিস থেকে ২০১১ সালে প্রথম বার সরে দাঁড়ানোর সময় নারায়ণমূর্তি জানিয়েছিলেন, এর পর নিজের তৈরি ‘ফান্ড’ থেকে তিনি অর্থ জোগাবেন সম্ভাবনাময় উদ্যোগপতিদের। মন দেবেন নতুন নারায়ণমূর্তির খোঁজে। কিন্তু এর পর দু’বছর না-কাটতেই ওই সংস্থার শীর্ষে ফিরতে বাধ্য হন তিনি।

কারণ, তাঁর অবসরের পর পায়ের তলার জমি আলগা হয়েছিল ইনফোসিসের। সাধারণত সংস্থার পূর্বাভাসের দিকে বরাবর সাগ্রহে তাকিয়ে থাকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ও শেয়ার বাজার। কিন্তু নিজেদের সেই পূর্বাভাস মেলাতেই হিমসিম খাচ্ছিল তারা। কমছিল মুনাফার হার। বাজারের দখল ছিনিয়ে নিচ্ছিল টিসিএস, কগনিজ্যান্টের মতো প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীরা। টানা এক দশক যে সংস্থার শেয়ার দরের রকেট গতিতে উত্থান চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল, স্টক এক্সচেঞ্জে সময় ভাল যাচ্ছিল না তাদেরই। এই পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের মে মাসে অবসর ভেঙে ফিরে সংস্থার রাশ ধরেন ৬৭ বছরের নারায়ণমূর্তি।

তিনি ফেরার পর সংস্থার মুনাফার হার কিছুটা শুধরেছিল। কিন্তু তেমনই সংস্থা ছাড়েন ১১ জন শীর্ষ স্তরের কর্তা। এর পর গত ১২ জুন বিশাল সিক্কার হাতে ইনফোসিস চালানোর ভার সঁপে ‘বানপ্রস্থে যাওয়া’র কথা ঘোষণা করেন নারায়ণমূর্তি। ইনফোসিসের নন এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান কে ভি কামাথ এ দিনই বলেছেন, অবসর ভেঙে ফিরে সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর কঠিন কাজটুকু করে গিয়েছেন তার কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠাতা। খরচে রাশ টেনেছেন। বাড়িয়েছেন ব্যবসার বহর।

এই ‘কঠিন’ কাজ সেরে ‘ছুটি নেওয়া’র দিন নারায়ণমূর্তিও বলেছিলেন, এ বার নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পড়বেন বইপত্র। কিন্তু ব্যবসার দুনিয়া থেকে তিনি কিছু দিনও দূরে থাকলেন কই? বরং তাঁর ক্যাটামারান লগ্নি করল এমন এক ব্যবসায়, যা এ দেশের বিশাল বাজারে ইতিমধ্যেই অন্যতম সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত। অবশ্য সুযোগ চিনতে কবেই বা ভুল হয়েছে তাঁর? অবসরের পরেও ভাল সুযোগের খোঁজে নারায়ণমূর্তি অক্লান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন