দেশে পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিলের জেরে ব্যাঙ্কের ঘরে জমা পড়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনই ঋণে সুদ কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, নোট নাকচের পরে পুরনো নোট জমা পড়ায় যে বিপুল তহবিল ব্যাঙ্কগুলির হাতে এসেছিল, তার প্রায় অর্ধেকই গ্রাহকরা ফের তুলে নিয়েছেন। সুদ কমানোর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত দেনা ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর অশ্বিনী কুমার।
এমনকী দেনা ব্যাঙ্ককর্তার দাবি, নোট কাণ্ডের জেরে চলতি আর্থিক বছরে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ার তেমন কোনও আশাও নেই বললেই চলে। যার কারণ হিসেবে টাকা-পয়সা নিয়ে অনিশ্চয়তার আবহে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন তিনি।
সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের জন্য দেনা ট্রেড ফিনান্স প্রকল্পের প্রচারে কলকাতায় এসেছিলেন কুমার। তখনই তিনি বলেন, ‘‘নোট নাকচের পরে আমাদের ব্যাঙ্কে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা জমা পড়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার কোটি গ্রাহকরা তুলে নিয়েছেন। এর পর টাকা তোলার ব্যাপারে বাধানিষেধ পুরোপুরি উঠে গেলে, বাকিটাও বেরিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তাই ওই টাকার উপর ভিত্তি করে ঋণে সুদ কমানো হতে পারে, এ রকম যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, সেটা এখন ভিত্তিহীন হয়ে পড়েছে।’’
পাশাপাশি, নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী পুরনো নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করার পরে গত দু’মাস ধরে ব্যাঙ্কে ঋণ দেওয়ার কাজ অনেকখানি ধাক্কা খেয়েছে বলে দাবি দেনা ব্যাঙ্ককর্তার। বিশেষ করে যেহেতু কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তের জেরে ঋণের চাহিদাও কমেছে। যে-কারণে কুমারের আশঙ্কা, এ বছরে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ আগের বারের থেকে বাড়বে না।
এ দিকে, আগের দু’বছরে প্রায় নতুন ৩৫০টি শাখা খোলার পরে এই অর্থবর্ষে আরও ২৬টি শাখা খুলবে দেনা ব্যাঙ্ক। এর মধ্যে ২টি চালু হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। ছড়ানো হবে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থাও। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা মেটানোর পরিষেবা বাড়াতে সারা দেশে মার্চের মধ্যেই মোট ১০ হাজার ‘পয়েন্ট অব সেল’ মেশিন (কার্ড ঘষে টাকা দেওয়ার যন্ত্র) চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা।
কুমার জানান, এ সবের পাশাপাশি ব্যাঙ্কের আর্থিক ভিত মজবুত করতে অনুৎপাদক সম্পদ আদায়ের লক্ষ্যে দেউলিয়া আইনের সুযোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। প্রথম দফায় গোটা চারেক বড় ঋণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বার সেগুলি আদায়ে এই আইনের সাহায্য নেওয়া হবে।