Share Market

নতুন আর্থিক বছরেও ভাল উত্থানের আশায় লগ্নিকারী

সেনসেক্স ও নিফ্‌টি, দুই সূচকই গত এপ্রিল থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে যথাক্রমে ২৪.৮৫% ও ২৮.৬১%। তবে তাদের অনেক পিছনে ফেলে অবিশ্বাস্য গতিতে দৌড়েছে বাজারে মোট শেয়ারমূল্যের নিরিখে মাঝারি এবং ছোট শেয়ারগুলি।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অর্থবর্ষ ২০২৩-২৪ লগ্নিকারীদের লাভের ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছে। সদ্য ফেলে আসা বছরে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হারে সম্পদ বেড়েছে শেয়ার ও শেয়ার ভিত্তিক ফান্ড ক্রেতাদের অ্যাকাউন্টে। অন্য দিকে, জমায় সুদের হার মোটের উপর চড়া থাকায় ঝুঁকিবিমুখ স্থির আয় প্রকল্পের লগ্নিকারীরাও হতাশ হননি।

Advertisement

সেনসেক্স ও নিফ্‌টি, দুই সূচকই গত এপ্রিল থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে যথাক্রমে ২৪.৮৫% ও ২৮.৬১%। তবে তাদের অনেক পিছনে ফেলে অবিশ্বাস্য গতিতে দৌড়েছে বাজারে মোট শেয়ারমূল্যের নিরিখে মাঝারি (মিডক্যাপ) এবং ছোট (স্মলক্যাপ) শেয়ারগুলি। নিফ্‌টি মিডক্যাপ ১০০ এবং নিফ্‌টি স্মলক্যাপ ১০০ বেড়েছে যথাক্রমে ৬১% ও ৭২%। বড়দের মধ্যে সব থেকে বেড়েছে যে দু’টি শেয়ার তারা হল, টাটা মোটরস (১৩৬%) এবং বজাজ অটো (১৩৫%)। তবে এমন উজ্জ্বল বাজারেও যে সব বড় শেয়ার মাথা নামিয়েছে তার মধ্যে আছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ও এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক।

গত অর্থবর্ষে বিশ্বে শেয়ার সূচকের মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে জাপানের নিক্কেই (৪৩%)। তার পরেই রয়েছে ভারতের নিফ্‌টি। ভারতীয় সূচকের চড়া উত্থানের বড় কারণ ছিল, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিপুল বিনিয়োগ। যার মোট অঙ্ক ছুঁয়েছে ২০.২৪ লক্ষ কোটি টাকা। গত এক দশকে এ দেশে এটি তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বার্ষিক লগ্নি। বাজারে মোটা পুঁজি ঢুকেছে মিউচুয়াল ফান্ড থেকেও।

Advertisement

মাঝেমধ্যে সংশোধন হয়েছে বটে। তবে অর্থনীতি ভাল জায়গায় থাকার সুবাদে একটু বড় মেয়াদে বাজারের মুখ উপরের দিকেই ছিল। শেষ সপ্তাহেও সেনসেক্স বেড়েছে ৮১৯ পয়েন্ট। বছর শেষ করেছে ৭৩,৬৫১ অঙ্কে। শুক্রবার, আর্থিক বছরের শেষ শেয়ার লেনদেনের দিনে সূচক ওঠায় ব্যাঙ্ক এবং লগ্নিকারী সংস্থাগুলির হিসেবের খাতায় শেয়ার মূল্য ভাল দেখাবে।

বছর শেষে বিএসই-তে মোট লগ্নিকারীর সংখ্যা প্রায় ৩.৯২ কোটি (৩০.৬৪%) বেড়ে হয়েছে ১৬.৭১ কোটি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আছে ৯২.২৫ লক্ষ অ্যাকাউন্ট। রাজ্য হিসেবে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং রাজস্থানের পরেই বাংলার স্থান।

এ বার সামনের দিকে তাকানো যাক। কেমন যেতে পারে আজই পা রাখা নতুন অর্থবর্ষ (২০২৪-২৫), একটু দেখে নেব—

  • অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অনুমান, চলতি অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) শেষ তিন মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি -মার্চে ভারতের জিডিপি ৮% বা তার বেশি বাড়বে। গোটা বছরেও আর্থিক বৃদ্ধির হার একই রকম হতে পারে।
  • অর্থনীতির বৃদ্ধি প্রতিফলিত হয় শিল্প সংস্থা আর্থিক ফলে। তাদের জানুয়ারি-মার্চের হিসাবের খাতা প্রকাশ হতে শুরু করবে দু’সপ্তাহের মধ্যেই। মোটের উপর ফল ভাল হলে, তা বাজারকে আরও উপরে তুলবে।
  • গত বছর বেশি বেড়েছিল মিডক্যাপ ও স্মলক্যাপ। এ বার নজর থাকবে লার্জক্যাপ বা বড় সংস্থার দিকে।
  • সুদ ঠিক করতে বুধ থেকে শুক্রবার বৈঠকে বসবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি। অনুমান, মূল্যবৃদ্ধি বাগে না আসায় এ বারও সুদ স্থির থাকতে পারে। অর্থাৎ রেপো রেটের (যে সুদে আরবিআই ধার দেয় ব্যাঙ্কগুলিকে) ৬.৫ শতাংশে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা।
  • গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ ১৯.৮৮% বেড়ে পৌঁছেছে প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকায়।। কর্পোরেট সংস্থাগুলি কর দিয়েছে ৯.১৪ লক্ষ কোটি। ভাল বেড়েছে জিএসটি আদায়। এই সব পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, অর্থনীতি ভাল গতিতেই এগোচ্ছে।
  • ভোটকে কেন্দ্র করে বিপুল টাকা খরচ করে কেন্দ্র ও রাজনৈতিক দলগুলি। যা বাজার দরকে ঠেলে তুলতে পারে। ফলে শক্ত হতে পারে মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনার কাজ।
  • নির্বাচনের ফল কী হতে পারে, তা ধরে নিয়ে বাজার এরই মধ্যে নিজেকে এক রকম গুছিয়ে নিয়েছে। অর্থাৎ ফল অন্য রকম কিছু না হলে বড় মেয়াদে তেমন প্রভাব হয়তো থাকবে না। ছোট মেয়াদে প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।
  • এ বার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস কয়েকটি আবহাওয়া সংস্থার। সেটা হলে, গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত হবে। দেশে নামতে শুরু করবে খাদ্যপণ্যের দাম। যা উস্কে দেবে সুদ কমানোর সম্ভাবনাকে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন