প্রতীকী ছবি।
কাজ হারানোর মন খারাপ আর চাকরি খোয়ানোর আতঙ্কও এখন পুঁজি নতুন ব্যবসার!
এমনিতেই ব্যক্তিগত জীবনে হাজারো জটিলতা আর কাজে নিরাপত্তার অভাবের জেরে অবসাদ ক্রমশ মহামারীর আকার নিচ্ছে এই দেশে। হালে তার আঁচ সম্ভবত অন্যতম বেশিমাত্রায় টের পেয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্মীরা। এক দিকে আমেরিকা-ব্রিটেনের মতো দেশে ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি। অন্য দিকে, মেশিন ও আধুনিক প্রযুক্তির কাজ কেড়ে নেওয়া। এই দু’য়ের সাঁড়াশি আক্রমণে অনেকে কাজ খুইয়েছেন। বাকিরাও চাকরি হারানোর ভয়ে কাঁটা। কেউ মুষড়ে পড়েছেন চোখের সামনে একের পর এক সহকর্মীর হাতে ‘পিঙ্ক স্লিপ’ ধরানো দেখে। তাই মরিয়া
হয়ে মনে চেপে বসা অবসাদের পাহাড় সরানোর দাওয়াই খুঁজছেন তাঁরা। আর সেই খোঁজই চাহিদার জ্বালানি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বেশ কিছু ‘স্টার্ট-আপ’ সংস্থার জন্য।
বেঙ্গালুরুর ‘ইওর দোস্ত’, গুড়গাঁওয়ের ‘ইসাইক্লিনিক’ ও ‘হেলথ ই মাইন্ডস’, মুম্বইয়ের ‘টাইপ এ থট’ বা আমদাবাদের ‘ওমানিয়া’। অনলাইনে মানসিক সমস্যা মেটানোর পরিষেবা দেওয়া এই সমস্ত স্টার্ট-আপেরই দাবি, দ্রুত চড়তে থাকা চাহিদার পারদই ঠিক করে দিচ্ছে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা।
চাকরি উধাও
ভারতে কাজের সুযোগ কমছে ৫ বছর ধরেই
২০১৫-’১৬ সালে নিয়োগের কথা ছিল ২.৭৫ লক্ষ। হয়েছে ২ লক্ষ। কাজের সুযোগ তৈরির ছবি মলিন ২০১৬-’১৭ সালেও
কাজ গেলে কোথায় যাব, দিনরাত সেই দুশ্চিন্তা
বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্ট-আপ যেমন জানাচ্ছে, মাত্র তিন দিনের জন্য হেল্পলাইন খোলা ছিল তাঁদের। যাঁরা চাকরি খুইয়েছেন বা সেই আশঙ্কায় কাঁটা, তাঁরাই ছিলেন এর মূল লক্ষ্য। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্মীরা। সংস্থার দাবি, তিন দিনে ২৫০টিরও বেশি ফোন-কল এসেছে। চ্যাটে সমস্যা জানিয়েছেন আরও ৮০০ জন। ইওর দোস্তের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিচা সিংহের দাবি, হালফিলে যাঁরা সমস্যা নিয়ে আসছেন, তাঁদের ৪৩% তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালেই অবসাদে ভুগছিলেন ১৫% ভারতীয়। কেন্দ্রের হিসেবেও প্রতি পাঁচ জনের এক জন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর অনেকখানিই জুড়ে রয়েছে কাজের জায়গা নিয়ে আশঙ্কা।
হেলথ ই মাইন্ডসের অঙ্কিতা পুরী ও টাইপ এ থটের অজয় ফডকের দাবি, সমস্যা নিয়ে এখন সচেতনতা বাড়লেও হাতের কাছে সমাধান কিন্তু সে ভাবে নেই। শহরে মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসক যা-ও বা পাওয়া যায়, ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে তা নেই। অনলাইনে সেই পরিষেবা সর্বত্র পৌঁছতে পারলে ঘাটতি কিছুটা মিটবে বলে দাবি স্টার্ট-আপ মহলের।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে অবসাদ সমস্যার সমাধান খুঁজছে কর্মী সংগঠন ফাইট। কর্মীদের অস্বস্তি দূর করতে পেশাদারি সাহায্য দিচ্ছে ইনফোসিসের মতো সংস্থা। কিন্তু দিনের পর দিন প্রচণ্ড চাপ কিংবা চাকরি যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতার মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো এ দেশের কর্পোরেট দুনিয়ায় এখনও নেই। সেই ঘাটতি মেটানোর সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই ডানা মেলছে একগুচ্ছ স্টার্ট-আপ।
তথ্যসূত্র: হর্সেস ফর সোর্সেস রিসার্চ ও বিশ্বব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান