অবশেষে অবসান হল দীর্ঘ দিন ধরে চলা পাঁচ রাজ্যের ভোটপর্ব। ফলাফল যা এসেছে তাতে শেয়ার বাজারের উপর বড় কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়।
অসম রাজ্যের দখল নিলেও অন্যান্য রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। ভোটের পরে বাজার এখন বর্ষার দিকে তাকিয়ে। তবে বর্ষা তার আগমন এক সপ্তাহ পিছিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বর্ষা আসার আগেই উত্তর-পূর্বে ভাল বৃষ্টি হলেও জ্বলে খাক হয়ে যাচ্ছে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ। কোনও কোনও জায়গায় তাপমাত্রা ভেঙে দিয়েছে ১০০ বছরের রেকর্ড। ওই সব অঞ্চলে চলছে ভয়ঙ্কর জলকষ্ট। শুধু কৃষিই নয়, মার খাচ্ছে বহু শিল্প। প্রমাদ গুনছে সাবান শ্যাম্পু ইত্যাদির মতো জলনির্ভর পণ্য প্রস্তুতকারী বেশ কিছু সংস্থা। তবে ‘রোয়ানু’ বাংলাদেশে বিপর্যয় ডেকে আনলেও তার কল্যাণে কৃষিজমি জল পেয়েছে অন্ধ্র, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। কমেছে তাপমাত্রাও। এখন অপেক্ষা আর সপ্তাহ তিনেকের।
মোদী সরকারের দু’বছর পূর্ণ হল। সরকারের কয়েকটি নতুন উদ্যোগ কম-বেশি সাফল্য পেলেও সরকারের রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় শ্লথ হয়ে আছে সংস্কারের বিভিন্ন কাজ। ফলে বড় রকমের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল। বাজারের ঊর্ধ্বগতির জন্য এই সব বিল পাশ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এ দিকে, এটাই কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের শেষ সপ্তাহ। এই ছ’দিনে ভাল-মন্দ ফলাফলের বড় রকমের প্রবাহ থাকবে বাজারে। অর্থাৎ চলতি সপ্তাহে বেশ চঞ্চল থাকবে শেয়ার সূচকগুলি।
গত সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ করেছে কলকাতার দুই নামী সংস্থা সিইএসসি এবং আইটিসি। শেষ তিন মাস এবং গোটা বছরে সিইএসসি-র আয় ও মুনাফা খুব বেশি না-বাড়লেও, গোটা বছরের নিরিখে এই সংস্থাটি একত্রিত ভাবে (কনসলিডেটেড) কিন্তু ভালই ফলাফল উপহার দিয়েছে। নিট একত্রিত লাভ ১৯৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে উঠে এসেছে ৩৬৬ কোটি টাকায়। ফলে একত্রিত শেয়ার পিছু আয় ১৫.৫১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭.৬৪ টাকা।
তবে স্থানীয় এই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বণ্টন কোম্পানির ফলাফলে তেমন কোনও চমক না-থাকলেও অপ্রত্যাশিত বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণায় নজর কেড়েছে আইটিসি। সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে সম্প্রতি কিছু সমস্যা হলেও সদস্যদের খুশি করার মতো ফলাফল উপহার দিতে পেরেছে অগ্রণী এফএমসিজি বা ভোগ্যপণ্য সংস্থা আইটিসি। শেষ তিন মাসে কোম্পানির আয় এবং নিট লাভ বেড়ে পৌঁছেছে যথাক্রমে ১০,০৬২ কোটি এবং ২৪৯৫ কোটি টাকায়। পাশাপাশি, প্রতি দুটি শেয়ারে একটি করে বোনাস শেয়ার ইস্যুর সুপারিশ করেছে কোম্পানির পরিচালন পর্ষদ। গত ১৯৭৮ সাল থেকে এই নিয়ে মোট ৮ বার বোনাস শেয়ার ইস্যু করল আইটিসি। এ বারের বোনাস ইস্যুর কারণে শেয়ার মূলধন ৪০২ কোটি টাকা বাড়লেও মনে রাখতে হবে, কোম্পানি সংরক্ষিত মূলধন খাতে স্থানান্তরিত করছে ৯৯০ কোটি টাকা। বিশেষ ডিভিডেন্ড-সহ কোম্পানির সদস্যরা এ বার প্রতিটি ১ টাকা মূল্যের শেয়ার পিছু ডিভিডেন্ড পাবেন ৮.৫০ টাকা। কোম্পানির শেয়ারের বাজার দর তেমন না-বাড়লেও ভাল ডিভিডেন্ড এবং নিয়মিত বোনাসের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের খুশি রেখেছে এই কোম্পানি।
এ ছাড়াও গোটা আর্থিক বছরে তথা শেষ তিন মাসে বেশ ভাল ফলাফল উপহার দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী লুপিন লিমিটেড। সারা বছরে সংস্থাটির লাভ দাঁড়িয়েছে ২৮৮৫ কোটি টাকা। তবে মনে রাখতে হবে, কোনও কোনও কোম্পানি ভাল ফলাফল প্রকাশ করলেও, মোটের উপর চিত্রটা মোটেই চিত্তাকর্ষক নয়।
ফলাফলে এ বার বড় রকমের ধাক্কা এসেছে ব্যাঙ্কিং শিল্পের উপর। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি বড় মাপের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে যথেষ্ট ভুগতে দেখা গিয়েছে। রেকর্ড লোকসানের তথ্য প্রকাশ করেছে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক-সহ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। অনাদায়ী ঋণের পাহাড় মাথায় চেপে বসেছে দেশের প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাঙ্কের। অবস্থা যা, গোটা অর্থনীতির কাছেই এটি এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দেশ এবং বিদেশ থেকে পাওয়া নানা খবরের ঘাত-প্রতিঘাতে সেনসেক্স আবার গুটিগুটি নেমে এসেছে ২৫ হাজারের কাছে।
অন্য দিকে, সোনার দাম এখন বেশ খানিকটা উপরের দিকে মাথা তুলেছে। ফলে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন গোল্ড ইটিএফে লগ্নিকারীরা। তবে সকলেরই একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত— সোনা সাময়িক লাভের সন্ধান দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে ইকুইটি কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে যাবে। বর্ষা ভাল হলে আশা অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরবে। জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি বৃদ্ধির হার যদি ৭.৫ শতাংশের আশেপাশে থাকে, তবে ইকুইটির বাজার কিন্তু আদৌ ঝিমিয়ে থাকবে না। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্যও অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরা আশু প্রয়োজন।