পাট পচানোর জলে টান, চিন্তায় চাষিরা

জলের অভাব রয়েছে খাল-বিলে। ফলে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন কয়েক লক্ষ পাট চাষি।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৩
Share:

দুর্দশা: জলে টান। রাস্তার ধারেই পড়ে কেটে রাখা পাট গাছ। মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার বিভিন্ন ব্লকে ছবিটা এ রকমই।

রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে বটে, কিন্তু তাকে পাটের পক্ষে ঠিক সময়ে ভারী বৃষ্টি বলা যায় না। জলের অভাব রয়েছে খাল-বিলে। ফলে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন কয়েক লক্ষ পাট চাষি। কারণ, পাট গাছ পচানোর জন্য পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক দিনে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, কোচবিহার এবং দুই দিনাজপুরের মতো পাট উৎপাদক জেলায় ভারী বৃষ্টি না হলে রাজ্যের পাট উৎপাদন বড় ধাক্কা খাবে। মার খাবে তন্তুর মানও। অথচ দেশে যে পাট উৎপাদন হয় তার ৪৫-৫০ শতাংশই জোগান দেয় এই জেলাগুলি।

Advertisement

এ বছর এপ্রিলের গোড়ায় প্রায় রোজই ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। জমিতে জল জমে পাট গাছের কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু এখন সত্যিই জল প্রয়োজন। অথচ বৃষ্টির অভাবে পাট পচানোর জায়গা পাচ্ছেন না চাষিরা। জাতীয় পাট পর্ষদের কর্তারা বিভিন্ন জেলা থেকে রিপোর্ট পেয়েছেন, ওই জেলাগুলির বহু ব্লকে চাষিরা পাট গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রেখেছেন। পর্ষদের এক কর্তার বক্তব্য, সাধারণত পাট গাছের বয়স ১২০ দিন হয়ে গেলে তা জাঁক (জলে ডুবিয়ে পচানো) দেওয়ার সময় হয়ে যায়। সঠিক সময়ে পচাতে পারলে পাওয়া যায় ভাল মানের কাঁচা পাটও। কৃষি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বৃষ্টিপাত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যে কোনও চাষের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরিমাণ মতো জল প্রয়োজন। গত কয়েক বছর সেই জলেরই অভাবে ভুগছেন পাট চাষিরা। উদ্বিগ্ন চটকল মালিকেরাও।

মুর্শিদাবাদ জেলায় পাট পর্ষদের ব্লক সুপারভাইজার অলোক ঘোষ বলেন, ‘‘বৃষ্টি না হওয়ায় নওদা, হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গি, ভগবানগোলা, বেলডাঙা ব্লকে জলের অভাবে পাট গাছ পচানো যাচ্ছে না।’’ নদিয়ায় পর্ষদের দায়িত্বে থাকা সাগর মুখোপাধ্যায় জানান, তেহট্ট, করিমপুর, পলাশিপাড়া-সহ বহু ব্লকে জলের অভাবে চাষিরা পাট কাটছেন না। ফলে জমিতেই গাছ কালো হয়ে মরতে শুরু করেছে। প্রশাসনিক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

জল উদ্বেগ

• পাট পচাতে প্রয়োজন কোমর থেকে বুক জল।

• ভাল জল হলে তন্তুর মান ও রং ভাল হয়।

• কম ও অপরিষ্কার জলে মান খারাপ হয়।

• জাঁক দিতে হয় ১২০ দিন বয়সে।

• সাধারণত ২০ দিন জলে ডোবানো হয়।

• বয়স বেড়ে গেলে গাছ নষ্ট হয়ে যায়।

ঘটনা হল, গ্রামাঞ্চলে খাল-বিল, ডোবা, নয়ানজুলি প্রায় বুজে গিয়েছে। ভাল জল না পেলে অপরিষ্কার জলেই পাট গাছ ডুবিয়ে মাটি চাপা গিয়ে পচাতে বাধ্য হন চাষিরা। ফলে কাঁচা পাটের রং ও মান খারাপ হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন