কলকাতার আকর্ষণ এখনও বাধা জেলা-শহরে লগ্নিতে

কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গড়তে লগ্নি টানার কথা বারবার বলেছে রাজ্য। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মেলেনি এখনও। এ বার রাজ্যের প্রস্তাবিত অধিকাংশ ‘থিম সিটি’ প্রকল্পেও বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কলকাতা থেকে তাদের দূরত্ব আর পরিকাঠামোর অভাব।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১১
Share:

কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গড়তে লগ্নি টানার কথা বারবার বলেছে রাজ্য। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মেলেনি এখনও। এ বার রাজ্যের প্রস্তাবিত অধিকাংশ ‘থিম সিটি’ প্রকল্পেও বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কলকাতা থেকে তাদের দূরত্ব আর পরিকাঠামোর অভাব। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের অবশ্য দাবি, প্রকল্প ঘোষণার পর থেকেই আগ্রহ দেখিয়েছে নির্মাণ সংস্থাগুলি।

Advertisement

বোলপুর, আসানসোল, কল্যাণী, বারুইপুর, শিলিগুড়ির কাছে ডাবগ্রাম, এবং হাওড়ার ডুমুরজলায় ‘থিম’ (একটি করে নির্দিষ্ট বিষয়ের ভিত্তিতে) শহর তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। হাওড়ায় বিষয় খেলা, বারুইপুরে স্বাস্থ্য পরিষেবা, ডাবগ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, আসানসোলে শিল্প, বোলপুরে শিল্প-সংস্কৃতি আর কল্যাণীতে তথ্য বিশ্লেষণ।

এ জন্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে বিস্তারিত তথ্য। প্রতি প্রস্তাবিত শহরের জন্য রয়েছে এক লপ্তে অন্তত ৫০ একর জমি। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাইয়ের পরামর্শ মেনে ধাপে ধাপে জমির দাম নিতেও রাজি হয়েছে সরকার। ছাড় দেওয়া হয়েছে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ বা জমির অনুপাতে নির্মিত বর্গ ফুটের পরিমাণে। যাতে তুলনায় কম জমিতে বেশি বর্গ ফুট তৈরি করে লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে নিতে পারে নির্মাণ সংস্থা। সে দিক থেকে দেখলে, বিনিয়োগ টানার সব রসদই মজুত। কিন্তু তা সত্ত্বেও লগ্নিকারীদের বিশেষ আগ্রহ নেই।

Advertisement

এই প্রস্তাবিত শহরগুলির মধ্যে ডুমুরজলা আর বারুইপুর কলকাতার গায়ে লাগা। খুব দূরে নয় কল্যাণীও। আর বাকিগুলি দেড়শো থেকে সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার। নির্মাণ শিল্পমহলের মতে, কলকাতা পেরোলেই ক্রমশ কমতে থাকে ব্যবসার জরুরি তিনটি উপকরণ। পরিকাঠামো (বিশেষত শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক পরিকাঠামো), বাজারের মাপ এবং ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা। এ ক্ষেত্রেও এই তিনটি জিনিসের অভাবই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে থিম সিটির পথে।

বণিকসভার এক কর্তার মতেও, রাজ্যে সমান ভাবে শিল্পায়ন কখনও হয়নি। উন্নয়ন যেটুকু হয়েছে, তা কলকাতাতে ঘিরে। ফলে জেলাগুলিতে গড়পড়তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এক জায়গাতেই আটকে রয়েছে। ফলে মুম্বইয়ের পাশে যে ভাবে পুণে বা নাগপুর গড়ে উঠেছে, এ রাজ্যে তা হয়নি। কলকাতার বাইরে সে ভাবে তৈরি হয়নি বাজার কিংবা কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও।

সংশ্লিষ্ট মহলের কথায় উঠে এসেছে পরিকাঠামোর অভাবের কথাও। বিশেষত সামাজিক পরিকাঠামোর দৈন্য দশার কথা বারবার বলছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ সংস্থার কর্তার প্রশ্ন, ‘‘ভাল স্কুল, কলেজ বা হাসপাতালের জন্য এখনও কলকাতায় দৌড়তে হয়। তাহলে কলকাতায় না-কিনে জেলায় কেউ বাড়ি কিনতে যাবেন কেন?’’

প্রসঙ্গত, এই সমস্যা নিয়ে একাধিক বার রাজ্যের কাছে দরবার করেছে বণিকসভাগুলি। কিছুদিন আগেই সিআইআইয়ের অনুষ্ঠানে জেলাস্তরে পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সরাসরি অভিযোগ করেন টাটা গোষ্ঠীর এক সংস্থার কর্তা। তাঁর অভিযোগ, ভাল স্কুল ও হাসপাতাল নেই বলে সংস্থায় দক্ষ কর্মী ধরে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বোলপুর, আসানসোল ও ডাবগ্রাম প্রকল্পে দরপত্র জমার শেষ তারিখ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে। হিডকোর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কল্যাণী ও বারুইপুরের জন্য দরপত্র (টেকনিক্যাল বিড) দেওয়ার শেষ তারিখ যথাক্রমে ১২ ডিসেম্বর ও ২৩ নভেম্বর। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, প্রকল্পগুলিতে আশানুরূপ সাড়া দেয়নি নির্মাণ সংস্থাগুলি। যে কারণে চূড়ান্ত দরপত্র দেওয়ার দিন পিছোতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন