পুনরুজ্জীবন না কি ব্যবসা গোটানো— বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের ভবিষ্যৎ কোন খাতে বইবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। বিআইএফআর উঠে যাওয়ার পরে নতুন দেউলিয়া বিধি মেনে মে মাসে ন্যাশনাল কোম্পানি আইন ট্রাইব্যুনালে (এনসিএলটি) গিয়েছে ওয়াগন তৈরির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই কেন্দ্র নীতি আয়োগের পরামর্শে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড গুটিয়ে নেওয়ার পথে হাঁটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন অভিযোগ তাঁর কানে এসেছে বলে ওই সিদ্ধান্ত না-নেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি লিখে আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে পাঠানো ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, নীতি আয়োগের সুপারিশ মেনে কেন্দ্র বার্ন স্ট্যান্ডার্ড গোটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কানে এসেছে তাঁর। এ জন্য রেল বোর্ড না কি প্রস্তাবও তৈরি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়া এবং জমি বিক্রি করে পাওনাদারদের দাবি মেটানোর পরিকল্পনা। কিন্তু সংস্থার আর্থিক হাল যেহেতু ফিরছে, তাই রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী সংস্থাটিকে গুটিয়ে না-নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
সংস্থা পুনরুজ্জীবন নিয়ে আশাবাদী কর্তৃপক্ষও। সিএমডি আসদ আলমের দাবি, ‘‘সংস্থার সম্পদ প্রায় ৬০০ কোটি টাকার। দায় ২০০ কোটির মতো। তাই আমাদের বিশ্বাস, পুনরুজ্জীবন সম্ভব।’’ শুধু তা-ই নয়, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে তারা সামান্য হলেও মুনাফা করেছে। কর্তৃপক্ষের মতে, দীর্ঘ ৭ বছর পরে লাভের মুখ দেখা তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁদের দাবি, উৎপাদনও চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে মাসে গড়ে ১০০টিরও বেশি ওয়াগন তৈরি করেছে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড। ঢালাই পণ্যের উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
• ১৯৯৪: বিআইএফআরে গেল বার্ন স্ট্যান্ডার্ড
• ১৬/১২/১৬: উঠে গেল বিআইএফআর
• ১৬/০৫/১৭: নতুন দেউলিয়া বিধি মেনে এনসিএলটি-তে গেলেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ
• ৩১/০৫/১৭: বিশেষজ্ঞ (আইআরপি) নিয়োগ, পাওনাদারদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে নির্দেশ দিল এনসিএলটি
(এর পরে মূল্যায়নকারীকে নিয়োগ করেছে আইআরপি)
• ২৩/০৬/১৭: এর মধ্যে আইআরপি-কে রিপোর্ট দেবে মূল্যায়নকারী
• ৩০/০৬/১৭: আইআরপি রিপোর্ট পেশ করবে পাওনাদারদের কমিটিকে
• ১১/০৭/১৭: কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে এনসিএলটি-কে
• নভেম্বর, ২০১৭: এনসিএলটি-তে যাওয়ার (১৬/০৫/১৭) ছ’মাসের মধ্যে অর্থাৎ আগামী নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বার্ন স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে
এক দিকে এনসিএলটি মূল্যায়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। অন্য দিকে, ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে সংস্থা। এ অবস্থায় সংস্থা গোটানোর চিন্তা-ভাবনার খবরে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কর্মীদের মধ্যে। তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস অনুমোদিত বার্ন স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি অসিত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘সংস্থা বিক্রিই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য।’’ তিনি বলেন, যদি দেখা যায় সংস্থার সম্পদ তার দায়ের দ্বিগুণ এবং তা সত্ত্বেও সংস্থা গোটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা হলে প্রমাণ হবে, দেউলিয়া আইনকে নিজের পথে চলতে দেওয়া কেন্দ্রের লক্ষ্য নয়। সে ক্ষেত্রে বড়সড় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড অফিসার্স ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অনুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অর্থ কমিশনের রিপোর্টে আছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ওয়াগন সংস্থা থাকা জরুরি। তাই শেষমেশ বার্ন স্ট্যান্ডার্ড গুটিয়ে নেওয়া হলে, তাতে কায়েমি স্বার্থ থাকতে পারে বলে তাঁর অভিযোগ। আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সিটুও। সংস্থায় তার সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘আমরাও বার্ন স্ট্যান্ডার্ড না-গোটাতে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছি। পুনরুজ্জীবনের কথা বলে রেল সংস্থা অধিগ্রহণ করেছিল। তার বদলে গুটিয়ে নেওয়া হলে, আন্দোলনে নামব।’’