কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য ‘অচ্ছে দিন’ এক রকম এসেই গিয়েছে। শুধু তাঁদের ক্ষেত্রে নয়, গোটা অর্থনীতির কাছেই এই বেতন বৃদ্ধির প্রভাব বেশ বড়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে নেওয়া এবং বর্ষার আগমনে বাজার উল্লসিত। ব্রেক্সিটের ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে সূচক এরই মধ্যে উঠে এসেছে বেশ ভাল জায়গায়।
তবে এক শ্রেণির জন্য এই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অন্যদের কাছে অভিশাপ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এঁদের ‘মন কী বাত’ শুনলে মনে হবে এঁরা বেশ আতঙ্কিত। বস্তুত, কেন্দ্রীয় কর্মীদের এতটা বেতন বাড়ায় টাকার জোগান বাড়বে তাঁদের হাতে। ফলে চাহিদা বাড়বে বহু ভোগ্যপণ্যের। কাজেই অর্থনীতির নিয়ম মেনে দাম বাড়বে সেগুলির। যাঁদের বেতন বাড়ল না, তাঁদেরও কিন্তু পণ্য কিনতে হবে একই বাজার থেকে। অর্থাৎ চড়া বাজারে কমতে পারে এঁদের জীবনযাত্রার মান। কেন্দ্রীয় কর্মীদের বেতন বৃদ্ধিতে চাপ আসতে শুরু করেছে রাজ্য সরকারগুলির উপরও। অনেক রাজ্যেরই এই পথে হাঁটার সামর্থ্য নেই। সুতরাং বৈষম্য বাড়বে। সামাজিক দিক থেকেও এর একটি প্রতিকূল প্রভাব থাকতে পারে।
এই বেতন বৃদ্ধির জেরে দক্ষ কর্মীরা অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে উৎসাহিত হবেন। ফলে বাড়তে পারে কাজের উৎকর্ষ। বেতন বৃদ্ধির চাপ আসবে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির উপরেও। ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি অবশ্য এই বেতন বৃদ্ধিতে খুশি। কারণ মানুষের হাতে বেশি টাকা এলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এটি শিল্পের জন্য ভাল বলেই মনে করা হচ্ছে। যে-কারণে শেয়ার বাজারও খুশি। যদিও চাপ বাড়বে কেন্দ্রীয় কোষাগারের উপর। জেটলির অবশ্য মন্তব্য, দেশ উন্নয়নের পথে এগোলে সরকারের আয় যে-পরিমাণে বাড়বে, তাতে সেই চাপ নিতে সরকারের অসুবিধা হবে না। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল বেতন বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং তার প্রভাব।
অন্য দিকে, দেরিতে হলেও অবশেষে বর্ষা পৌঁছে গিয়েছে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে। অতি বর্ষণেরও খবর আসছে কোনও কোনও অঞ্চল থেকে। স্বাভাবিক বা তার চেয়ে বেশি বর্ষা হলে তা দেশের জন্য অত্যন্ত ভাল খবর। এতে কৃষিপণ্যের জোগান বাড়বে। কমবে খাদ্যপণ্যের দাম। চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। শিল্পপণ্যের চাহিদা বাড়বে গ্রামাঞ্চলে। বর্ষা আসায় যে-সব শিল্প বিশেষ উৎসাহিত, সেগুলির মধ্যে আছে মেয়াদি ভোগ্যপণ্য বা এফএমসিজি, রাসায়নিক সার, স্কুটার, বাইক, গাড়ি, ট্রাক্টর, কৃষি-যন্ত্রপাতি, গৃহনির্মাণ ইত্যাদি। এই সব শিল্পের অন্তর্গত অনেক শেয়ারের দাম এরই মধ্যে বেশ খানিকটা বেড়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলে চাহিদা বাড়ে সোনারও। অর্থাৎ ভাল বর্ষার প্রভাব কিন্তু বেশ সুদূরপ্রসারী। সব মিলিয়ে অচ্ছে দিন-এর জন্য অপেক্ষা করছেন দেশবাসীর এক বড় অংশ তথা শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারী এক বিশাল জনতা।
বেতন বৃদ্ধি এবং বর্ষার খবরে ব্রেক্সিট নিয়ে ভারতীয়রা যেন এখন একটু কম ভাবছেন। তবে ব্যাপারটি কিন্তু একদম উপেক্ষা করার নয়। সত্যি সত্যিই যখন ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হবে, তখনই টের পাওয়া যাবে এর আসল প্রভাব। ভারতের বাণিজ্যের অনেকটাই যেহেতু ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে হয়, সেই কারণে এখন থেকেই তৈরি হতে হবে এর ধাক্কা সামলানোর জন্য।
সব মিলিয়ে শেয়ার বাজার এখন বেশ চাঙ্গা। সেনসেক্স ফের পেরিয়েছে ২৭ হাজারের সীমা। হলমার্ক সোনা ৩০,৫০০ টাকার আশপাশে। বাজার তেজী হওয়ায় ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। বর্ষা জাঁকিয়ে নামায় বাজারের স্যাঁতসেঁতে ভাবও কেটে গিয়েছে। এখান থেকে সূচককে আরও চাগিয়ে তুলতে পারে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভাল কোম্পানি ফলাফল।