মকুবে নারাজ মুছতে দরাজ

লাফিয়ে বাড়ছে অনাদায়ী ঋণ, সংসদে কবুল কেন্দ্রের

অর্থ মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, বছরে এখন ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ মুছে ফেলতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে। যার মানে, তা শোধ পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে ব্যাঙ্ক। অথচ মনমোহন জমানার শেষ ভাগেও এই অঙ্ক ছিল এর তিন ভাগের এক ভাগ!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

চৌকিদার: নেহাতই প্রতীকী। কিন্তু গরিব চাষি আর ঋণ খেলাপি ধনকুবেরের প্রতি ব্যাঙ্কের নজরের ব্যবধান যেন স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতের মুদ্রাতেই। ফাইল চিত্র

দেশ জুড়ে বিক্ষোভ, আন্দোলন যতই হোক, কৃষি ঋণ মকুব নিয়ে এখনও নিজেদের কড়া অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি গোড়াতেই স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও রাজ্য তেমন সিদ্ধান্ত নিলে, তার দায় বইতে হবে তাদেরই। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, স্বেচ্ছায় ঋণ খেলাপ নিয়ে সেই একই সরকারের অবস্থান যেন অনেক বেশি নরম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির খাতা থেকে মুছতে হওয়া ঋণের অঙ্ক যে লাফিয়ে বাড়ছে, তা সংসদে কবুল করেছে কেন্দ্র। তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে সে বিষয়ে নজরদারি এত ঢিলেঢালা কেন? গরিব চাষির ঋণ মকুবে নারাজ কেন্দ্র স্বেচ্ছা খেলাপির ধার মোছার বেলায় কেন এত দরাজ?

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, বছরে এখন ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ মুছে ফেলতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে। যার মানে, তা শোধ পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে ব্যাঙ্ক। অথচ মনমোহন জমানার শেষ ভাগেও এই অঙ্ক ছিল এর তিন ভাগের এক ভাগ!

অর্থনীতির পাঠ বলে, কৃষি ঋণ মকুব কাজের কথা নয়। কারণ, তাতে ধার শোধ না দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ নিয়ে তাই সতর্ক করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। কিন্তু তা মেনেও বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে স্বেচ্ছা খেলাপিদের ধার মোছার বিষয়ে কেন্দ্র এত দরাজ কেন? একই ধরনের সমস্যা মাথাচাড়া দেবে সেখানেও।

Advertisement

জেটলির পাল্টা যুক্তি, ‘‘আদায়ের খাতা থেকে ওই ঋণগুলি সরিয়ে দেওয়া বা ‘রাইট অফ’ করা মানে তা মকুব করে দেওয়া নয়। খেলাপিরা এখনও ওই সব ঋণ শোধ করতে একই ভাবে দায়বদ্ধ। ব্যাঙ্কের খাতায় ঋণ সম্পদের তালিকায় থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা অনুৎপাদক সম্পদের তালিকায় চলে যায়। এতে ঋণ খেলাপির কোনও লাভ হয় না।’’

কৃষিতে কড়া

• কৃষি ঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, রাজস্থান সমেত বেশ কিছু রাজ্য। সব মিলিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি রাখার খরচ অন্তত ৮৪ হাজার কোটি টাকা

• জেটলি গোড়াতেই জানিয়েছেন, কেন্দ্র কৃষি ঋণ মকুব করবে না। রাজ্যগুলি তা করতে পারে। কিন্তু তার আর্থিক দায় বইতে হবে তাদেরই মুছতে খাড়া

• যে ধার আদায়ের আর প্রায় কোনও সম্ভাবনা নেই, ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা থেকে তা মুছে ফেলাকেই বলে ‘লোন রাইট অফ’। গত কয়েক বছরে ওই অঙ্ক বেড়েছে হুড়মুড়িয়ে

• ২০১২-’১৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মুছে ফেলা ঋণের অঙ্ক ছিল ২৭,৩২১ কোটি টাকা। ২০১৬-’১৭ সালে তা দাড়িয়েছে ৮১,৬৮৩ কোটি টাকায়!

• ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে (গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ওই ধরনের ঋণের পরিমাণ ২৮,৭৮১ কোটি

অঢেল বাকি

• ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক প্রায় ৮ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন সূত্রের হিসেবে এখন তা ছাড়িয়েছে ১০ লক্ষ কোটি

• শুধু ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকেই পাওনা ১ লক্ষ ১১ হাজার কোটি (১ ডিসেম্বর পর্যন্ত)

প্রশ্ন যেখানে

• ঋণ মকুব আর শোধ না হওয়ায় কোনও ধার খাতা থেকে মুছে ফেলা এক নয়। কিন্তু বিরোধীদের জিজ্ঞাসা, সরকার যেখানে কৃষি ঋণ মকুব নিয়ে এত কড়া, সেখানে ধার মোছা নিয়ে নজরদারি এত শিথিল কেন?

• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সিংহভাগ অংশীদারি তো কেন্দ্রের। তা হলে ধার মোছা নিয়ে অবস্থান এত নরম কেন?

এই যুক্তি মানতে নারাজ তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘সংসদে প্রশ্ন উঠেছিল, কৃষি ঋণ কতখানি মকুব হয়েছে? সরকার সে উত্তর না দিয়ে কত ঋণ বিলি হয়েছে, তার উত্তর দিয়েছে। মোদী সরকার এক দিকে নীরব মোদী-বিজয় মাল্যের মতো খেলাপিদের ঋণ মকুব করে দিচ্ছে। শুধু স্বেচ্ছা খেলাপিদের কাছেই ব্যাঙ্কগুলির মোট পাওনা এখন প্রায় ১.১১ লক্ষ কোটি। সেখানে কৃষি ঋণ মকুব করছে না।’’ অর্থাৎ, খেলাপ নিয়ে ‘দরাজ’ কেন্দ্রের মকুব নিয়ে কড়া অবস্থানে ক্ষুব্ধ তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন