শনিবার মুম্বইয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদেশি লগ্নি টানার ব্যাপারে ভারতের নীতিই সবচেয়ে খোলামেলা দাবি করে বিনিয়োগের ডাক দিলেন বিদেশি শিল্পপতিদের কাছে। আশ্বাস দিলেন, পুরনো লগ্নির উপরে বকেয়া কর আদায় করবে না তাঁর সরকার। ছবিতে ওরলির ন্যাশনাল স্পোর্টস অডিটোরিয়ামের বাইরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা কলাকুশলীরা।
হাত গুটিয়ে অপেক্ষা করার দরকার নেই। জিরিয়ে নেওয়ারও ফুরসত নেই। ভারতে লগ্নির সুযোগ বিপুল। তা কাজে লাগান এখনই।
দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের সামনে এই বার্তা দিয়েই শনিবার মুম্বইয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া উইক’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা নয়, ভারত যে এই সম্মেলনের প্রতীক সিংহের মতো বিক্রমেই দ্রুত লগ্নি টানতে চায়, তা মেক ইন ইন্ডিয়া সপ্তাহ পালনের এই মঞ্চে শিল্পমহলের এক ঝাঁক তারকাদের সামনে জানিয়ে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গেই সম্মেলনে মোদী পাকা কথা দিলেন, পুরনো বকেয়া কর আদায় করবে না তাঁর সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আগেই বলেছি। আমরা পুরনো লগ্নির উপর কোনও বকেয়া কর বসাব না। আজ আমি সেই অঙ্গীকার নতুন করে করছি। কর ব্যবস্থাকে পুরোপুরি স্বচ্ছ, স্থিতিশীল ও সরল করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ নোকিয়ার উপর বকেয়া কর প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক ভারতের সঙ্গে ফিনল্যান্ডের সম্পর্কে যে-ছায়া ফেলেছে, মোদীর আশ্বাসে তা কেটে যাওয়ার ব্যাপারে আশার আলোও দেখা গিয়েছে এ দিন। মেক ইন ইন্ডিয়া সপ্তাহ পালনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমন্ত্রিত ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জুহা সিপিলা-র সঙ্গে বৈঠকে সে দেশের লগ্নিকারীদের ভারতের প্রতি আস্থা ফেরাতে বিষয়টি আপসে মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন মোদী। যাতে সম্মত হয়েছেন সিপিলা-ও। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে উদ্বোধনে ছিলেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন। এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম দেশে লগ্নি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয় সে দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলও। হাজির ছিলেন পোল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রীও।
বিশেষ করে বিদেশি লগ্নিকারীদের নজর কাড়তে মোদী বলেন, ‘‘বিদেশি বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে আজ সম্ভবত ভারতের নীতিই সবচেয়ে খোলামেলা। বেশির ভাগ শিল্প সরাসরি অনুমোদনের তালিকায়। আমারা কেন্দ্রে আসার পর থেকে বিদেশি লগ্নি বেড়ে গিয়েছে ৪৮%।’’
মেক ইন ইন্ডিয়া সপ্তাহের ম্যাসকট। শনিবার মুম্বইয়ে।ছবি: রয়টার্স।
দেশি-বিদেশি সব ধরনের লগ্নি বাড়াতেই সহজে ব্যবসা করার জন্য ভারতকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার প্রতিশ্রুতিও নতুন করে দেন মোদী। আর, সেই সূত্রে এ দিনই কার্যত মেক ইন ইন্ডিয়ার সংজ্ঞা স্পষ্ট করেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘আমরা ভারতকে উৎপাদন, উদ্ভাবন এবং গবেষণা-উন্নয়নে বিশ্বে প্রথম সারিতে নিয়ে আসতে চাই। এ দেশের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরাই মেক ইন ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য।’’ সাফল্যের আর যে-সব খতিয়ান মোদী দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে:
• ইংরেজি আদ্যক্ষর ‘ডি’-র তিনটি শব্দ ভারতকে সুবিধাজনক জায়গায় রেখেছে। ডেমোক্র্যাসি বা গণতন্ত্র, ডেমোগ্রাফি বা জনসম্পদ এবং ডিমান্ড বা দেশের মধ্যে বিপুল চাহিদা। আমি আর একটি যোগ করছি: ডিরেগুলেশন বা লাইসেন্স রাজ ও নিয়ন্ত্রণের জমানায় ইতি টানা।
• যখন মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি শুরু করি, কল-কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি ছিল ১.৭%। চলতি ত্রৈমাসিকে তা ১২.৬% ছুঁতে পারে।
• জাতীয় আয়ে শিল্পের অবদান শীঘ্রই ২৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
• বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধিতে ২০১৪-’১৫ সালে ভারতের অবদান ১২.৫%।
মোদীর আহ্বান, ‘‘ভারতকে নিজের করে নিয়ে এ দেশকেই করুন আপনাদের কর্মস্থল। এই শতকে যদি সাফল্যের ছাপ রেখে যেতে চান, তা হলে যাঁরা সভায় বসে আছেন, বা যাঁরা এখানে নেই— সবাইকে ভারতের অর্থনীতির নতুন প্রাণ ফিরে পাওয়ার এই লগ্নে সামিল হতে হবে লগ্নির ঝাঁপি নিয়ে।’’