গৃহস্থের হিসেবের খাতায় তেল ও গ্যাসের দামের জোড়া ধাক্কা।
অক্টোবর পড়তেই পুজোর গন্ধ। বছরভর হিসেব-নিকেশের চোখরাঙানি এড়িয়ে নতুন জামাকাপড়, খাওয়াদাওয়া, বেড়ানোর শাসনে অন্য রকম ক’টা দিন কাটানোর ইচ্ছে আরও প্রবল হওয়া। কিন্তু কার্যত সেই মজা মাটি করছে গৃহস্থের হিসেবের খাতায় তেল ও গ্যাসের দামের জোড়া ধাক্কা।
শুধু সেপ্টেম্বরেই কলকাতায় লিটারে পেট্রল বেড়েছে ৩.৯৩ টাকা। ডিজেল ৩.৬৭ টাকা। সোমবার যথাক্রমে ৮৫.৫৩ ও ৭৬.৯৪ টাকা ছুঁয়েছে সেগুলির দর। আজ মঙ্গলবার কলকাতায় ১২ পয়সা বেড়ে পেট্রলের দাম হয়েছে ৮৫.৬৫ টাকা। ডিজেল ১৬ পয়সা বেড়ে ৭৭.১০ টাকা। দু’টি পেট্রোপণ্যের দামই ছুঁয়েছে সর্বকালীন রেকর্ড। পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়ায় আনাজ, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জামাকাপড়, গাড়ির ভাড়া-সহ সব কিছুতেই চেপে বসছে বাড়তি গোনার ভয়। তার উপর হেঁসেলে সোজাসুজি ধাক্কা দিয়ে ১৪.২ কেজির রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়ে ছুঁয়েছে ৯০৭ টাকা (ভর্তুকিহীন)। ভর্তুকির সিলিন্ডার কিনতে হলেও গোড়ায় পকেট থেকে ওই টাকাই বার করতে হবে গ্রাহককে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা আইওসির দাবি, ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডারের দাম একই আছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ব্যাখ্যা, জিএসটি ধরে আসলে এই সিলিন্ডারের দাম বেড়ে হচ্ছে ৫০৫.৬৪ টাকা। যেখানে সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৫০২.৭৯ টাকা।
সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, নিম্নবিত্তদের জন্য যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস পাওয়ার সুবিধা এনেছে কেন্দ্র, তাতে ক’জন গোড়ায় সেই টাকা দিতে পারবেন? ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিয়ম করে বিঁধছে কংগ্রেস। সোমবারও তাদের নেতা পবন খেরা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ‘অচ্ছে দিনে’র মরীচিকা আমজনতার স্বপ্নকে চূর্ণ করেছে। যে হারে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ছে, তা আঘাত করছে তাঁদের বাজেটে। বিজেপি আসলে কর চাপিয়ে মানুষের পকেট কাটছে।’’ ভোটের প্রসঙ্গ টেনে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আর ক’মাস বাকি। মানুষ দিন গুণছেন। উপযুক্ত জবাব দেবেন।’’
সরকারও যে অস্বস্তিতে, কার্যত তা স্পষ্ট করে বহু দিন ধরেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণ আসলে বিশ্ব বাজারে চড়া অশোধিত তেলের দর। দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভাল।
মেট্রো শহরগুলির মধ্যে মুম্বইয়ে পেট্রল এ দিন প্রথম ৯১ টাকা ছাড়িয়েছে। কলকাতায় আইওসি-র প্রিমিয়াম (দামি) পেট্রলের দর লিটারে দাঁড়িয়েছে ৮৯.০৬ টাকায়।
এ দিন উদ্বেগ বাড়িয়ে ডলারে টাকার দাম আরও কমেছে। ৪৩ পয়সা বেড়ে এক ডলার ছুঁয়েছে ৭২.৯১ টাকা। ফলে বিদেশ থেকে তেল কেনার খরচ আরও বাড়ার আশঙ্কা। যার জেরে আরও চড়া হতে পারে পেট্রল-ডিজেলের দর।
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আয়কর ও কর্পোরেট কর আদায় আশানুরূপ না হওয়ায় তেলে উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে এখন দাম ছাঁটার সম্ভাবনা কম। এই অবস্থায় ডিলারদের কমিশনের যে অংশ তেল সংস্থাগুলি ফিরিয়ে নেয়, আপাতত ক্রেতাকে সেই অংশটুকু ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের একাংশ। তা লিটার পিছু পেট্রলে ৪৭ পয়সা ও ডিজেলে ৩৯ পয়সা। তাঁরা বলছেন, আপাতত অন্তত এটুকু স্বস্তি না হয় দেওয়া হল ক্রেতাদের।